রূপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস দুর্নীতির আখড়া : গ্রাহকরা হয়রানির শিকার

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পল্লী বিদ্যুতের পূর্বাচল জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংযোগ থেকে শুরু করে মিটার স্থাপন, বিদ্যুতের খুঁটি সরানো, ট্রান্সফরমার পরিবর্তনসহ প্রতিটি সেবার জন্য গ্রাহকদের পদে পদে ঘুষ গুনতে হচ্ছে। অফিসের উপ-ব্যবস্থাপক লাবিবুল বাশার নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর লোক পরিচয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিজের কক্ষে কাজ ফেলে রেখে পাশের কক্ষের দুই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে প্রায় খোশগল্পে তিনি মেতে থাকেন বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।
ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না এ অফিসে। আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারী, লাইনম্যান ও ঠিকাদার থেকে শুরু করে টপ টু বটম সবাই ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত। তাদের সঙ্গে রয়েছে সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় দালাল। উপ-ব্যবস্থাপক ও কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাজার হাজার গ্রাহক ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। তাদের অপসারণ করা না হলে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা চনপাড়া-দাউদপুর সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচীর আলটিমেটাল দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এ উপ-ব্যবস্থাপক যোগদানের পর থেকে জরিমানা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। অবৈধ সংযোগের অভিযোগ তুলে ইচ্ছামাফিক জরিমানা প্রদান করে নোটিশ প্রদান করেন। এ জোনের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ডিপিডিসির আওতাধীন ছিলো। বছরখানেক আগে এসব এলাকাগুলোকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় আনা হয়। তখন এসব এলাকার গ্রাহকদের মিটার দিতে গড়িমসি করা হয়। আর এ গড়িমসির খেসারত গুনেন সাধারণ গ্রাহকরা। তালাশকুর, কামশাইর, কায়েতপাড়া, চাঁনখালী গ্রামের ডিপিডিসির শত শত গ্রাহক লাবিবুল বাশারের জরিমানা বাণিজ্যের শিকার হন।
অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি কথায় কথায় নিজেকে অমুকের লোক, তমুকের লোক পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হুমকি দেন। অফিসের এক নারী কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, স্যার নিজের কক্ষের কাজ ফেলে রেখে পাশের কক্ষের দুই নারীর সামনে বসে সময় কাটান। তার ভয়ে এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করেন না। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ছাড়া লাবিবুল বাশার কোনো সেবা দিতে চান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, পূর্বাচল উপশহরে শত শত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এসবের কোনটিরই মিটার নেই। মাস শেষে মাসোহারার বিনিময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কথা হয় দেইলপাড়া এলাকার মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে তার ভাইয়ের জমির পাশের পোল সরানোর জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয়েছে। অফিসে গেলেই তিনি খারাপ আচরণ করতেন। বাগবাড়ী এলাকার কামাল আহম্মেদ বলেন, আমি ওনার কাজে একটা কাজে গেলে কোন কারণ ছাড়াই নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক বলে পরিচয় দেন। এড়াও বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকজনের পরিচয় দিয়ে সেবা নিতে আসা লোকজনকে ধমক দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জ জোনাল অফিসে ১৪ জনের দালাল সিন্ডেকেট গড়ে উঠেছে। এ দালালদের কাছে জোনাল অফিসের আওতাধীন রূপগঞ্জ সদর ও কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ২৫হাজার গ্রাহক জিম্মি হয়ে পড়েছে। লাইনম্যান জাকির হোসেন শত শত মানুষের কাছ থেকে নতুন মিটার দেওয়ার নাম করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি মিটার বাবদ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আদায় করছে। তারপরও নতুন মিটার সংযোগ পেতে গ্রাহককে অপেক্ষায় থাকতে হয় মাসের পর মাস। এরপরও চলে নানা অজুহাত। গ্রাহকের বৈধ সংযোগ থেকেই অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে উপশহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও শিল্প কারখানায়। সেখান থেকেও তারা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকরা অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছে না। জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা।
অভিযুক্ত জেনারেল ম্যানেজার লাবিবুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়গুলো আমার জানা নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে ব্যবস্থা নিবো। প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয়ের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোথাও এমন কথা বলিনি।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৫-০২-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email