কোরবানি হল ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

সিটিভি নিউজ।। মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার:লেখক ও কলামিস্ট ===
সময়ের চাকা ঘুরে প্রতিটি বছর মুসলমানদের জীবনে পবিত্র ঈদুল আজহা আসে। আর সামর্থ্যবান মুসলমানরা গরু-ছাগল, উট, দুম্বা, মহিষ ইত্যাদি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে।

কোরবানি মুসলমানদের ত্যাগের শিক্ষা দেয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা তাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিলেন।

নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সে পরীক্ষায় পাস করেন।

সৃষ্টি করেন আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ করার এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। কিন্তু আল্লাহতায়ালা হজরত ইসমাইলের পরিবর্তে হজরত ইবরাহিমকে দিয়ে পুত্রের পরিবর্তে প্রিয় বস্তুর প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি করান। তখন থেকে মুসলমানরা এ ঘটনাকে স্মরণ করে ঈদুল আজহার দিন পশু কোরবানি করে থাকেন।

কোরবানির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু মনে করে প্রতীকী অর্থে পশু কোরবানি করা। এ ধর্মীয় উৎসব তাই ত্যাগের মহিমা বিজড়িত।

আল্লাহর জন্য, তার সৃষ্টির জন্য, মানবতার জন্য ত্যাগেও যে আনন্দ আছে, তা ব্যতিক্রমী ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ উৎসবে প্রতিফলিত হয়। সে জন্য কোরবানির পশুর সব মাংস কোরবানিকারীকে খাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।

এর এক-তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিনকে, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজনকে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কোরবানির উদ্দেশ্য পশু জবাই করে তার মাংস রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করা নয়।

এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহর পথে, তার সৃষ্টির কল্যাণের পথে সর্বোচ্চ ত্যাগের পরীক্ষায় প্রতীকী অর্থে পশু কোরবানি করার মধ্য দিয়ে ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ পাক তো আর কোরবানির মাংস চান না। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চান যে, তার বান্দারা তার জন্য, মানুষের জন্য, মানবতার জন্য ত্যাগের পরীক্ষায় পাস করতে পারে কি না।

সঠিকভাবে কোরবানির জন্য বেশি দাম দিয়ে বড় গরু কিনে শোডাউন করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ কাজ যারা করেন, তারা কোরবানির অন্তর্নিহিত প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে না পেরেই তা করে থাকেন। ‘আল্লাহকে ভালোবেসে তার রাস্তায় ত্যাগের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমি কোরবানি করছি’- এমন উপলব্ধি হৃদয়ে স্থান না পেলে সে কোরবানি শুধু গরু জবাই করে মাংস খাওয়ার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের কোরবানি তখনই কবুল হবে, যখন আমরা যৌথভাবে বনের ও মনের পশুকে একত্রে জবাই করতে পারব। আত্মপ্রচার, গর্ব, অহংকার, নিজেকে বড় করে দেখানো, বড় গরু কিনে শোডাউন করে নিজের বড়লোকি জাহির করার বাসনা মনের মধ্যে নিয়ে একাধিক পশু জবাই করলেও কোরবানি কবুল হবে না।

মনের মধ্যে অন্যের ক্ষতি করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশবিকতাকে উজ্জীবিত করে বনের পশু কোরবানি করলে কোরবানি হবে না। বনের পশুর সঙ্গে মনের মধ্যে অন্যকে খুন, ধর্ষণ করার পাশবিকতা থাকলে তাকেও কোরবানির পশুর সঙ্গে জবাই করে দিতে হবে।

এদের অনেকেই নিজেকে বুদ্ধিমান এবং মহান আল্লাহপাককে বোকা মনে করছেন। আল্লাহপাক যে ন্যায়বিচারক, তিনি যে অন্তর্যামী (সামিউম বাছির), তাকে যে ফাঁকি দেয়া যাবে না, সে কথাটি জেনেও এরা ধর্মীয় নৈতিকতাকে বিসর্জন দিচ্ছেন।

কাজেই মানুষ এ দেশে ধর্ম পালন করছে ঠিকই; কিন্তু সে ধর্ম তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারছে না। তাদের মধ্যে সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে পারছে না। এ জন্য মানুষ বুঝতে পারছে না, মানুষকে ভালো না বেসে, তাদের সম্পদ লুট ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে শত শত কোরবানি দিলেও সে কোরবানি কবুল হবে না।

অবশ্য এ ব্যাখ্যা ঢালাওভাবে যে সবার জন্য প্রযোজ্য, এমন দাবি করা যায় না। কারণ, এখনও সংখ্যায় কম হলেও সমাজে কিছু নীতি-নৈতিকতা পালনকারী মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ ভালো মানুষ আছেন।

ধর্ম পালনকারীদের মধ্যে যদি নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত না হয়; যদি মানবিকতা, সহমর্মিতা সৃষ্টি না হয়, যদি অপরকে বিপদে-আপদে সহায়তা করার মাসসিকতা সৃষ্টি না হয়, তাহলে তেমন ধর্ম পালন তো পণ্ডশ্রম ছাড়া আর কিছু নয়।

তাই কোরবানির শিক্ষা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ নির্মাণ করতে হলে আমাদের সবাইকে পশু কোরবানির পাশাপাশি মনের পশুত্বও কোরবানি দিতে হবে। মন থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসা দূর করতে হবে। তা হলেই ঈদুল আজহা পালন সার্থক হবে এবং আল্লাহর রাস্তায় পশু কোরবানিও সার্থক হবে।

লেখক:চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ওগনমাধ্যমকর্মী। সংবাদ প্রকাশঃ ১৫-৬-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন=

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like)
আরো পড়ুন