মুনাফেকের আলামত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা

সিটিভি নিউজ।।     গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।=========== ওয়াদা পূর্ণ করা হলো মুমিনের কাজ। আর শরিয়তে নিয়ম রয়েছে কেউ ওয়াদা করার পর যদি ওয়াদা রক্ষা করা সম্ভবপর না হয় তাহলে যে ব্যক্তির নিকট ওয়াদা করা হয়েছে তার নিকট যে কারণে ওয়াদা রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না তা জানিয়ে দিতে হবে। যেমন একজন ব্যক্তি অপর একব্যক্তিকে বলল, অমুক তারিখে আমি তোমাকে এক হাজার টাকা প্রদান করব। দেখা গেল ওয়াদাকারী ব্যক্তির নিকট নির্ধারিত তারিখের দিন কোনো টাকা/পয়সা নেই। এমতাবস্থায় যার কাছে ওয়াদা করেছিল তার নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে বলে দেবে যে, ‘ভাই আজ তোমাকে এক হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল কিন্তু আমার হাতে টাকার কোনো ব্যবস্থা নেই যে, তোমাকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করব।’ তবে যখনি কৃত ওয়াদা পূরণ করার ব্যবস্থা হবে তখন অবশ্যই তা পূর্ণ করে দেবে।
প্রস্তাব পাঠানো একটি ওয়াদা:
যেমন কোনো ব্যক্তি কাউকে ডেকে পাঠালো এবং আত্মীয়তা করার জন্য প্রস্তাব পেশ করল। এটা একটা ওয়াদা। যেহেতু এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। কাজেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে হ্যাঁ এভাবে প্রস্তাবনার পর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ভিন্ন বিষয়। যেমন উভয়পক্ষের মাঝে তেমন কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবহার এবং শিষ্টাচারগত ব্যবধান কিংবা এমন কোনো পরিস্থিতি সামনে এসে গেল যা পূর্বে জানা যায়নি। এমতাবস্থায় অপর পক্ষকে জানিয়ে দেবে যে, আমি তাকে বিবাহ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এই অসুবিধার কারণে আমি আমার ওয়াদা রক্ষা করতে পারছি না। তবে মনে রাখতে হবে- যখন এমন অসুবিধা বা আপত্তি না হবে তখন ওয়াদা রক্ষা করা তার ওপর ওয়াজিব। ওয়াদা পূরণ না করলে হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ওয়াদা খেলাফ করার প্রচলিত নানা সুরত:
মুনাফিকের নিদর্শন হিসেবে হাদিস শরিফে এসেছে যে, তারা ওয়াদা খেলাফ করে। ওয়াদা ভঙ্গ করার অপরাধ থেকে প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির বেঁচে থাকা উচিত। ওয়াদা খেলাফের এমন সব পদ্ধতিসমূহ রয়েছে যেগুলোকে আমরা ওয়াদাই মনে করি না। যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় ওয়াদা খেলাফ করা কী ভালো কাজ? জবাবে সে বলবে এটা অত্যন্ত জঘন্য খারাপ কাজ। গুনাহের কাজ। অথচ বাস্তব জিন্দেগিতে এমন বহু কাজ আমাদের থেকে হয়ে থাকে যা ওয়াদা খেলাফের মাঝে অন্তর্ভুক্ত। অথচ এটাকে ওয়াদা খেলাফের মধ্যে গণ্যই করা হয় না।
দেশীয় আইন মান্য করা ওয়াজিব:
উদাহরণ স্বরূপ এমন এক বিষয় পেশ করছি, যে ব্যাপারে সাধারণ মানুষ একেবারে বেখবর এবং এটাকে তারা দীন ধর্মই মনে করে না। এক বুজুর্গ ব্যক্তি বলেছে, ওয়াদা শুধু জবান দ্বারাই হয় না। বরং কাজের মাধ্যমেও ওয়াদা প্রকাশ পায়। যেমন একজন ব্যক্তি কোনো এক দেশের বাসিন্দা। সুতরাং সে ব্যক্তি কার্যত এই দেশের সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ যে, আমি রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলবো। এখন ওই ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলা জরুরি। হ্যাঁ যতক্ষণ পর্যন্ত ওই দেশের সংবিধান তাকে কোনো গুনাহের কাজ করতে বাধ্য না করে। কেননা কোনো আইন যদি গুনাহের কাজ করার জন্য বাধ্য করায় তা হলে ওই আইন মান্য করা জরুরি নয়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসালামের হাদিস প্রযোজ্য, ‘সৃষ্টিকর্তার নাফরমানি করে কোনো মাখলুকের আনুগত্য নেই।
‘হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং ফেরাউনের আইন:
হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের দেশে অবস্থান করছিলেন। তিনি নবী হওয়ার পূর্বে এক কিবতিকে থাপ্পর দিলে সে মরে যায়। এ ঘটনা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। কোরআনে কারীমেও মুসা আলাইহিস সালাম এই কতলের দরুন ইসতেগফার করেছেন এবং বলেছেন- আমার ওপর এটি একটি গুনাহ। আমি একজনকে হত্যা করে ফেলেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এটাকে গুনাহ এবং হত্যাকান্ড উল্লেখপূর্বক আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রর্থনা করেছেন। যদিও হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ইচ্ছাপূর্বক তা করেননি। বরং একজন অসহায়কে সহযোগিতা করতে গিয়ে এমনটা করে ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি শুধু থাপ্পর মারার দ্বারাই ওই লোকটি মারা যাবে। এ জন্য এটা হাকীকতে গুনাহই ছিল না। মুসা আলাইহিস সালাম এটাকেও গুনাহের সুরত বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন এসে গেল ওই কিবতি যাকে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম হত্যা করেছিলেন- সেতো কাফের ছিল এবং হারবি ছিল। তাকে জেনে বুঝে হত্যা করলেও তো কোনো গুনাহ ছিল না। এক মহান বুযুর্গ বলেন যে, এটা গুনাহ হয়েছে। কেননা হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম যেই শহরে অবস্থান করছিলেন সেই শহরের সঙ্গে তার ওয়াদা ছিল, নিজ দেশের সকল আইন মেনে চলার। এই আইনে কাউকে হত্যা করা বৈধ ছিল না। এজন্য হযরত মুসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক কিবতিকে হত্যা করা ওই আইনের বহির্ভূত কাজ হয়েছে। কাজেই মনে রাখতে হবে প্রত্যেক ব্যক্তি যেখানেই বসবাস করুক না কেন, সেটা মুসলিম রাষ্ট্র হোক বা না হোক রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা ওয়াজিব। যদি রাষ্ট্র কর্তৃক গোনাহের কাজে বাধ্য না করায়।
ভিসা নেওয়াটা আমলি ওয়াদা:
এমনিভাবে যখন ভিসা নিয়ে ভিন্ন কোনো রাষ্ট্রে যাবে সেখানকার আইনও মেনে চলা জরুরি। চাই মুসলিম কিংবা অমুসলিম রাষ্ট্রে হোক। শর্ত হলো, সেই আইন গুনাহের কাজ বাধ্য না করাতে হবে এবং কারো ওপর জুলুমে সহায়ক না হতে হবে। এসব ব্যাপার না হলে সেখানকার আইন মেনে থাকতে হবে। কেননা সেখানকার আইন মেনে চলা এটাও ওয়াদার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাফিক আইন অমান্য করা যাবে না:
এমনিভাবে রাস্তায় ট্রাফিক আইন মেনে চলা। যেমন ডান দিকে কিংবা বাম দিকে চলা। লাল বাতি জ্বলতে থাকলে থেমে যাওয়া। সবুজ বাতি জ্বলতে থাকলে চলতে থাকা। এগুলো দেশের বা শহরের বাসিন্দা হওয়ার ফলে মেনে চলা আবশ্যক। যদি কেউ তা মেনে না চলে তা হলে রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গকারী ওয়াদা খেলাফকারী হিসেবে পরিগণিত হবে এবং গুনাহগার হবে। লোকেরা ধারণা করতে পারে যদি ট্রাফিক আইন অমান্য করি তাতে আবার কিসের গুনাহ?
এটাতো শুধু মানুষের বাহাদুরী প্রদর্শন। এটাতো আইনের মধ্যেও পড়ে না। কন্তু মনে রাখুন! এটা কয়েক কারণে গুনাহ। এক এটা ওয়াদা খেলাফের গুনাহ। দ্বিতীয়ত এই আইন এজন্য করা হয়েছে যাতে মানুষ শৃংখলাবদ্ধভাবে চলতে পারে। যদি আপনি এই আইন ভঙ্গ করেন তাহলে এর সব ধরনের ক্ষতি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের যিম্মাদারি আপনার নিজের ওপর বর্তাবে।
এগুলো সবই আল্লাহ তায়ালার দীন:
এসমস্ত বিষয় এজন্যেই আলোচনা করছি যে, লোকেরা মনে করেন এগুলোর সঙ্গে দীনের কিসের সম্পর্ক? এগুলোতো দুনিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলোর পাবন্দি করার এমন কী জরুরত? অত্যন্ত ভালো করে বুঝে নেবেন যে, যে সমস্ত জিনিস কর্মজীবনের প্রতিটি স্থরে রয়েছে, সে সমস্ত জিনিস দীনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। দীনদারি শুধু নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। সারকথা হলো যে সমস্ত আইন-কানুন গুনাহের কাজে বাধ্য করে না তা মানা জরুরি। আর যে সমস্ত কানুন গুনাহে বাধ্য করে তা মান্য করা যাবে না। এর বিপরীত করার ফলে ওয়াদা খেলাফের গুনাহ হবে।
শেষ কথা… এমন বহু কাজ রয়েছে যা ওয়াদা খেলাফ মনে করা হয়- অথচ বহু এমন কাজ রয়েছে যেগুলোকে ওয়াদার খেলাফ মনে করা হয় না। অথচ বাস্তবতা হলো, এগুলোর কারণে ওয়াদা খেলাফ হয় এবং এর কারণে গুনাহ হয়। এগুলোকে পরিহার করা জরুরি। দীন আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরের মধ্যে দাখিল রয়েছে। ওই সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম নীতি না মানাও দীনের খেলাফ।
মুনাফিকের দুটি আলোচনা করা হলো। মুনাফিকের তৃতীয় আলামত হলো আমানতের খেয়ানত করা। আমানতের অনেক গুরুত্ব এবং তাৎপর্য্য রয়েছে। তবে এমন অসংখ্য অগণিত কাজ রয়েছে যা খেয়ানতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অথচ আমরা এগুলোকে খেয়ানত মনে করি না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কল্যাণকর  আমল করার  এবং অকল্যাণকর কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক, কুমিল্লা।০১৭১৮-২২৮৪৪৬    সংবাদ প্রকাশঃ  ১৫-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ