“ইকরামুল মুসলিমীন” একটি সংগঠন কেবল একটি কাজের জন্য জন্ম নেয় না_______মোয়াজ্জেম চৌধুরী 

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন
সিটিভি নিউজ।। মুক্তকলামঃ      সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করার জন্য অর্থের চেয়ে বড় মনের প্রয়োজনটাই বেশি। আর যাদের মধ্যে ভাল মনের স্থায়িত্ব রয়েছে তারাই মৃত্যু অবধি কাজ করে যাবে সমাজ ও মানুষের জন্য। ঠিকে থাকবে তাদের কর্ম, ইতিহাসে থাকবে তাদের নাম।
এরকমই কর্মের মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাওয়া মানুষদের কর্ম নিয়ে আজকের লেখা। এই লেখা কেউ পড়বে, কেউবা ভালবাসার অংশ হিসেবে স্মৃতিতে স্থান করে নিবে।
বহুকাল ধরে মানব সমাজের জন্য কাজ করে আসছে ব্যক্তি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সামাজিক সংগঠন তৈরি করে সমষ্টিগত ভাবে। যার বিপ্লব ও প্রচার প্রসার ঘটেছে সারাবিশ্বে ২০১৯ইং সালে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে।
এরই মধ্যে নিজের চোখে দেখা ব্যক্তি ও সংগঠন বেশ অনেক গুলো। এসব মানবিক কাজ গুলোকে ভালবাসি ছোট বেলা থেকে। এসব কাজের সাথে সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা কিশোর বয়স থেকে। যাই হোক যা বলছিলাম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াতে সামাজিক সংগঠনের কাজ গুলো।
মৌলভীবাজার জেলায় করোনা মহামারী শুরু থেকে আজ অবধি অনেক সংগঠনের কাজ দেখেছি, যার মধ্যে একজন আলেমের উদ্যোগ, অতঃপর সংগঠনে পরিণত করে জেলার সর্বত্র, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ কারীদের দাফন কাফন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, চিকিৎসা, মাস্ক বিতরণ তথা সচেতনতা মূলক কর্মকাণ্ড। এতেই কি সীমাবদ্ধ। না। কয়েক টি কাজের কথা না লিখলে মনে তৃপ্তি পাবো না। কেননা এই লেখাটা আমার পেশা নয় নেশা।
একটি- ২০২১ইং হঠাৎ কল আসলো ঐ সংগঠনটির একজন দায়িত্বশীলের ভাই তুমি কোথায় আছো?  আমার অবস্থান জানালাম, এবং জানানো হলো গতকাল রাতে মৌলভীবাজারের শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোক নিহত হয়েছে। লোকটির লাশ উদ্ধার করে আমরা নিয়ে আসছি দাফন কাফন করবো বলে। আমরা মৌলভীবাজার পৌরসভায় আসতেছি। আমিও পৌঁছালাম এবং তাদের সাথে সম্পৃক্ত হলাম সেই কাজে।
পৌরসভার দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা সেই লাশটি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখতে বলা হলো। লাশটির কোন পরিচয় না থাকায় লাশটি পৌরসভা কতৃক দাফন করা হবে। লাশের জন্য সাদা কাফনের কাপড়ের ব্যাগটি আমার হাতেই ছিল। যা সংগঠনটি নিয়ে এসেছে লোকটিকে পড়াবে বলে।
কাফনের কাপড়ের ব্যাগসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র গুলো পৌরসভার জৈনক কর্মচারীর নিকট সমজিয়ে দেয়া হলো।
লাশটি দাফন ঐদিন হবে না, তাই লাশটি নিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখতে গেলাম সংগঠনের ৩-৪জন সদস্য এবং শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত কনস্টেবল।
টাকা ছাড়া হয় না কোন কাজ?  হাসপাতালের মর্গে রাখতে গেলে সেখানে থাকা লোকটি বলে উঠলো টাকা দিলে রাখবে না হলে রাখবে না। লোকটির উপর মেজাজটা গরম হলো তাও অন্যায় সহ্য হয় না বলে।
যাই হোক সংগঠনের লোকজন ৩/৪শ টাকা দিল তারপর লাশটি আমিসহ ৪জন মিলে মর্গের ভিতরে লাশ কাটার ঘরে রেখে আসলাম। পৌরসভার লোকজন পরবর্তীতে দাফন করবে বলে।
এই ঘটনাটি লেখার কারণ – এই লোকটি কোন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নি। মারা গিয়েছিল সড়ক দুর্ঘটনায়। একটি সংগঠন কেবল একটি কাজের জন্য জন্ম নেয় না।
দ্বিতীয় – ঐ একই সূত্রে, হঠাৎ করে কল আসলো তখন দুপুর আমি বাসায়। ঐ সংগঠনে কাজ করে যাওয়া দায়িত্বশীল বললেন রাজনগর উপজেলার একটি বাগান এলাকায় একজন লোক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। অন্যরা গিয়েছে চলো আমরাও যাই তাদের সহযোগিতা করতে। না খেয়েই রওয়ানা দিলাম উনার সাথে সিএনজি যোগে। রওয়ানা দিয়ে চৌমুহনায় একটি ঘটনা একজন পুলিশ এবং একজন যুবকের ঘটনা পরবর্তীতে একসময় লিখবো বেঁচে থাকলে।
যাই হোক রাজনগর উপজেলার একটি বাগান এলাকায় পৌছালাম। গিয়ে যা দেখলাম, যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন উনি একজন সনাতনধর্মের (হিন্দু) লোক। যারা লোকটির দাহ করার জন্য সেখানে উপস্থিত সবাই মুসলিম। দাহ করার জন্য সব কিছু প্রস্তুত আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হলো ধীরে ধীরে লাশটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল। দাহ কাজ সম্পন্ন হলো।
ঘটনাটি লেখার কারণ – মানবতার কাজ করার জন্য কখনো ধর্ম আসেনা। হিন্দু বা অন্য ধর্মের লোকও কাজ করতে ইচ্ছে করে তখন শুধু তার ধর্মের লোক খুঁজে না। তেমনিভাবেই মুসলিম আলেমও আর মানবতাবাদীরাও জাত ধর্ম খুজে না। জাত দেখে মানব কাজ হয় না।
তৃতীয় – করোনায় চারিদিকে যখন মানুষের নিরব দুর্ভিক্ষের আর্তনাদের একটি ঘটনা। পরিচিত এক পরিবহন শ্রমিক ভাই জানালো, গত দুদিন ধরে তার পরিবারে খাবার জুটেনি। তখন কোন উপায় না দেখে (কারন আমার নিজের সামর্থ্য নেই কিছু করার) ঐ সংগঠনটির প্রধান দায়িত্বশীলকে কল করে জানালাম বিষয়টি। বলতেই জানালেন ঠিক আছে মোয়াজ্জেম ভাই আমি আসতেছি। সিএনজি করে আরো দুজনসহ আমার কাছে আসলেন ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রথমে লোকটির পরিবারের জন্য কিছু চাল ডালসহ দু-তিন দিনের খাবারগুলো কিনে আমিসহ লোকটির বাসায় গেলাম। খাবার হাতে দিলেন, এবং লোকটির কর্ম বন্ধ থাকায় সংগঠনে ব্যবহৃত সিএনজি যোগে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হলো।
ঘটনা নিয়ে লেখার কারণ – সংগঠন তৈরি করে সমষ্টিগত ভাবে শুধু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ কারীদের লাশ দাফন করা নয়। একটি সংগঠন কেবল একটি কাজের জন্য জন্ম নেয় না।
চতুর্থ – সংগঠনটি মানবতা কাজের যাত্রা শুরু থেকে ঐ আলেমের সঙ্গ নেয়। একজন সিএনজি চালক মানবসেবার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ এলাকার রাস্তা সংস্কার, মসজিদের অজুখানা তৈরি, এলাকার আলো ছড়াতে যেমন বৈদ্যুতিক বাতি লাগাচ্ছে তেমনি শিক্ষার আলো ছড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
ঘটনাটি লেখার কারণ – যাত্রা শুরু হয়েছিল করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে অথচ এখন কাজ করছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। একজনের কাজে অন্যজন অনুপ্রাণিত হয়। একটি সংগঠন কেবল একটি কাজের জন্য জন্ম নেয় না।
পঞ্চম – করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সংগঠনটি এখন একটি এতিমখানা ও বিনামূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। যেখানে বেশ কিছু এতিম বাচ্চাদের ইসলামি শিক্ষা ও দেশীয় মৌলিক শিক্ষা এবং  খাবার দাবারের ব্যবস্থা করেছে।
ঘটনাটি লেখার কারণ – উদ্দেশ্য যদি সৎ চিন্তা ভাবনা নিয়ে কোন কাজ শুরু করা হয় তাহলে সেটা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একটি জায়গায় আর সীমাবদ্ধ থাকে না। একটি সংগঠন কেবল একটি কাজের জন্য জন্ম নেয় না।
ষষ্ঠ – কোন কাজ পুরুষের একার পক্ষে সম্ভব হয় না।  এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। নারী পুরুষের অংশীদারত্বের অবদান এই মানবতার কর্মযজ্ঞ। মানুষের অধিকার নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে তারা, এদের একজন সত্য ন্যায় কথা লিখে যাচ্ছেন অবিরত।
এতক্ষণ যে সংগঠনটির কথা লিখলাম সেই সংগঠনটি হলো ইকরামু মুসলিমীন মৌলভীবাজার।
লেখা গুলোতে কারো নাম লিখলাম না। কারণ এই লেখা শেষ নয় কেবল শুরু বলতে পারেন। শেষাংশে আজকের লেখার কারন রয়েছে। এর পূর্বে আরেকটু লিখছি, মৌলভীবাজার জেলায় করোনা ভাইরাস সূত্র ধরে অনেক সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে, তাছাড়া রয়েছে অসংখ্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা কাজ করছে মানব সেবায়। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আবার তাদের প্রতি তিরস্কার করা ছাড়া কিছু নেই যারা মানবতার জয় গান গেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন।
এ-ও যে না বললে না হয় এই লেখায় ভাল কাজের প্রশংসা রয়েছে। কারণ ভাল কাজের জন্য সবাই প্রশংসিত। ঠিক তেমনি মন্দ কাজের জন্য সবাই নিন্দনীয়। – ধন্যবাদ
একটি সংগঠন, পাঁচটি ঘটনা, ঘটনার কারণ, কথা গুলো লেখার কারণ  – একটি ছবি আমার হাতে সাদা কাফনের কাপড়ের ব্যাগ।
উপলব্ধি – এই কাফনের কাপড় পড়ে একদিন আমাকেও এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। ব্যাগে করে সাদা কাফনের কাপড় আসবে ঠিক তবে অন্য কারো হাতে।
“ইকরামুল মুসলিমীন” মৌলভীবাজার সহ প্রতিটি সংগঠন কাজ করে যাক সমাজ ও মানুষের জন্য। এই কামনা
মানবতার জয় হোক
লেখক

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী।সংবাদ প্রকাশঃ  ২৭-০১-২০২২ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email