তনু হত্যার সাড়ে ৯ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, বিচার চেয়ে ড. ইউনূসের কাছে আকুতি পরিবারের

সিটিভি নিউজ।। বিল্লাল হোসেন, মুরাদনগর (কুমিল্লা) থেকে ঃ ===============
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের সাড়ে নয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অধরা রয়ে গেছে অপরাধীরা। দীর্ঘসূত্রতায় বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও রহস্যের কিনারা হয়নি। এর মাঝেই, মামলার ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পিবিআই পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোন প্রকার অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে তনুর পরিবার এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানা যায়, তনু হত্যাকারের পর দুটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ও ১২ জুনের দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। তবে, ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন জন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পরও রহস্যের জট খোলেনি। সিআইডি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল।
আলোচিত এই মামলাটি শুরু থেকেই দীর্ঘসূত্রতার শিকার। মামলার পর থেকেই তদন্ত শুরু করেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ থেকে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মনজুর আলম। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে সিআইডি কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট থেকে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ। তিনি দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় তদন্ত করেন। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মজিবুর রহমান। পিবিআই তিনবার বাদীপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও ২০২০ সালের নভেম্বরের পর আর যোগাযোগ করেনি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয় এবং দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআই ঢাকার আরেক পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে। দায়িত্বভার গ্রহণের প্রায় সাত মাস পর গত ৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে পিবিআইয়ের একটি টিম নিয়ে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, দ্রæততম সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তার কথার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন প্রকার অগ্রগতি নেই।
মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বিচার না পাওয়ার পেছনে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘এতদিন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা চায়নি এ মামলার বিচার হোক। এখন আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে বিচার চাই।’ তিনি আরও আক্ষেপ করেন যে, ‘যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বের হতো, তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না।’ অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত সাড়ে ৯ বছরে মামলার অগ্রগতি বলতে শুধুই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন। আমরা এসব নাটক আর দেখতে চাই না। খুনিদের বিচার চাই।’ তিনি হতাশার সুরে আরও বলেন, ‘৯ বছর যারা মামলা তদন্ত করার নামে কালক্ষেপন করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। তারা মামলা নষ্ট করে দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, পিবিআই ঢাকায় বসে তাদের ডেকে উল্টো হয়রানি করেছে। ‘আমরা গরিব বলে মেয়ে হত্যার বিচার পাব না। এ হত্যাকারীদের বিচার যদি দুনিয়ায় না হয়, আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আল্লাহর বিচার বড় বিচার।’
২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করাতে গিয়ে আর ফেরেননি নাট্যকর্মী তনু। পরে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের অদূরে ঝোঁপের মধ্যে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। পরদিন তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। সংবাদ প্রকাশঃ ১৮-১১-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=