প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় চান্দিনায় নেই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ৪ দিনে একাধিক হামলায় ঈগলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত

সিটিভি নিউজ।।    স্টাফ রিপোর্টার:=====
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চান্দিনায়(কুমিল্লা-৭) টানা ৪দিন ধরে হামলা-ভাংচুর, গুলিবর্ষণ, মারধরের ঘটনা ঘটছে। ঈগল প্রতিকের প্রার্থী মুন্তাকিম আশরাফ টিটুর নেতাকর্মীদের উপর প্রায় ৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী এমপি ডা: প্রাণ গোপাল সমর্থিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন চান্দিনা থানার পাঁচ জন এসআই ও দুই জন এএসআই।পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নৌকার সাথে সমঝোতা করো, না হয় গ্রেফতার করা হবে। পাঁচ এসআই হলেন গিয়াসউদ্দিন, রাকিব, নোমান, সঞ্জয় ও সৈকত। দুই এএসআই হচ্ছেন শাহাজাদা ও মোস্তফা কামাল।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে চান্দিনায় নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিচার দাবি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুন্তাকিম আশরাফ টিটু।
সংবাদ সম্মেলনে মুন্তাকিম আশরাফ টিটু বলেন, আমি কুমিল্লা-৭ সংসদীয় আসনে ঈগল প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। আমি আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। ডাঃ প্রাণ গোপাল চাচা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। পরে আমাদের সবার শেষ আশ্রয়স্থল, আমাদের অভিভাবক,জাতির পিতার সুযোগ্য কণ্যা দলীয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করলে আপত্তি নেই।তখন আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। এখানেও আমাকে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এমনকি নির্বাচন কমিশন থেকেও আমারটা বাতিল হয়। পরে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে আমার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে এলাকায় আসার পর থেকেই আমার নেতাকর্মীদের উপর মারধর, হুমকি শুরু করে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ডাঃ প্রাণ গোপালের নেতাকর্মীরা। কোথাও অফিস ভাংচুর, কোথাও মারধর করে প্রচারণার মাইক ভেঙোগ ফেলাসহ সব কিছুই করছে নৌকার নেতাকর্মীরা। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ বার হামলা হয়েছে আমার নেতাকর্মীদের উপর। প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী রক্তাক্ত আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা বয়স্ক নেতাকর্মীদেরও বাদ দিচ্ছেন না। যারেই পাচ্ছেন তাকেই মারধর করছেন। সারা কুমিল্লার ১০টি আসনে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে আর চান্দিনায় বিপরীত চিত্র। আমি অনেকগুলো লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এমপি ডা: প্রাণ গোপাল চাচার সন্ত্রাসী বাহিনীকে থামানোর সাহস, ক্ষমতা কারো দেখছি না। তাই দলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তে করে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি- চান্দিনায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আমি প্রচারণা থেকে দূরে থাকবো। কারণ যেখানে ইসি ও প্রশাসন তাদের থামাতে পারছে না, সেখানে আমাদের চিন্তার পথ অনেক বেড়ে গেছে।
মুনতাকিম আশরাফ টিটু আরো বলেন, পুলিশ নৌকার কর্মীদের মতো তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমি অভিযোগ দিলে কাজ করে না। এভাবে নির্বাচন হয় না। সারাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। আর এই আসনে ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে লাগাতার হামলা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মাধাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, গত সোমবার এসআই নোমান একটি সভা থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তিনি আমাকে বলেন, এলাকা থেকে সরে যা। আমি বললাম কেন? তিনি বলেন, না হয় তোকে গ্রেফতার করতে হবে। ওপরের নির্দেশ আছে। আমি বললাম কিসের নির্দেশ? তিনি আমাকে বললেন না হয় চল আমি প্রাণ গোপাল দত্তের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই।
সুবিল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইমন হোসেন সরকার অভিযোগ করেন, আমাকে ফোন দিয়েছে থানার সেকেন্ড অফিসার রাকিব। আমার ইউনিয়নের শালিকা এলাকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে আমাকে কল দিয়ে বলে আপনি বাড়ি থাকেন। আমি আসতেছি। আমি বললাম আপনি আসেন। তিনি একপর্যায়ে বলেন আপনি নিজের ভালো চাইলে নৌকার জন্য কাজ করেন।
মুন্তাকিম আশরাফ টিটু বলেন, চান্দিনায় প্রতিদিনই কোন না কোন নেতাকর্মীর উপর হামলা হচ্ছে। প্রতিদিনই রক্ত ঝরছে। কোনভাবেই থামছে না নৌকা সমর্থিত নেতাকর্মীদের রক্তের খেলা।আমি লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি, কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) মাইজখার ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকায় বিকেল পৌণে ৫ টায় এবার চান্দিনায় উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মুন্সি কুপিয়ে আহত করেছে নৌকার সমর্থকরা। এ সময় যুবলীগ নেতা খায়ের ও মহিউদ্দিনকে মারধর করে রক্তাক্ত করে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা। এ সময় একটি প্রাইভেটকার ও মাইক ভাংচুর করা হয়।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) হারং এলাকায় পৌর মেয়রের ছেলে তানিমের গাড়ি ভাংচুর করে এবং কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে ডা. প্রাণ গোপালের সন্ত্রাসী বাহিনী। হামলায় হারং এর ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুলসহ ১৫ জনের মত আহত হয়েছেন। ঈগলের প্রচারণায় যাওয়ার সময় নৌকার নেতাকর্মীরা লাঠি-দা-ছেনি নিয়ে এ হামলা করে। এ সময় গাড়ি ভাংচুর ও কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে নৌকার কর্মীরা। হামলাকারিদের মধ্যে এখানকার জসিম, সোহাগ, রাসেল, সুমন, কামালকে চিনতে পেরেছে আহত নেতাকর্মীরা।
একই দিন বরকইট এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে বাড়ি ফেরার পথে শ্রীমন্তপুর বাজারে নৌকা প্রতিকের সমর্থক মো: শাহজাহান এর নেতৃত্বে ১০/১২ জন ঈগল প্রতিকের সমর্থক মোহাম্মদ আলী ও জহিরুল ইসলামকে পিটিয়ে আহত করে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৯ টায় উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের মধ্যম তলা ও ফইরখোলা গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় আমাদের ৬ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আহতরা হলেন বরকইট ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুদ মেম্বার, ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য রায়হান, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম, যুবলীগ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, যুবলীগ সদস্য গিয়াস উদ্দিনসহ ৬ জন। এদের মধ্যে ৫ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপর একজন কোরপাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নির্বাচনী প্রচারণা শেষে যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন পথে একটি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল করে প্রায় ১৫ জন তাদের পথ রোধ করে হকিস্টিক ও পাইপ দিয়ে আমাদের মারধর করে। তাদের অনেকেরই মুখে মাস্ক পরা ছিল। হামলাকারীদের মধ্যে নেতৃত্বে দেওয়া দুজনকে আমরা চিনতে পেরেছি। তারা হলেন বরকইট ইউনিয়নের শ্রীমন্তপুরের শাহাজান ও চান্দিয়ারা এলাকার নাজমুল।
এর আগে ২১ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টায় মহিচাইল বাজারে ঈগলের নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সিএনজি চালককে মারধর করে মাইক ভাংচুর করে ডা. প্রাণ গোপালের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন মহিচাইল এলাকার মো: ইউসুফ ও মো: ইস্রাফিল। গতকাল রাতেও আমার নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডা. প্রাণ গোপাল চাচা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে উনি পাশ করবে না। তাই তিনি এখানে ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না যায়। যাতে আমার নেতাকর্মীরা প্রচারণা থেকে সরে যায়। উনার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় বলছেন- উনাকে যেভাবেই হোক সরকার পাশ করিয়ে নিবে। এসব কথাবার্তা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। আমি বিশ্বাস করি চান্দিনায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে-প্রশাসন সেইজন্য কাজ করবে। তবে আতংকের বিষয় হল –এখন পর্যন্ত চান্দিনায় এক ভাগও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসন ও জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি সব অফিসারকে চিনিও না। আর তারা প্রশাসনের লোক। তারা কেন নৌকার কাজ করবে? এসব ভিত্তিহীন।

সংবাদ প্রকাশঃ ২৬১২২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ