বুড়িচংয়ে আধুনিক হাসপাতালে ভুল  অস্ত্রোপচারে জরায়ূ কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

সিটিভি নিউজ।।      সৌরভ মাহমুদ হারুন বুড়িচং  সংবাদদাতা জানান===========
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সদরের আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের অবহেলা, ভুল অস্ত্রপাচার (সিজার) ও জরায়ু কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এক প্রসূতি  মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৯ অক্টোবর রবিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রসূতির স্বামী নাছির ভূইয়া (৪২) রবিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। রাতেই  রোগীর স্বজনদের লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও জানা গেছে। এর আগেও এ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসাসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী অনেকেই।

নিহত প্রসূতি রোজিনা বেগম (৩২) এর স্বামী উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের নাছির ভূইয়ার লিখিত অভিযোগ ও নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রসব বেদনা দেখা দিলে গত ৮ অক্টোবর মধ্যরাতে হাসপাতালে নেয়া হয় রোজিনা বেগম কে। পরদিন সকাল ৬টায় ডাঃ সাইফুল এর তত্বাবধানে প্রসূতির সিজার করা হয়। সকাল কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হলেও প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। পরে জরায়ুতে টিউমার রয়েছে এবং তা দ্রুত অপারেশন করতে হবে বলে সাক্ষর নেন। এর কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার ওটি থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে রোগীকে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার কথা জানান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বিকেল আনুমানিক ৪টায় রোজিনার মৃত্যু হয়। নিহত রোজিনার স্বজনরা আরো জানান, ডাক্তারের ভুল অস্ত্রপাচারে ৩২ বছর বয়সী একজন প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলে। ডাক্তারদের অবহেলা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে তার মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে নিহতের স্বামীর বাড়িতে শিবরামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাড়ির উঠানে রয়েছে রোজিনার লাশ। স্বজনদের আসার অপেক্ষায় দাফনের জন্য রাখা হয়েছে গাড়িতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত কয়েকজনের সাথে কথা জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে রাতেই হাসপাতালের লোকজন এলাকার নেতৃস্থানীয়দের কয়েকজনকে নিয়ে নিহতের বাড়িতে হাজির হয়। নিহতের পরিবারকে নবজাতককে লালন পালনের জন্য ১লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা। এদিকে ভুল অপারেশনে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হলে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অনিয়ম ও ভুল চিকিৎসাজনিত বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে। ৩বছর আগেই হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ৫০গজের মধ্যেই নির্বিঘ্নে চলছে হাসপাতালটি। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন ভিত্তিক দালালদের মাধ্যমে সল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসার চমকপ্রদ প্রচার প্রচারণায় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নানা অজুহাতে পকেট কাটা হয় দেদারসে। এছাড়া হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারের পরিবেশ এবং প্যাথলজি কক্ষের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

হাসপাতালে গিয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার বা তার সহযোগীদের পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

স্থানীয় সূত্র জানায় ডাক্তার সাইফুল ইসলাম এর কোন ডাক্তারী সনদপত্র নাই। তিনি দীর্ঘদিন তরে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এসমস্ত ভুল চিকিৎসা অস্ত্রোপচার করে আসছে।
এব্যপারে ডাক্তার মোঃ সাইফুল ইসলাম কে মোঠো ফোনে সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে ফোনে পাওয়া গেলে তিনি কোন ভুল চিকিৎসা অস্ত্রোপচার করেনি। রোগীর জরায়ুর সমস্যা ছিল এ কারনে কাটা পড়তে পারে। অপারেশন এর পূর্বে রোগীর অভিভাবক থেকে লিখিত নিয়েছি তা স্বাক্ষর আছে।অপারেশন এর ৩ -৪ ঘন্টা পর রোগীর মৃত্যু হয়েছে এর জন্য দায়ী আমি না। তা ডাক্তারী সনদপত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মা ও শিশু বিষয়ে  ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি এস পাস করেছেন।
অপর দিকে  হাসপাতাল ম্যানেজার খন্দকার মোস্তাক আহমেদ জানান, তিনি গতকাল হাসপাতালে ছিলেন না। ডাঃ সাইফুল হাসপাতালের পার্মানেন্ট ডাক্তার নয়। কেবলমাত্র অপারেশন বা সিজারের প্রয়োজন হলে অপারেশনের জন্য চুক্তিতে তাকে আনা হয়। গতাকাল একজন প্রসূতি সিজারের পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরন করেছেন বলে সোমবার সকালে জানতে পেরেছেন বলে স্বীকার করেন। আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে এখনো তা নবায়ন করা হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।

এবিষয়ে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পরিচালক ডাক্তার মীর হোসেন মিঠু জানান, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা আমি সহ কয়েকজন ডাক্তার সোমবার সকালে হাসপাতালটি পরিদর্শনে যাই।   জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে বলে জেনেছি। প্রসূতির চিকিৎসার ফাইলটি চেক করা হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হালিমা খাতুন জানান, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১১-১০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ