নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি অপহরণের পর হত্যা : মরদেহ ১২ টুকরো করে ঝিলে ফেলেন দম্পতি

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকা থেকে আলী হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা এবং মরদেহ ১২ টুকরো করে ঝিলে ফেলে দেওয়ার লোমহর্ষক ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন দুই আসামি।
মঙ্গলবার (৬ জুন) নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসাদ বেগমের আদালতে এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সানজিরা সরোয়ারের আদালতে ওই লোমহর্ষক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত দম্পতি।
এর আগে ওই ঘটনায় সোমবার (৫ জুন) সকালে অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- সুমি আক্তার ওরফে পাখি এবং তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক।
উভয়ে মিলে আলী হোসেন নামের ওই সাটার মিস্ত্রিকে কাঁচপুর থেকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ১২ টুকরো করে ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় ঝিলের পানিতে ফেলে দেন।
এদিকে, স্বামী নিখোঁজের ঘটনায় নিহত আলী হোসেনের স্ত্রী মিনু বেগম বাদী হয়ে গত ১৯ মে সোনারগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর আগে গত ৪ মে সন্ধ্যায় কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হন আলী হোসেন।
ওই জিডির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে ঘটনার সত্যতা পেলে গত (৫ জুন) সকালে সোনারগাঁ থানায় অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের ৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার সুমি আক্তার ও আবু বকর সিদ্দিক পৃথক আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি শেষে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জানান, গ্রেপ্তার সুমি আক্তার ওরফে পাখি একজন পেশাদার যৌন কর্মী। সেই সুবাদে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কাঁচপুর খাসপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলামের ভাড়াটিয়া পেশায় সাটার মিস্ত্রি মো. আলী হোসেন মোল্লার সঙ্গে তার নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হতো। পাশাপাশি তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে গত এপ্রিলে সুমি আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় ভোলার চরফ্যাশনের মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. বাগন আলীর ছেলে আবু বকর সিদ্দিকের। বিয়ের পর সুমি আক্তার তার পেশা ছেড়ে দেন। তবে পুরোনো প্রেমিক আলী হোসেন সুমি আক্তারকে নিয়মিত মোবাইল ফোনে বিরক্ত করতেন। সুমি আক্তারের প্রতি আলী হোসেনের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও তার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না সুমির।
এরই এক পর্যায়ে গত ৪ মে সন্ধ্যায় কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকায় আলী হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন সুমি আক্তার। স্বামী আবু বকর সিদ্দিক বাসায় না থাকায় আলী হোসেনকে কাঁচপুর থেকে সারুলিয়া এলাকায় নিজেদের বাসায় নিয়ে যান সুমি আক্তার। ওই রাতে স্বামী আবু বকর বাসায় এসে তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখতে পান। এসময় তাদের মধ্যে বাক-বিত-া ও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আবু বকর সিদ্দিক আলী হোসেনকে ঘুষি মেরে ফেলে দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এসময় সুমি আক্তার আলী হোসেনের পা চেপে ধরে স্বামীকে সহযোগিতা করেন।
হত্যার পর সুমি আক্তার ও তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক তাদের ঘরে থাকা বটি ও ছুরি দিয়ে আলী হোসেনের পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে ময়লার ঝুড়িতে করে ফেলে দেন। সারা রাত তারা আলী হোসেনের মরদেহ ১২ টুকরো করেন এবং পরদিন (৫ মে) রাতে সেই টুকরোগুলো সারুলিয়া ঝিলের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন।
এদিকে ঘটনার এক মাস পর জিডির তদন্ত করে নিখোঁজ আলী হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। সেই সঙ্গে সোমবার (৫ জুন) হত্যাকা-ে জড়িত সুমি আক্তার ও আবু বকর সিদ্দিককে সারুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর হত্যার ওই লোমহর্ষক ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তিতে সোমবার (৫ জুন) সারাদিন সারুলিয়া ঝিলে ডুবুরি দিয়ে খোঁজ করেও মরদেহের কোনো অংশের সন্ধান মেলেনি। তবে তাদের বাসা থেকে আলী হোসেনের ব্যবহৃত জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ আরও জানান, সুমি আক্তারের প্রথম স্বামী মদনপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমকেও দুজনে মিলে হত্যা করেন এবং মরদেহ বাড়ির পাশের ড্রেনে ফেলে রাখেন। পরবর্তীতে ডেমরা থানা পুলিশ কঙ্কাল উদ্ধার করে। ওই ঘটনায়ও তাদের নামে মামলা হয়। তবে ওই হত্যাকা- থেকেই মূলত তাদের মানুষ হত্যার ভীতি দূর হয়ে যায়।
সুমি ও আবু বকর সিদ্দিককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাদের পৃথক আদালতে হাজির করে এবং দু’জনেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অভিযোগ রয়েছে, সুমির প্রথম স্বামী জাহাঙ্গীর আলমই নাকি তাকে যৌন কর্মী হতে বাধ্য করেন। সেই ক্ষোভে দ্বিতীয় স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করেন সুমি।

সংবাদ প্রকাশঃ ০৭০৬২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ