কুমিল্লার গোমতীর ৯৩ কিলোমিটার নৌ পথের ৮০ কিলোমিটারেই নাব্যতা সংকট,বাংলাদেশ ভারত নৌ বাণিজ্য  বড় বাধা

সিটিভি নিউজ।। নেকবর হোসেন    কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান ==
কুমিল্লার গোমতী নদী দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে নৌ বাণিজ্য শুরু হয়েছিল গত ৫ সেপ্টেম্বর। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ পথে বাণিজ্যিক নৌ চলাচল শুরু হওয়ায় দু’দেশের পক্ষ থেকেই দিনটিকে ঐতিহাসিক দিন বলা হয়েছিল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া ঐতিহাসিক এই নৌ চলাচল আপাতত বন্ধই থাকছে। এর প্রধান কারন হচ্ছে নদী পথে চলাচলের জন্য গোমতী নদীতে পর্যাপ্ত নাব্য নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা দাউদকান্দি থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া বন্দর পর্যন্ত নদী পথটি ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্তমানে এই নৌ পথের ৮০ কিলোমিটারেই রয়েছে নাব্যতা সংকট। যার কারনে প্রায় পুরো নদীটি খনন করা ছাড়া দু’দেশের মধ্যে নৌ বাণিজ্যের আর কোন সযোগ থাকছে না।
এদিকে, নৌ পথে বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য জোরদার করার লক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রায় পুরো নদীটিই খননের আওতায় আনছে বলে জানা গেছে। তবে এই খননের কাজ এখনই শুরু হচ্ছে না। আগামী শুস্ক মৌসুমে এই নদীটি খননের কাজ শুরু হবে। পুরো নদীটি খনন হলে সারা বছরই দু’দেশের মধ্যে নৌ বাণিজ্য স্বাভাবিক থাকবে। এছাড়া সড়ক পথের চেয়ে কম খরচে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, সাধারণত আগ থেকেই দু’দেশের মধ্যে সড়ক পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়ে আসছিল। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভারতেরও আগ্রহ থাকায় গোমতী নদী দিয়ে নৌ পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহিজলা জেলার সোনামুড়া বন্দরে দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গোমতী নদী দিয়ে জেলার তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং ও কুমিল্লা সদরের বিবিরবাজার হয়ে সোনামুড়া পর্যন্ত হবে এই বাণিজ্যিক নৌ-চলাচল। এই নৌ-পথটি ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ৮৯.৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ এবং অপর অংশ ভারতের। তবে ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী পথের ৮০ কিলোমিটার এলাকাতেই রয়েছে নাব্যতা সংকট। এছাড়া এই নদীর উপর ছোট-বড় অন্তত ২৩টি কম উচ্চতার সেতু থাকায় পণ্যবাহী বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। ফলে ছোট জাহাজে করেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজ করতে হবে। চলতি বছরের মে মাসে ঢাকায় দু’দেশের মধ্যে নতুন দুটি নৌ-পথের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। এগুলো হলো রাজশাহী থেকে ভারতের দুলিহান ও কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া।
কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থল বন্দর সূত্র জানায়, বিবিরবাজার স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে সড়ক পথে সিমেন্ট, কিচেন রেক, নেট, ইট ভাঙার মেশিন, মাদুর, সিমেন্ট শীট, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি পণ্য ভারতে যাচ্ছে। আর ভারত থেকে আসছে জিরা, আদা, আগর বাতিসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সড়ক পথে পরিবহন খরচ অনেক বেশি লাগে। যার কারনে পণ্যের দামও বেড়ে যায়। তবে নৌ পথে এসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলে পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে।
কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা জানান, মেঘনা নদীর তীরে দাউদকান্দি এবং পাশের মেঘনা ঘাট এলাকা দিন দিন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে রূপান্তরিত হচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকটি সিমেন্ট কোম্পানির কারখানাও এই এলাকায়। আর বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে বাংলাদেশের সিমেন্ট। সড়ক পথে এই সিমেন্ট ভারতে যেতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচও বাড়ে। যদি নৌ বাণিজ্য পুরোদমে চালু হয়ে যায় তাহলে মেঘনা নদী থেকে থেকে খুব সহজেই গোমতী নদী দিয়ে দু’দেশের মধ্যে নৌ পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। এতে সময়ও বাচঁবে, আবার পরিবহন খরচও কম হবে। তবে এসবের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো গোমতীকে খননের আওতায় আনতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো.জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোমতী নদীর নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিংয়ের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিআইডব্লিইটিএ। এছাড়া আমাদেরও একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। নৌ পথে আমদানি-রপ্তানি পুরোদমে শুরু হলে নদীর বেড়িবাধের সুরক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করবে বলে জানান তিনি।
বিবিরবাজার স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সুভাষ চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিবিরবাজার স্থল বন্দর দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯৯ কোটি ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫২ টাকার। আর ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্যে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৪ হাজার ৭৪৭ টাকা। যদিও করোনার কারনে কিছুদিন পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিলো। তবে যদি নৌ পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি শুরু হয়, তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় আরও বেড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বিবিরবাজার স্থল বন্দর এলাকা থেকে গোমতী নদীর নৌ পথের দূরত্ব প্রায় ৩০০ মিটার। শুধু খনন করলেই হবে না। এখানে নৌ বন্দর পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। সব কিছু ভালোভাবে শুরু করা গেলে এটি দু’দেশের বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করবে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌ পথের প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকায় নাব্যতা সংকট রয়েছে। আমরা এসব স্থানগুলো ইতিমধ্যে সনাক্ত করেছি। বর্তমান বর্ষা মৌসুমেও দেখা গেছে কোথাও কোথাও পানির গভীরতা মাত্র ৩ ফুট। সেদিন আমাদের পরীক্ষামূলকভাবে নৌ চলাচলেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নদীটি খননের জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তবে এখনই নদীটি খনন হচ্ছে না। আগামী শুস্ক মৌসুমে নদী খননের কাজ শুরু হবে। আর সেদিন ছিলো পরীক্ষামূলকভাবে নৌ চলাচল। নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরে পাওয়ার পরই দু’দেশের মধ্যে নৌ বাণিজ্য পুরোপুরি শুরু হবে। তবে এর আগে আগ নৌ চলাচল করবে না বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার গোমতী নদী দিয়ে কুমিল্লা দাউদকান্দি থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া বন্দর পর্যন্ত ১০ টন সিমেন্টবাহী একটি ট্রলার পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক নৌ চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। তবে সেদিন গোমতী নদীর নাব্যতা সংকটের কারনে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির ট্রলারটি সোনামুড়া বন্দরে পৌঁছার আগের কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বিবিরবাজার এলাকায় আটকে যায়। এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ট্রলারটি সেখানেই আটকে ছিলো। পরে সংকট কাটিয়ে ট্রলারটি প্রায় ৩ ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটার দিকে সোনামুড়া বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।সংবাদ প্রকাশঃ  ১৫২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ