সিটিভি নিউজ।। নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি===========
কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। আজ সকাল পর্যন্ত নদীটির পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও দ্রুতই দুকূল ছাপিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গোমতীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তাঁরা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাটিতে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ। তিনি জানান, কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন।
আজ সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিয়া বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গত ১০ বছর গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। তাঁর বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তান আর দুটি গাভি নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে নিজের ১২০ শতক জমির মুলা পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকার আবুল কালাম। ফসল তলিয়েছে কামারখাড়া এলাকার নোয়াব মিয়ারও। তিনি বলেন, শিম ও চালকুমড়ার চাষ করেছিলেন। শিমগাছ ছোট ছিল। মাচায় ঝুলছিল কচি চালকুমড়া। সব এখন পানির নিচে।জালুয়াপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মিয়া বলেন, এক লাখ টাকা পুঁজি ব্যয় করে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা ও চালকুমড়ার চারা রোপণ করেছেন। লতাগুলো মাচায় উঠবে। এই সময়ে গোমতীর পানিতে তাঁর চারাগুলো ডুবে গেছে।
টিক্কারচর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবারকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। চরের ভেতর কিছু কিছু জায়গায় পানি গলাসমান হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, হুট করে পানি বাড়ায় ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি।
চাঁনপুর এলাকার আজাদ মিয়া বলেন, সন্তানদের বইখাতা, নিজের গায়ের জামাকাপড় নিয়ে গতকাল রাতে বের হয়েছেন। আজ বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে খাট ও আলমারি বের করছেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানান, তিনও গতকাল রাত থেকে গোমতীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরছেন। বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় স্থানীয়রা মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গোমতী ছাড়াও কাকড়ী, পাগুলি ও সালদা নদী দিয়ে ভারত থেকে হু হু করে পানি আসা অব্যাহত রয়েছে। এতে কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লায় গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানান, সেখানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন। সংবাদ প্রকাশঃ =২২-৮-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=