চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্কের সমন্নয়ে চিকিৎসাসেবা

সিটিভি নিউজ।।    মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার লেখক:চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ)   : সংবাদদাতা জানান ===দেশের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে এ পেশাকে আগলে রাখতে হবে- কারণ চিকিৎসাসেবা আমাদের জন্য জরুরি বিষয়। চিকিৎসকের সেবার সঙ্গে মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টি জড়িত।
চিকিৎসকরা প্রায়শই রোগীর স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত হন। দেশে চিকিৎসক হত্যার ঘটনাও ঘটে মাঝেমধ্যে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী না দিয়ে চিকিৎসা করতে গিয়ে আমাদের অনেক চিকিৎসক প্রাণও দিয়েছেন। এর পরও চিকিৎসা সংকটের দায় যেন কেবল চিকিৎসকের। এ দেশে সাধারণ একটি বিষয় হলো- রোগীর মৃত্যু হলে বলা হয় ভুল চিকিৎসার কথা। ভুল চিকিৎসার বিষয়টি তাৎক্ষণিক নির্ণয় করেন রোগীর স্বজন কিংবা কিছু সাংবাদিকরা। তবে সবাই না। তারপর যা হওয়ার তাই হয়; চিকিৎসক লাঞ্ছনা কিংবা আহত-নিহতের ঘটনা। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা আর মানুষ মেরে ফেলার এমন অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। হাসপাতালে রোগী মারা গেলে সোজা খুনের দায় চাপে ডাক্তার ও পরিচালকের ওপর। কথায় কথায় বলা হয় ভুল চিকিৎসার কথা। পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয় ‘অমুক হাসপাতালের অমুক ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’।
ভুল চিকিৎসার নিশ্চিত কীভাবে হন একজন সাংবাদিক কিংবা রোগীর স্বজন। এটাইতো প্রমাণ সাপেক্ষের বিষয়। অসুস্থ মানুষই ডাক্তারের কাছে কিংবা হাসপাতালে আসেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মুমূর্ষু রোগীদের আনা হয় হাসপাতালে। সৃষ্টিকর্তাই জীবনের মালিক। মানুষ কেবল চেষ্টা করে মাত্র। প্রায় ক্ষেত্রেই অসুস্থ মানুষটি মারা গেলে বলা হয় ভুল চিকিসৎসার কথা। অপারেশন, ব্রেইন স্ট্রোক, হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষতো সব সময়ই মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকেন। কোনো কোনো ডাক্তারও অবহেলা করেন, রোগীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন। তবে সব ডাক্তার কি এমন বাজে কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত? ভালো গুণের এবং মানবিকতাসম্পন্ন ডাক্তারের সংখ্যাই এখনো অনেক বেশি।
 সব ঘটনাকেই ভুল চিকিৎসা বলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সঠিক নয়। তাতে চিকিৎসক রোগীর সম্পর্কের অবনতি ঘটবে বৈকি! চিকিৎসকরা এ ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য আর ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। চিকিৎসায় ঝুঁকি নিতেই হয়, নইলে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কথায় কথায় চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করা, হত্যা করা এমন ঘটনায় ডাক্তাররা রোগীর চিকিৎসা দিতে অনুৎসাহিত হবেন। যা রোগীদের জন্য সুখকর সংবাদ নয়। এমন বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক মেধাবী চিকিৎসক এখন দেশ ছাড়ছেন এমন খবরও আমাদের কাছে আছে। এটাও অনেক বড় দুঃসংবাদ বটে! চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন রোগীর রোগ ভালো হবে কি না এটা নির্ভর করছে তার সঙ্গে তার চিকিৎসকের সম্পর্ক কী রকম, তার ওপর। চিকিৎসকের প্রতি যদি রোগীর আস্থা না থাকে, তাহলে কিন্তু চিকিৎসকের দেওয়া যে চিকিৎসা, সেটা মন থেকে না নিলে, চিকিৎসার কারণে তার ভালো হওয়ার, আরোগ্যের পথে যাওয়ার যে গতি আমি মনে করি সেটা ব্যাহত হয়। তাই যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর স্কুল-কলেজে যিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন তারাই একদিন ডাক্তার হয়ে আসেন। এমবিবিএস,  বিবিএস, এফসিপিএস/ এমএস করা একজন চিকিৎসক যে মর্যাদা পান কম মেধাবীসম্পন্ন বিসিএস অন্য প্রশাসনের লোক অনেক বেশি মর্যাদা পান। ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ করেও অসম্মানীত হন একজন ডাক্তার। এভাবে চলতে থাকলে ডাক্তাররা আর ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। চিকিৎসাসেবায় ঝুঁকি নিতে হয়। ঝুঁকি না নিলে মুমূর্ষু রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়। কথায় কথায় গায়ে হাত তুললে, মামলা হামলা করলে, ভুল চিকিৎসার অপবাদ দিলে ডাক্তাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এটা রোগী কিংবা রোগীর পরিবারের জন্য দুঃসংবাদ বটে! ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা কি সত্যি? কতটা সত্যি? ডাক্তারদের বিরুদ্ধে চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার যে ঢালাও অভিযোগ, তা ষোলোআনা সত্যি নয়। একেবারেই সত্যতা নেই,তা বলছি না। বলছি, অভিযোগের অনেকটাই অসত্য। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দেশে অনেক ডাক্তার আছেন দেবতুল্যের মতো। ডাক্তার ধর্ম পালনের মতো করে মনপ্রাণ দিয়ে রোগীর সেবা করেন। এমন সব ডাক্তারকেও যখন আশঙ্কায় থাকতে হয়, রোগী মারা গেলে তার ওপর আক্রমণ হতে পারে, হতে পারে হাসপাতাল ভাঙচুর। মস্তিষ্ক, হৃদরোগসহ জটিল অপারেশনে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, ইউরোপ সব জায়গায় রোগী মারা যায়।
আমাদের ডাক্তারদের সাফল্যের হার অন্য যে কোনো দেশের ডাক্তারের চেয়ে কম নয়। তাহলে আমাদের ডাক্তারের ক্ষেত্রে কেন শারীরিক আক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হবে? ভুল চিকিৎসার দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে কেন আমাদের চিকিৎসকদের? বাংলাদেশে অনেক ডাক্তার ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাতে সে তুলনায় তাদের সুনাম শোনা যায় না কখনো। অনেক ভালো, মানবিক ডাক্তার আছেন সারাদেশে। যারা অনৈতিক  করছেন তাদের তুলনায় ভালো ও নৈতিকতাসম্পন্ন ডাক্তারের সংখ্যা অনেক অনেক গুণ বেশি। মন্দের জন্য ঘৃণা করেন, সাজার ব্যবস্থা করেন এটা সমর্থন করি। ভালো যারা করছেন তাদের গুণকীর্তনও কিন্তু করা দরকার। পরিশেষে এটাই বলব, চিকিৎসকের এ মহান পেশাটা যেন কোনোভাবে কলুষিত না হয়। দেশের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে এ পেশাকে আগলে রাখতে হবে- কারণ চিকিৎসাসেবা আমাদের জন্য জরুরি বিষয়। চিকিৎসকের সেবার সঙ্গে মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টি জড়িত। জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো অধিকার নেই কারও।
চিকিৎসকদের মাঝে নীতিনিষ্ঠা, মানবিকতা, সদাচার, কর্তব্যপরায়ণতা- এসবগুণের বেশি পূজারী হওয়ার কথা। অনেক চিকিৎসক এমনটাই। সংকটকালীন সময়ে জীবনও দিতে হয়েছে। চিকিৎসাপেশাটা তো এমনই। আর এমনটা হওয়াই উচিত। রোগী এবং রোগীর স্বজন, ক্ষেত্রভেদে চিকিৎসকদের কারণে ডাক্তার-রোগীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ দূরত্ব কমিয়ে চিকিৎসক-রোগীর মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান রাখা দরকার। চিকিৎসক, রাগী এবং রোগীর স্বজনরাই তা করবেন। রোগী-ডাক্তার সম্পর্ক অটুট থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক:চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।সংবাদ প্রকাশঃ ২৫১০২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like>  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ