কুমিল্লার শ্রম বিক্রির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা মানুষের হাটে ,, তিন বাজারে বসে ১৪ জেলার মানুষের হাট

সিটিভি নিউজ।।   নেকবর হোসেন   কুমিল্লা প্রতিনিধি  জানান ===
ভোর রাত্র মাত্র ফজর আযান শেষ হলো। শেষ আশ্বিনের কুয়াশায় মোড়ানো কুমিল্লা নগরী। তার মাঝে শত শত লোক দলে দলে ছুটছে মানুষ। পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি, টি-শার্ট ও পুরোনো প্যান্ট। গলা ও কোমরে গামছা বাঁধা। হাতে কাজের সরঞ্জাম। কাজ পেতেই ঘুমঘুম চোখ নিয়ে ছুটে চলা। উদ্দেশ্য, মানুষের হাটে হাজির হওয়া। ভরা মৌসুমে কুমিল্লায় প্রতিদিন পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিকের শ্রম বিক্রি হয়। অন্য সময়ে দৈনিক তিন হাজার শ্রমিক বিক্রি হয়।
প্রতিদিন ভোরে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় ও সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজীতে বসে মানুষের হাট। বিকেলে হাট বসে সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে। হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর ,নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম ও কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলার কৃষি শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি এবং গৃহস্থালির কাজ করা শ্রমিকরা ভিড় করেন এসব হাটে। এসব শ্রমিকের কেউ আসেন দুই তিনমাসের জন্য। থাকার সুবিধা পেলে কিংবা গৃহস্থালিতে ভালো কোনো কাজ পেয়ে গেলে অনেকে থেকে যান বছরের পর বছর। টানা কয়েকদিন কাজ না পেলে এদের অনেকে আবার জায়গা বদল করে অন্যত্র চলে যান। কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এসব শ্রমিকরা বিভিন্ন মেস, স্কুলের বারান্দা, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও কম দামি গরিবের হোটেলে (শুধুমাত্র রাত্রিযাপনের জন্য কুমিল্লা স্টেশন ও আশেপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা হোটেল। যেখানে প্রতিরাতে থাকতে খরচ পড়ে ৫০ থেকে ২০০টাকা। সাধারণত শ্রমিকরাই থাকেন এসব হোটেলে) আশ্রয় নেন। কাজ পেলে অনেক শ্রমিক বাসাবাড়িতে থাকেন আবার মেসে থেকে যান কেউ কেউ । মুষ্টিমেয় কিছু শ্রমিক পরিবার নিয়ে বসবাস করেন কুমিল্লার বস্তি এলাকায়।
নগরীর কান্দিরপাড় মানুষের হাটে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে বিক্রি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। গৃহস্থালির কাজ করা শ্রমিকরা ওড়া-কোদাল নিয়ে একপাশে; নির্মাণ শ্রমিকরা কর্ণিক, বল পিন হ্যামার, বাশুলি, উষা, ওলন, স্পিরিট লেভেল, গুনিয়া, কোদাল, বেলচা, কড়াই-ইত্যাদি যন্ত্রপাতি নিয়ে অন্যপাশে এবং যেকোনো প্রকারের কাজ করতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছেন। টাউনহল গেট ও এর বিপরীতে, পূবালী চত্বর এবং হকার মার্কেট পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ মিটার এলাকায় এ হাট বসে। হঠাৎ হঠাৎ ক্রেতা আসলে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে যান। আবার অনেক শ্রমিক কী কাজ করাবেন বলে ডাকতে থাকেন।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধান রোপণ ও ধান কাটার সময় হলে কুমিল্লায় প্রতিদিন পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক বিক্রি হয় কুমিল্লা জেলায়। অন্য সময়ে দৈনিক তিন হাজার শ্রমিক বিক্রি হয়। যাদের বেশিরভাগই নির্মাণ শ্রমিক। সাধারণ ছুটির কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এবার আউশ মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় খুব কম শ্রমিক বিক্রি হয়েছে। ছুটি শেষে যান চলাচল শুরু হলেও বিক্রি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়নি বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। এ কারণে অনেক শ্রমিককে মাসে ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত অবিক্রিত থেকে যেতে হচ্ছে। দৈনিক হিসেবে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয় নির্মাণ শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকরা। দৈনিক সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা চুক্তিতে বিক্রি হয় গৃহস্থালির শ্রমিকরা। মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে অনেকে কাজ করেন। কাজ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক বেতন নেন কিছু কিছু শ্রমিক।
হবিগঞ্জ থেকে আসা রাজমিস্ত্রি আকবর আলী জানান, অশোককতলার একটি মেসে থাকেন তিনি ও আরও ২০জন শ্রমিক। করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর কাজ তেমন পাচ্ছেনা না। এদিকে মেস মালিক কোনো ভাড়া মওকুফ করেননি। মাসে ১৫দিনের মতো অবিক্রিত থাকেন। বাড়িতে আরও ৫জন আছে। নিদারুণ কষ্টে সংসার চলছে তার
ঠাকুরগাঁওয়ের আজিজুল হক থাকেন শাসনগাছা এলাকায়। করেন গৃহস্থালি ও ড্রেন পরিষ্কারের কাজ। তিনি জানান, ‘বাড়িতে বাবা-মা,স্ত্রী , নবম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। মাসে সবমিলিয়ে আট হাজার টাকার মতো রোজগার করেন। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে অর্ধেকের বেশি খরচ হয়ে যায় কুমিল্লা শহরে।’
কুমিল্লার মুরাদনগরের ৭০ বছর বয়সী মোদাল মিয়া সস্ত্রীক শাসনগাছার বস্তি এলাকায় বসবাস করেন। মোদাল মিয়া বলেন, ‘আমার সাত মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে থাকতে একবার স্ট্রোক করে। কিছুদিন পর জমিজামা বিক্রি করে তাকে সৌদি পাঠাই। মাঝে সে আবার স্ট্রোক করে। এখন ছেলে কর্মহীন। নিজেও বয়স্ক মানুষ। মাসে ৮-১০দিন ভারের কাজ করি। এভাবে কী আর জীবন চলে বাজান! যারা তরুণ, শরীরে শক্তি আছে,তারা আগে বিক্রি হয়। বুড়ো ও দুর্বলদের কেউ নিতে চায় না।’
চাপাইনবাবগঞ্জের দেলোয়ার জানান, দৈনিক ৪০০টাকা মজুরিতে গৃহস্থালির কাজ করেন তিনি। মাস ১০ দিনের মতো অবিক্রিত থাকেন। মেসে থেকে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন,‘ কোনো শ্রমিকের অর্থকষ্ট ও যাতায়াত খরচ না থাকলে জেলা প্রশাসন তা বহন করবে। অনেক শ্রমিককে সহায়তা দিচ্ছি। তবে আবাসনের ব্যবস্থা করা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার মতো জায়গা ও অর্থ জেলা প্রশাসনের নেই।সংবাদ প্রকাশঃ  ০৬১১২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ