কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাশ নিয়ে এম্বুলেন্স চালকের বাণিজ্য! স্বজনদের কাছে মোটা টাকা দাবি

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাস যাত্রী মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়
হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে জীবিত, এ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু
সিটিভি নিউজ।।      এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ দেবীদ্বার(কুমিল্লা) প্রতিনিধি//
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাশ নিয়ে এম্বুলেন্স চালক ও মালিকের বাণিজ্যেও অভিযোগ পাওয়া গেছে! সড়ক দূর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নেয়ার অজুহাতে স্বজনদের কাছে মোটা টাকা দাবি করেছেন একটি প্রাইভেট এম্বুলেন্স চালক ও মালিক।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাস যাত্রী হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে চিকিৎসাধীন থাকলেও রোগির খোঁজ মিলেছে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে। তবে হাসপাতালে এসে স্বজনরা এই রোগিকে জীবিত নয়, পেয়েছেন মৃত। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। তবে রোগির স্বজনদের অভিযোগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবহেলায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এই বাস যাত্রীর।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবীদ্বারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিশা পরিবহনের একটি বাস গাছে ধাক্কায় ১৫ যাত্রী আহত হয়। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১২জনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিলো। আহদের মধ্যে ওই বাস যাত্রী মাহবুবুল আলম বাবুলকেও (২০) চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে। এই খবর পেয়ে স্বজনেরা কুমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখেন তাদের রোগি (আহত বাবুল) নেই। এর মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের সামনে থাকা প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সের একজন চালকের মোবাইল ফোন থেকে কল পান রোগির স্বজনরা, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারই এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। এই জন্য এ্যাম্বুলেন্স চালক তাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে এই টাকা মোবাইল ফোনে দ্রুত পাঠাতে বলেন।
কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর তার স্বজনরা ওই এ্যাম্বুলেন্সে মৃত অবস্থায় তাকে পান। এদিকে স্বজনদের কাছে এ্যাম্বুলেন্স চালক আবারও ১৫ হাজারে নেমে আসেন। সবশেষে চালক ১১ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ওই রোগির স্বজনরা বেশ বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। এ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালককে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সামনে তাদের সাথে এবং স্বজনদের বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে রোগির স্বজনরা অভিযুক্ত এ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালককে আটক করলেও তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। তবে বাস যাত্রীর লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই অন্য একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। এই বিষয়ে নিহতের স্বজনরা বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি আটকের জন্য তৎপরা চালাচ্ছেন।
অভিযুক্ত এ্যাম্বুলেন্স মালিক ইউছুফ। চালক রোহান কোতয়ালী থানার এলাকার মুরাদপুর এলাকার মো. রফিক ছেলে (২৫)। এ্যাম্বুলেন্স নাম্বর ঢাকা মেট্রো- ৭১৩০৭২।
রোগির স্বজন সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ভর্তিকৃত আমাদের রোগি এ্যাম্বুলেন্সে গেল কিভাবে। তাহলে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব ছিলো না।
অন্যান্য রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা অতিরিক্ত অর্থের লোভে বিভিন্ন চক্রের সাথে যোগসাজসে এই ধরণের অনিয়মগুলো প্রায় করে থাকেন। তাদের এই অনিয়মের ফলে রোগি ও তার স্বজনরা ভোগান্তি এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি ভোর বেলায় হাসপাতালে লোকবল কম থাকার সুযোগে জরুরী বিভাগের কাছ থেকে চক্রটি রোগিটিকে জোর করে নিয়ে যায়।
এবিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, যে এই কাজটি করেছে গুরুত্ব অন্যায় কাজ করেছে। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করতে দেওয়া হবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে হাসপাতালের রোগিটি এ্যাম্বুলেন্সে গেল কিভাবে ? তার উত্তর দিতে পারেননি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ) আজিম উল আহসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আইনগত ভাবে এবং সামাজিক ভাবেও বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এই সিন্ডিকেটে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
বেলা ২টায় দেবীদ্বার থানার ওসি আরিফুর রহমান’র সাথে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ভোর অনুমান ৪ টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ৫ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে আহতদের মধ্য থেকে মৃত্যুর বিষয়ে কোন খবর তিনি জানেননি বলে জানিয়েছেন।
একই সময়ে মিরপুর হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মৃদুল কান্তি কুরি’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ভোরে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লাগে। এতে অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হয়। গুরুতর আহত অন্তত ৫ জন যাত্রীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাসটিকে উদ্ধার এবং সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করে হচ্ছি। ব্যাস্ততার কারনে কুমেক হাসপাতালে পাঠানো রোগিদের খোঁ নেয়া সম্ভব হয়নি।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১১২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ