বন্যা পুনর্বাসন কর্মসূচি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

সিটিভি নিউজ।।         চলমান বন্যা শেষে সময়মতো কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচি নিতে জোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কোভিড ও বন্যা যেহেতু একসঙ্গে এসেছে, এ কারণেই একটু বেশি ‘কেয়ারফুল’ থাকতে হবে। সব মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠেই থাকবেন, মানুষের পাশে থাকবেন। সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা অংশ নেন। বৈঠকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আইন ও মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

এদিন বিকালে দু’দিনব্যাপী ‘ঢাকা-ওআইসি ইয়থ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলায় যুবকদের জন্য স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ধারণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে বন্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বন্যায় আমনের ক্ষতি হলেও পলির কারণে বন্যার পরের সুফলটা নিতে কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচিগুলো ভালোভাবে সময়মতো কার্যকর করার ক্ষেত্রে জোর দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে রোপা আমনে যেন আমরা খুব অ্যাটেনটিভ থাকি, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই, সেখানকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় বন্যাকবলিত মানুষ যাতে আশ্রয় নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

বন্যাদুর্গত এলাকায় স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ব্যবস্থা করতে বিশেষ করে গরু-বাছুরের ভ্যাকসিনগুলো ঠিকমতো দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আইন : বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২০-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটি প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং নিয়ে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়।

আইনে ২৯টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কীভাবে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে যে কাজগুলো হয়েছে তা আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ আইনের অধীনে কাজগুলো হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।

সুতরাং কৃতকাজের কোনোটি চ্যালেঞ্জ করা যাবে না যে আইনবহির্ভূত কাজ। আইনে অন্য শিক্ষা বোর্ডের মতো মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর হবে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন, উন্নয়ন এবং গবেষণার ক্ষেত্রে এ আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৭১ শতাংশ : চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৪টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়।

এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২৮টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ২০টি। ৮টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো নীতি বা কর্মকৌশল, চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদিত হয়নি। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ৩টি।

অধ্যাদেশ ৩ মাসের মধ্যে আইন : দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোকে তিন মাস সময় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসছে- যতগুলো অধ্যাদেশ রয়েছে যেগুলোকে আইনে পরিণত করতে হবে বলে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল।

তিন মাসের মধ্যে এগুলো ফাইনাল করে নিতে হবে। আইনমন্ত্রীও এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিমকোর্টের দেয়া রায় অনুযায়ী দুটি সামরিক সরকারের শাসনামল অবৈধ হয়ে যায়।

১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর সময়ের মধ্যে জারি করা সব অধ্যাদেশও অবৈধ। ওই দুই সামরিক শাসনামলে ১৭২টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল।

এই অধ্যাদেশগুলোকে আইনি ভিত্তি দিতে ২০১৩ সালে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা অধ্যাদেশ ‘কার্যকরণ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১৩’ এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর সময়ের মধ্যে জারি কতিপয় অধ্যাদেশ ‘কার্যকরণ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১৩’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যাদেশগুলো যুগোপযোগী করে বাংলায় অনুবাদ করে আইনের খসড়া হিসেবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে বিল আকারে পাস হয়ে আইনে পরিণত হবে।

বাংলাদেশের অর্থে নেপালে হবে বৌদ্ধবিহার : বাংলাদেশের অর্থায়নে নেপালের লুম্বিনীতে একটি বৌদ্ধবিহার নির্মাণের লক্ষ্যে নেপালের লুম্বিনীর ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লুম্বিনী ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। এই স্থানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে একটা যোগসূত্র আছে। সেখানে একটা আশ্রম বা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ থেকে আবেদন করার পর তারা একটা প্লট দিয়েছে।

করোনা মোকাবেলায় যুবকদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুবকদের জন্য স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ধারণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার বিকালে দুই দিনব্যাপী ‘ঢাকা-ওআইসি ইয়থ ক্যাপিটাল ২০২০’ এর অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এই মহামারীর কবল থেকে মানবতার মৌলিক অস্তিত্ব রক্ষায় বিশ্বব্যাপী আরও সহযোগিতারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যুবকদের স্থিতিশীল ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ধারণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পৃক্ত করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। প্রাণবন্ত যুবকরা তা দেখাতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশা করি।

প্রধানমন্ত্রী ‘সমতা ও সমৃদ্ধি : একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য’ এই শিরোনামে দুই দিনব্যাপী রেসিলেন্ট যুব নেতৃত্ব শীর্ষ সম্মেলনেরও উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেখা যাচ্ছে যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের লালিত মানুষ এই মহামারীর সঙ্গে ভালোভাবেই লড়াই করছে। তাই আমাদের অবশ্যই দৈনন্দিন জীবনে মৌলিক প্রকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

কোভিড-১৯ সংকট জলস্রোতধারা অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী মহামারী-পরবর্তী ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের’ জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের’ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এভাবে হতে পারে- প্রথমত, উদ্বেগের কারণে সুরক্ষাবাদের নামে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আরও নিয়ন্ত্রণ, অভিবাসন ও ভিসা নীতিমালায় আরও কঠোর হতে পারে। তবে এটি মহামারী মোকাবেলার জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরে।

দ্বিতীয়ত, এটা পরিষ্কার যে কোভিট-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি ২০০৮-২০০৯ এর অর্থনৈতিক সংকটকে ছাড়াবে। তবে নেটওয়ার্কযুক্ত অর্থায়ন ও সম্পদ সৃষ্টির নতুন মাত্রা যোগ করবে।

তৃতীয়ত, এরূপ অর্থনীতির ওপর এত বড় অভিঘাত গত কয়েক দশকেও দেখা যায়নি। শুধু ১০ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্বের সরকারগুলো বিশ্বব্যাপী ১০.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি উদ্দীপনা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এটি আটটি মার্শাল প্ল্যানের সমতুল্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শ জীবন হতে পারে। যেহেতু তিনি একজন খেলোয়াড়, নিষ্ঠাবান ছাত্র এবং একই সঙ্গে অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা, ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ এর আয়োজকরা এই মহান নেতার চিরন্তন আদর্শের প্রকৃত চেতনাকে সম্মান জানাতে ‘বঙ্গবন্ধু গ্লোবাল ইয়ুুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওছাইমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, আজারবাইজানের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী আজাদ রহিমভ, কাতারের সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী সালাহ বিন গনিম আল আলী, ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি তাহা আইহান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এ সময় বক্তব্য দেন।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৮২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ