
সিটিভি নিউজ।। গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির (লেখক ও কলামিস্ট)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, (তরজমা) রমজান মাস, তাতে কোরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত, সৎপথ প্রাপ্তির স্পষ্ট নিদর্শন ও হক্ক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। কাজেই তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোজা রাখে এবং কেউ পীড়িত হলে কিংবা সফরে থাকলে, তাকে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নেয়। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সহজসাধ্যতা চান, তোমাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করতে চান না এবং এই জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা বর্ণনা কর যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেছেন। আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’-সূরা বাকারা: ১৮৫।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে যে কল্যাণকর বিধান দান করেছেন এবং তা পালন করার তাওফীক দিয়েছেন এজন্য আল্লাহর শোকর গোজারী করা এবং তাঁর মহত্ব ও বড়ত্ব বর্ণনা করাই হল ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য।
আসমানী হিদায়াতের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা এবং এর সুফল ও কল্যাণ প্রসূতা সম্পর্কে মু’মিনের মন আশ্বস্ত ও প্রশান্ত থাকে। এই প্রশান্তির মূলে হল তাঁর ঈমান। মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি বিশ্বাস ও সু-ধারণা এবং তাঁর অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে, সৃষ্টির প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও সদাশয়তা সম্পর্কে অটুট প্রত্যয় মুমিনকে তাঁর বিধান ও নির্দেশনা সম্পর্কেও প্রত্যয় দান করে। জীবন ও জগতের অভিজ্ঞতা তাঁর সে প্রত্যয়ে প্রশান্তির পরশ বুলায়মাত্র এবং এটা শুধু আসমানী নির্দেশনার অনিবার্যতা ও অপরিহার্যতা এবং এর যথার্থতা ও কল্যাণ প্রসূতাকেই তার সামনে পরিস্ফুট করে তোলে। তবে একথা বলাই বাহুল্য যে, এটা তাঁর বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের মূল ভিত্তি নয়, মূল ভিত্তি হল তাঁর ঈমান। আর এজন্যই সে মু’মিন ও বিশ্বাসী।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এই কল্যাণকর বিধান ও নির্দেশনা লাভের ওপর এবং সে বিধান পালনের তাওফিক প্রাপ্ত হওয়ার ওপর আল্লাহ তায়ালার শোকর গোজারী করা অপরিহার্য।
রোজার বিধান যেমন আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন, তেমনি এর ওপর শোকরিয়া আদায়ের শিক্ষাও আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। উপরোক্ত আয়াতের শেষ অংশে এ বিষয়টিই উল্লেখিত হয়েছে। বান্দার সমগ্র সত্ত্বায় আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মহত্বের সমর্পিত বহিঃপ্রকাশ বান্দাকে পূর্ণ শোকরগোজার বান্দায় পরিণত করে।
ঈদুল ফিতর উদযাপনের পুরো বিষয়টিই ‘আল্লাহু আকবার’-এর চেতনা ও মর্মবাণীকে প্রকাশিত করে। এজন্য মৌখিকভাবেও ‘আল্লাহু আকবার’ বলা এ সময়ের একটি বিশেষ যিকির। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে ইসলামের সময়ে সময়ে অদ্যাবধি ঈদের রাতে ও ঈদের সকালে তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদগাহে যাওয়ার সময়ও নিম্ন স্বরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর এবং ঈদের খুতবার তাকবীরগুলো ঈদুল ফিতরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
এই বিধানগুলো পালনের সঙ্গে সঙ্গে জগতের সকল মিথ্যা বড়ত্বের দাবিদারকে পরিত্যাগ করে লা শরীক আল্লাহর বড়ত্বকে স্বীকার করে নেওয়া মু’মিনের ঈমানের দাবি। আসমানী বিধানের সমান্তরালে যেসব মত ও ব্যবস্থা মানুষ তৈরি করে নিয়েছে, মিথ্যা প্রচার-প্রচারণার কারণে যে গলিত সংস্কৃতিকে মানুষ নতশিরে কুর্ণিশ করেছে আর অর্থ ও সম্পদ এবং চাহিদা ও প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে-এই সকল মিথ্যা ‘ইলাহ’র প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়ে এক লা শরীক আল্লাহর বড়ত্বে ও কর্তৃত্বে প্রত্যাবর্তন আর চিন্তা ও চেতনায় এবং কর্মে ও সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে সমর্পণই হল এ দিনের মর্মবাণী।
তাই আসুন, এই দিনে আমরা সকল মুসলিম ‘আল্লাহু আকবারে’র প্রেরণায় উজ্জীবিত হই এবং সিয়াম সাধনা শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পুরষ্কার পাওয়ার আনন্দ প্রকাশের দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করি। আল্লাহর মুহাববত ও আল্লাহ-নির্ভরতাই হোক আমাদের পরিচয়।
“জীবনে যাদের হররোজ রোজা”তাদেরকেও যেন না ভুলি।
ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগের সময় আমরা যেন আমাদের পার্শ্ববর্তী গরীব মানুষটির কথা না ভুলি । তার সন্তানের মুখেও যেন একটুখানি আনন্দের হাসি ফুটে উঠতে পারে, খুরমা-ফিরনীর একটুখানি আয়োজন যেন তার পর্ণকুটিরেও হয়-এটা যেন আমরা ভুলে না যাই। সদকায়ে ফিতর যথাযথ ভাবে আদায় করি।ঈদ মোবারক।।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, লেখক, সংগঠক, উপস্থাপক ও শূরা সদস্য, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সংবাদ প্রকাশঃ ৩১-০৩-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=