নবজাতকের মৃত্যু! চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ পিতার

সিটিভি নিউজ।।   মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলা সদরের শ্রীমঙ্গল সড়কের পাশ্ববর্তী বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতাল এক নবজাতকের চিকিৎসার অবহেলায় হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
মৃত্যুর ঘটনায় শিশুর পিতা শাহেদ খান অভিযোগ করছেন । শাহেদ খান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রীরাইনগর গ্রামের খান বাড়ির বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীর নাম শাহেদ খান জানান, তার স্ত্রী লাকী খানম (৩৫) কে নিয়ে ২৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের জন্য ১০৭নং কেবিনে ভর্তি  করেন।
শাহেদ অভিযোগ করে বলেন, ভর্তির পর হাসপাতালের ডাক্তার নরমাল ডেলিভারির জন্য লেবার রুমে নিয়ে গিয়ে আড়াই ঘন্টা চেষ্টা করেন আবার এরই মধ্যে একজন বের হয়ে মিষ্টি ও তুয়ালে আনার জন্য বলেন। তিনি নিয়ে আসার পর বলা হয় আপনার স্ত্রীর অপারেশন করা লাগবে আপনি ডাক্তারের ফিস জমা দিন।
তিনি ফি জমা দেয়ার পর প্রসূতি, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ
ও সার্জন ডাঃ জাকিয়া শহীদ খান এসেও নরমাল ডেলিভারিতে চেষ্টা করেন। পরে শাহেদ খানকে লেবার রুমে নিয়ে দেখানো হয় বাচ্চার অবস্থা ভাল নয় সিজার করা লাগবে। তখন তিনি বলেন আপনারা যা ভাল মনে করেন তা করেন। এসময় তিনি দেখতে পান বাচ্চাকে অর্ধেক বের করা হয়েছে এবং কানে ধরে টানা হচ্ছে বলে শাহেদ খান অভিযোগ করেন।
পরে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় যথারীতি অপারেশন শেষ হওয়ার পর শাহেদ খান দেখেন আয়া শিশু বাচ্চাকে নিয়ে বের হচ্ছেন। শিশুর অবস্থা ভাল না থাকায় শিশু ডাক্তারকে আনা হয় এবং তিনি পরীক্ষা করে শিশুকে অক্সিজেন ও চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। তখন শাহেদ শিশু মৃত বলে অক্সিজেন খুলে ফেলেন এবং অভিযোগ করেন উনার শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে। কেননা তিনি তার স্ত্রীকে সিজারের জন্য নিয়ে আসেন কিন্তু তারা প্রথমেই সিজার না করে নরমাল চেষ্টা করেন এসবের কারনে তার সন্তান মারা গেছে। তিনি তার শিশুকে হত্যার অভিযোগ ন্যায় বিচারের দাবী জানান।
এছাড়া তিনি আরো বলেন বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে এবং হাসপাতালের মালিক মিসেস বদরুন্নেসা শাহেদ খানকে একটি গাড়ি দিবেন বিষয়টি শেষ করে ফেলার জন্য।
এব্যাপারে সরজমিনে বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাঃ হালিমা চৌধুরী জানান, সকাল ৮টার দিকে শাহেদ খান উনার স্ত্রী লাকী খানমকে ভর্তি করা হয়। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে যথারীতি সকল নিয়ম মেনে নরমাল ডেলিভারির জন্য লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে চেষ্টায় ব্যর্থ হলে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাঃ জাকিয়া শহীদ খানকে সকাল ৯টার দিকে আসেন এবং নরমাল ডেলিভারি কক্ষে লাকী খানম (৩৫) স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য যে চাপ দেয়া প্রয়োজন তা দিতে না পারায় ও বাচ্চার হৃৎস্পন্দন কম থাকায় সিজার করা প্রয়োজন বলে ডাঃ জাকিয়া শহীদ খান রোগীনির স্বামীকে অবগত করেন এবং শাহেদ খানের লিখিত সম্মতি ক্রমে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তিনি জানান।
ডাঃ জাকিয়া শহীদ খান আরো বলেন অপারেশন শেষ করে বাচ্চাকে জীবিত অবস্থায় বের করা হয় এবং বাচ্চাটি গ্রাসপিন ( হৃদস্পন্দন একেবারে কম) অবস্থায় বের করা হয়।
এমতাবস্থায় শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শহিদুল ইসলাম খানকে কল করা হলে তিনি আসেন এবং বাচ্চাকে দেখে অক্সিজেন দেন এবং যথারীতি চিকিৎসা দিয়ে চলে যান।
পরোক্ষণে শিশুর পিতা শাহেদ খান অক্সিজেন খোলে ফেলেন এবং বাচ্চাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এসময় পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে খবর পেয়ে
মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশের সদস্যগন উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এসময় স্থানীয় অনেক গণমাধ্যম কর্মী ও লোকজন ভীড় জমায়।
অদ্য ২৮ ডিসেম্বর সোমবার শাহেদ খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শিশুর দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছেন। গতকাল তিনি মৌলভীবাজার  সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ করার জন্য দু’বার গিয়েও উনাকে না পাওয়ায় অভিযোগ করতে পারেন নি।
তবে তিনি শিশুর মৃত্যুর ব্যাপারে সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপার বরাবরে ন্যায় পাওয়ার স্বার্থে লিখিত অভিযোগ করবেন।
এব্যাপারে হাসপাতালের মালিক মিসেস বদরুন্নেসা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে মৌলভীবাজারবাসীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোন একটি কুচক্রী মহল হাসপাতালের মান ক্ষুন্ন করার জন্য এসব মিথ্যা বানোয়াট রচনা করছে। এছাড়া কিছু গণমাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মিথ্যা ছড়াচ্ছে। তিনি এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এদিকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েকদিন পরপর বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালে কখনো গর্ভবতী নারী, কখনো শিশু মারা যায়। কিন্তু কেন বা কি কারনে মারা যায় স্থানীয় সিভিল সার্জন এসব কি দেখেন না?  আর অভিযোগ হয় কিন্তু এসব অভিযোগের তদন্তে কি আসে তাও কেউ জানতে পারে না। হাসপাতাল কতৃপক্ষ টাকা দিয়ে এসব ধামাচাপা দিয়ে দেয়। টাকার কাছে সিভিল সার্জন জিম্মি হয়ে আছে বলে অনেকই উল্লেখ করেন।
এব্যাপারে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ তউহীদ আহমদের সাথে যোগাযোগ করে শিশু মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি জেনেছি তবে লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে অবশ্যই তদন্ত কমিটি গঠন করে যথারীতি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
এছাড়া গত ১অক্টোবর বদরুন্নেসা প্রাইভেট হাসপাতালে সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতীর মৃত্যু এই হাসপাতালে হয়েছিল। সেটা নিয়ে লিখিত অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তাতে কি পাওয়া গেল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তদন্ত বেশ কিছুদিন পূর্বেই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি তাতে চিকিৎসায় কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
হাসপাতাল কতৃপক্ষ টাকা দিয়ে সব সমঝোতা করে ফেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কে কোথায় কি করলো তা বলা মুশকিল তবে আমাদের দেশের জনগন সবসময় এমন ধারনাই করেন। দুটি ঘটনাই পৃথক তাই এক করে বলা সম্ভব নয়। আর শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ আসলে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।সংবাদ প্রকাশঃ  ২৮১২২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ