স্বাধীনতা দিবসে অতিথি যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, নাঙ্গলকোটে সমালোচনার ঝড়!

সিটিভি নিউজ।।     বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মশতবর্ষে স্বাধীনতা রজব জয়ন্তীতে ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান শামসুদ্দিন কালু। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক মহল সহ এলাকায় চলছে সমালোচনার ঝড়। মহান ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন কালু অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় সর্বত্র সমালোচনা।  উল্লেখ্য কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী হাজী আকবর আলী। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা, জেলও খেটেছেন দীর্ঘদিন। বৃহত্তর (কুমিল্লা, ভ্রামণবাড়িয়া,চাঁদপুর) যুদ্ধাপরাধীদের দলিলপত্রসহ বিভিন্ন উপজেলার যুদ্ধাপরাধীদের তথ্যদী নিয়ে আবুল কাশেম হৃদয় “অপারেশন কিল এন্ড বার্ন” নামে একটা বই লিখেছেন। যাতে ১৬৯ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখিত রাষ্ট্র বাদী হয়ে কোলাবরেটর স্পেশাল ট্রাইব্যাল নং ১৭৭/৭২, লাকসাম থানাধীন মামলা নং ১৮, তাং- ১৭/০২/৭২ইং হাজী আকবর আলী এজাহার ভুক্ত আসামী। সেই যুদ্ধাপরাধীর সন্তান নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন কালু। রাজাকারের সন্তান হয়েও সে(কালু) উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্ণধর হয়ে আছেন। রাজনৈতিক জীবনে শামসুদ্দিন কালু ছিলেন জাতীয়পার্টির সমর্থিত। দ্বায়িত্বে ছিলেন জাতীয়পার্টির উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাঙ্গলকোটের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় মানুষের ভোট ভাত রক্ষার আন্দোলনে ১৯৮৭ সালে ২৬শে অক্টোবর জননেত্রী শেখ হাসিনা কতৃক উপজেলা ঘেরাও আন্দোলনে কালুর প্ররোচনায় যুবলীগ কর্মী হামিদকে হত্যা করা হয়। আজকের প্রধানমন্ত্রী হামিদের বাড়িতে যান এবং তাদের খোঁজ খবর রাখেন। সৈরাচার আন্দোলন পতনের পর বিএনপি রাজনীতি সমর্থনেও করেছেন নিজেকে সু-পরিচিত। ১৯৯২ সালে বিএনপির সাথে হাতেহাত মিলিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগের চত্র-ছায়ায় পুনরায় ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পল্টিবাজির ভেলকিবাজিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯৯৯সালে যোগদান করেন আওয়ামী লীগ-এ। শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়ের চক্র উন্মোচন। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। এতেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। হয়েছেন পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী পরিবারের নানান গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী ও দ্বায়িত্বে। একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হয়েও বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মশতবর্ষে স্বাধীনতা রজব জয়ন্তীতে স্বাধীনতা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আসন গ্রহণ করে তা সত্যিই মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য কলঙ্কের সহিত অতি দুঃখের। এবিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা মুক্তিযুদ্ধাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন- যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় হাজী আকবর আলীর নাম আছে। এর বাহিরে আর কোন মন্তব্য করতে চাই না। রাজনৈতিক প্রাঙ্গণেও ভিন্ন পরিক্রমা বিদ্যমান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম(রফিক চেয়ারম্যান) বলেন- বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে দল আওয়ামী লীগ। আমাদের দলে কোন যুদ্ধাপরাধীর কিংবা তার সন্তানের ঠাই নাই। কালু যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এবিষয়ে অধ্যক্ষ আবু ইউছুফ বলেন যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় হাজী আকবর আলীর নাম আছে, তবে- কোন মন্তব্য করবো না। আপনারা যেটা সত্যি, সেটা লেখেন। নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- হাজী আকবর আলী তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী, তালিকা আমিও দেখেছি। একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান আমাদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের নানান গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আওয়ামী পরিবারের জন্য তা নিতান্তই লজ্জাজনক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুক্তিযুদ্ধা বলেন- হাজী আকবর আলীর পরিবারের একাধিক সদস্য মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। যুদ্ধের সময় আকবর আলী পাক হানাদার বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর-বাড়ি চিনিয়ে দিতো। পরে তার দেখানো ঘর-বাড়ি পাকবাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতো। পরিচয় গোপনীয়তা শর্তে মুক্তিযুদ্ধার সন্তান বলেন- আমরা মুক্তিযুদ্ধা সন্তান পরিচয় দিতে লজ্জা পাই, যখন আমাদের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হয়েও আমাদের হাতে সম্মাননা বা ক্রেষ্ট প্রদান করে। জানা গেছে, রাজাকার হাজী আকবর আলীর সন্তান শামসুদ্দিন কালু। তিনি নিজেকে আওয়ামী পরিবারের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজত্ব করে যাচ্ছেন। স্বাধীনতাবিরোধী আকবর আলী যুদ্ধাপরাধীর ছেলে শামসুদ্দিন কালু মুজিব কোট গায়ে জড়িয়ে রাজনীতি করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীরা এবিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে না পারলেও পরোক্ষভাবে এমন ঘৃণ্য ও নেক্কারজনক কলঙ্কের অবসান চায়। সামসুদ্দিন কালু স্বীকার করেন বলেন, উনার পিতা শান্তি কমিটির সদস্য হলেও কারো ক্ষতি করেননি।কিন্তু রাজাকার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করত শান্তি কমিটি ।একাত্তরের এপ্রিল মাসে বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে নির্মূলের অভিযানে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য ‘সহযোগী সংগঠন’ হিসেবে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। শান্তি কমিটি পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করত। ‘রাজাকার বাহিনী সাধারণভাবে শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন ছিল। প্রতিটি রাজাকার ব্যাচ “ট্রেনিং” গ্রহণের পর শান্তি কমিটির স্থানীয় প্রধান তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করত। এই অনুষ্ঠানে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান রাজাকাররা কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করত। এরপর রাজাকারদের “কুচকাওয়াজে” শান্তি কমিটির প্রধান সালাম গ্রহণ করত।…তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় গ্রামে-গঞ্জে অত্যাচার, নির্যাতন এবং সামরিক বাহিনীর অগ্রবর্তী পথপ্রদর্শক।’ ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল দৈনিক পাকিস্তান-এ প্রকাশিত ‘শান্তি কমিটির আহ্বায়কের বিবৃতি: সশস্ত্র  পাকবাহিনীকে সাহায্য করার আহ্বান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই যাবে, সেখানে পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করবে শান্তি কমিটি।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১০-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ