অর্থাভাবে কলেজ ছাত্রী আয়েশা এখন গার্মেন্টসকর্মী

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : স্বপ্ন ছিল এসএসসি পাস করে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হবেন। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবেন। কিন্তু করোনার দুর্যোগ বদলে দিল সব। কলেজে নয়, টাকার অভাবে এখন গার্মেন্টস কর্মী ভর্তি হলেন আয়েশা আক্তার। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৬৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন আয়েশা। কিন্তু করোনা মহামারিতে তছনছ হয়ে গেছে তাদের সংসার। কলেজ ছেড়ে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে আয়েশাকে। তার বাবা ২০ দিন যাবত নিঁেখাজ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় আয়েশার দাদাবাড়ি। সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পিএম একাডেমি মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। মা রওশন আরা আদমজী ইপিজেডের ইউনেসকো গার্মেন্টসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনে ফিনিশিং অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন। বাবা মাসুদ রানা রডমিস্ত্রি। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার মাসুদ রানার। বড় মেয়ে আয়েশা এবার এসএসসি পাস করেছে। ছোট মেয়ে মরিয়ম আক্তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
২০১৮ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চাকরি ছেড়ে দেন আয়েশার মা। সেই থেকে তাদের পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসতে শুরু করে। যার শেষ পরিণতি ডেকে আনে করোনাভাইরাস। সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কলেজে ভর্তি না হয়ে সংসারের হাল ধরতে আয়েশাকে গার্মেন্টেসে চাকরি নিতে হলো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৩ আগস্ট আয়েশার বাবা কাঁচপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আয়েশার মা রওশন আরা। করোনার প্রভাবে তার বাবার কাজ বন্ধ থাকায় চার মাসের বাসা ভাড়া বাকি রয়েছে। উপার্জন না থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে আয়েশার বাবা সংসার চালাতেন। গত পাঁচ মাসে প্রায় এক লাখ টাকা ঋণ হয়েছে তাদের। এজন্য দুই মাস আগে নয় হাজার টাকা বেতনে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের ইউনেসকো গার্মেন্টসে চাকরি নেন আয়েশা।
একদিকে আয়েশার বাবা নিখোঁজ অন্যদিকে বাসা ভাড়া ও ঋণের বোঝা। সব মিলে মা রওশন আরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এখন মেয়ের বেতনের টাকায় কোনোমতে চলছে তার সংসার। তবে বন্ধ হয়ে গেছে আয়েশার লেখাপড়া। গার্মেন্টসে চাকরি করার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। এরপরও একাদশে ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে সিদ্ধিরগঞ্জের সরকারি এম ডব্লিউ কলেজে ভর্তি নিশ্চায়ন করেছেন আয়েশা।
আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। লেখাপড়া শেষে ভালো একটা চাকরি করে আমার অসুস্থ মাকে সুস্থ করতে চাই। ছোট বোনকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। নিখোঁজ বাবার খোঁজ চাই। আসলে আমরা খুবই অসহায়। শেষ পর্যন্ত কলেজে ভর্তি হতে পারব কি-না জানি না। বাড়ি ভাড়া, ঋণের বোঝা ও পড়াশোনা কীভাবে চালিয়ে নেব কিছুই বুঝতে পারছি না।’
আয়েশা বলেন, যদি অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হতে পারি তাহলে সমাজে যারা অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না তাদের নিয়ে কাজ করব। আমি এখন গার্মেন্টসে চাকরি করতে চাই না। পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। কিন্তু আমি যদি এখন চাকরি না করি তাহলে আমাদের সংসারের খরচ বহন করবে কে? আমার তো বড় ভাই নেই, বাবা নিখোঁজ, মা অসুস্থ। কে চালাবে আমাদের সংসার?
আয়েশার মা রওশন আরা বলেন, প্রায় ২০ দিন ধরে আয়েশার বাবা নিখোঁজ। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাইনি। উপায় না পেয়ে কলেজের পরিবর্তে গার্মেন্টসে ভর্তি হয়েছে মেয়ে। বাসা ভাড়া, সংসারের খরচ; সব মিলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। মেয়েকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা আছে। সংসারে অভাব থাকায় মেয়ে চাকরি করছে। গত কয়েক মাসে আমাদের এক লাখ টাকার মতো ঋণ হয়েছে। বাসা ভাড়া বাকি। মেয়ে চাকরি না করলে রাস্তায় নামতে হতো আমাদের।
রেকমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, আয়েশা মানবিক বিভাগ থেকে এবার ভালো ফলাফল করেছে। আমার বিশ্বাস লেখাপড়ায় তাকে কেউ সহযোগিতা করলে ভালো ফলাফল করবে। সেই সঙ্গে নিজের পরিবারের অভাব দূর করতে পারবে।সংবাদ প্রকাশঃ  ১৫২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=

Print Friendly, PDF & Email