তনু হত্যার সাত বছর # বিচার দেখে মরতে চান মা-বাবা, আড়াই বছর যাবত যোগাযোগ করেনি পিবিআই।

সিটিভি নিউজ।।    এম ফয়জুল ইসলাম, মুরাদনগর   সংবাদদাতা জানান ====
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে সোমবার। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শনাক্ত হয়নি কোন আসামি। দেওয়া হয়নি অভিযোগপত্র। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই গত প্রায় আড়াই বছর যাবত বাদীপক্ষের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম জীবিত থাকাবস্থায় এই হত্যাকান্ডের বিচার দেখে যেতে চান।
পুলিশ জানায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী ছিলেন সোহাগী জাহান তনু। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের অদূরে কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, প্রথমে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই সাইফুল ইসলামকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। চার দিন পর দ্বিতীয় দফায় ২৫ মার্চ কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি একেএম মনজুর আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তৃতীয় দফা তদন্ত করেন।
চতুর্থ দফায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি চার বছরের বেশী সময় ধরে তদন্ত করেও মামলার কোন কুল কিনারা করতে পারেননি।
পঞ্চমবার ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই ৩ বার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাঁদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পিবিআই ২০২০ সালের নভেম্বরের পর বাদীপক্ষের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি বলে দাবি করেছেন ইয়ার হোসেন। এ অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত।
মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলার কোন অগ্রগতি নেই। এরই মধ্যে পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। সিআইডির জালাল উদ্দিন আহম্মদ মামলার তদন্তে কালক্ষেপন করছেন। তিনি মামলাটি নষ্ট করে ফেলেছেন। এ বিষয়ে গত শনিবার জালাল উদ্দিন আহম্মদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। ইয়ার হোসেন পিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে বলেন, পিবিআইয়ের মুজিবুর রহমান নামের একজন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। কিন্ত তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে প্রায়ই আড়াই বছর ধরে কোন যোগাযোগ নেই। মামলা কি অবস্থায় আছে সেটাও জানি না।
পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পিবিআই হেড কোয়ার্টারের ষ্পেশাল টিম এ মামলাটি তদন্ত করছেন। তাই এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ও মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর বাবা প্রশ্ন করেন, ‘গরিবের বিচার আছে আল্লাহ ছাড়া? পিবিআই আমাদের কাছে আসে না। এখনো আসামী চি‎ি‎হ্নত হয়নি’।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শরীরটা আমার ভাল যাচ্ছে না। মরণের আগেই বিচারটা দেখে যেতে চাই। তনুকে হারিয়ে আমি সর্বহারা। আমার এই মেয়ের জন্য আমি পড়াশোনায় বিনিয়োগ করেছি। সে পড়াশেনায় ভালো ছিল। পুরো ঘরে এখনো ওর জামা কাপড়, শখের জিনিস ছড়ানো ছিটানো আছে। প্রতিদিনই ওর কথা মনে পড়ে। ওর জিনিসপত্র দেখি। হাত বুলাই। আমি সরকারের কাছে ধনসম্পদ চাই না। বিচার চাই।’
তনু হত্যাকান্ডের পর বিচার নিয়ে আন্দোলন করে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লা ও কুমিল্লার থিয়েটার কর্মীরা। তাঁদের একজন কুমিল্লার সংস্কৃতিককর্মী খায়রুল আনাম বলেন, ‘এই মামলা হিমাগারে। জাতি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের বিচার চায়। মানুষের মনে এই ঘটনার রেশ রয়ে গেছে। ২০ মার্চ কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে আছে।’
এ দিকে মেয়ে সোহাগী জাহান তনুর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে গত শুক্রবার কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে গ্রামের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে আসেন বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগমসহ তার স্বজনরা। তনুর মাগফেরাত কামনার্থে কবর জিয়ারত, কোরানখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। #

সংবাদ প্রকাশঃ ২০০৩২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ