ডাকাত সন্দেহে শ্যালক-দুলাভাইকে পিটিয়ে হত্যা, মামলা ছাড়াই দাফন

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।   এম ফয়জুল ইসলাম, মুরাদনগর সংবাদদাতা জানান ==
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে নিহত শ্যালক ইসমাইল হোসেন (৩০) ও ধুলাভাই নূরে আলমের (৩৫) লাশ ময়নাতদন্ত শেষে মামলা ছাড়াই শনিবার সন্ধ্যায় দাফন করা হয়েছে। ইসমাইল হোসেন পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ও নূরে আলম পাশের কাজিয়াতল গ্রামের আবদুস ছালামের ছেলে।
পুলিশ বলছে, পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে আগ্রহী নয়। ফলে এখন পর্যন্ত ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, মামলা করার জন্য থানায় গিয়ে বার বার ধর্ণা দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান। এ সময় উক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে গনশুনানীও অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, কি কারনে তাদেরকে গনপিটুনি দেয়া হয়েছে সেটা এখনো স্পস্ট নয়। আমরা চিকিৎসাধীন একজনের বক্তব্য নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিহত নুরে আলমের পরিবারের দাবি, নুরে আলম কুমিল্লা শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বৃহস্পতিবার তিনি মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন রাতে তিনি তাঁর বন্ধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ী বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পাশের পালাসুতা গ্রামের হাশেম মেম্বারের বাড়িতে তার শ্বশুরালয়ে যান।
এ সময় তার সঙ্গে শ্বশুর বাড়ির চাচাত শ্যালক ইসমাইল হোসেনও সঙ্গে ছিলেন। সে বাড়ীই নিহত নুরে আলমের শ্বশুর বাড়ি। তখন সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে পূর্ব বিরোধের জের ধরে ওই এলাকার কিছু লোক ও তার শ্বশুর পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের তিনজনকে বেদম লাঠিপেটা করেন। পরে তাঁদের ফেলে রেখে ‘ডাকাতদের গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে’ বলে গ্রামে অনুষ্ঠিত এক ওয়াজ মাহফিলের মাইকে প্রচার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে মুরাদনগর উপজেলার পালাসুতা, লক্ষ্মীপুর, বোরারচর, নেয়ামতকান্দি, মেলামচর ও কাজিয়াতল গ্রামে চুরি–- ডাকাতি বেড়ে গেছে এমন সংবাদ প্রচার করে আসছিলো একটি পক্ষ। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে পালাসুতা গ্রামের মসজিদের পাশে মাহফিল হচ্ছিল। হঠাৎ খবর আসে গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। তখন মসজিদের ও মাহফিলের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করেন। এ সময়ে পালাসুতা গ্রামের জামাই ও একই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনসহ তিনজন যুবককে গ্রামের কয়েকজন আটক করে পিটুনি দেন। এতে ঘটনাস্থলেই শ্বশুর বাড়ির জামাতা নুরে আলম ও চাচাতো শ্যালক ইসমাইল হোসেন মারা যান।
শনিবার সন্ধ্যায় নিহত নুরে আলমের বাবা কাজিয়াতল গ্রামের আবদুস ছালাম বলেন, আমার ছেলে নুরে আলম আমাদের একই ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামের হাশেম মেম্বারের বাড়ির নায়েব আলীর মেয়ে হালিমা বেগমের সঙ্গে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়। আবুবকর নামে ৯ বছরের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে তাদের।
পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে শ্বশুর পরিবারের সাথে মান-অভিমান ছিল। সে বিরোধ মোটাতে নুরে আলম (আমার ছেলে) তার এক বন্ধুকে নিয়ে শ^শুর বাড়িতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকেসহ তার এক চাচাত শ্যালককে পিটিয়ে হত্যা করে ডাকাত বলে প্রচার করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমি অসুস্থ থাকায় ছেলে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য আমার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে একাধিকবার থানায় পাঠিয়েছি। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নেয়নি, তাই আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
মুরাদনগর থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমি আজ সারাদিন কুমিল্লায় ছিলাম। এ ঘটনায় কেউ মামলা করার জন্য আসলে আমি জানতাম। বিষয়টি খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।সংবাদ প্রকাশঃ ১৭০১২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

Print Friendly, PDF & Email