Thursday, November 21, 2024
spot_img
More

    কাজ নেবেন কাজ মুরাদনগরে ভোর হলেই শুরু হয় মানুষ বেচাকেনা

    সিটিভি নিউজ।। আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
    কাজ নেবেন কাজ শ্রমিকরা হাকডাক করছে। ছেঁড়া চটি, লুঙ্গি, শার্ট, টি-শার্ট, পুরোনো প্যান্ট পরে, গলা ও কোমরে গামছা বাঁধা হাতে কোঁদাল কাঁচি ভেলচা ওড়া ও দঁড়ি নিয়ে কাজ পেতেই ঘুম চোখ নিয়ে নিজেদের তুলেছেন হাটে। এ হাটে নেই কোনো পণ্য। এখানে পণ্যের মত বিক্রি হয় শ্রম। আছে মানুষের দেহের ঘামের দূরগন্ধ। ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ বা মাসিক চুক্তিতে বেতন নেন শ্রমিকরা।
    ভোরের আলো ফুটেছে, বেশিরভাগ মানুষ তখনও ঘুমিয়ে রয়েছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কয়েকটি এলাকা লোকজনের কোলাহলে সরগরম হয়ে উঠেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে সেখানে হাট বসেছে। এ হাটে নেই কোনো পণ্য। এখানে পণ্যের মত বিক্রি হয় শ্রম।

    এদেশের বিভিন্ন জেলার উপজেলা গ্রাম থেকে উঠে আসা নিম্ন আয়ের মানুষ এসব হাটে এসে শ্রম বিক্রির করছে। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা, মুরাদনগর, কোম্পানীগঞ্জ বাজার,নবীপুর চৌরাস্তায়, নহল চৌরাস্তায় রামচন্দ্রপুর বাজার, বাঙ্গরা বাজার, যাত্রাপুর বাজারসহ ১০টি স্থানে মানুষের হাট বসে।
    কোম্পানীগঞ্জ ও রামচন্দ্রপুর বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গোমতীনদী ও তিতাস নদীর পাশে সড়কে প্রায় তিনশ মিটার এলাকা জুড়ে বসেছে ‘মানুষের হাট’। শ্রমিকরা কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করছেন। খদ্দের আসছে দেখলেই শ্রমিকরা জড়ো হন। আবার অনেক শ্রমিক কাজে নেবেন কাজে বলেও ডাকতে থাকেন।
    মুরাদনগরে শ্রম বিক্রি করতে আসা বেশিরভাগের বাড়ি দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলায়। তাদের অধিকাংশই ইট ভাটায় শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, গরুর খামার, গৃহস্থালি,কৃষি জমি আগাছা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ধান রোপণ ও কাটার সময় মুরাদনগরে প্রতিদিন শত শত শ্রমিক শ্রম বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। অন্য সময়ে ২ থেকে ৩ হাজার, যাদের বেশিরভাগই নির্মাণ কাজ করেন বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (চাপাই) থেকে আসা শ্রমিক সুমন (২৫) জানান।
    বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ শ্রমিক রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন জানিয়ে নাছির উদ্দিন (২৪) বলেন, আমার পরিবারের মা-বাবা স্ত্রী, পুত্র,কন্যাসহ ছয়জন সদস্য। দৈনিক ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হন নির্মাণ ও কৃষি শ্রমিকরা। দৈনিক ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা চুক্তিতে বিক্রি হন গৃহস্থালির শ্রমিকরা। মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতেও অনেকে কাজ করেন। কাজ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক বেতন নেন কিছু শ্রমিক। এলাকায় যে কাজ আছে তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই এখানে এসেছি। যদিও প্রতিদিন কাজ পাই না,সপ্তাহে ২/১ দিন খালি হাতে ফিরতে হয়।
    শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোরে হাটে এসেও সকাল ৭টার মধ্যে যারা শ্রম বিক্রি করতে পারেন না, তাদেরই ফিরতে হয় শূন্য হাতে। শ্রমিকদের কেউ কেউ আসেন দুই-এক মাসের জন্য। থাকার সুবিধা কিংবা ভালো কোনো কাজ পেলে থেকে যান বছরের পর বছর। আবার টানা কয়েকদিন কাজ না পেলে অনেকে এক হাট থেকে অন্য হাটে জায়গা বদল করেন।
    শ্রমিকরা হাটে আসার জন্য দলে দলে ছোটেন ছেঁড়া চটি, লুঙ্গি, শার্ট, টি-শার্ট ও পুরোনো প্যান্ট পরে, গলা ও কোমরে গামছা বাঁধা হাতে দঁড়ি কাঁচি থাকে। পোশাক যেমনই হোক তাতে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। সন্তান ও পরিবারের লোকজন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই কাজ। আর এ কাজ পেতেই ঘুম চোখ নিয়ে চলে তাদের লড়াই।
    ঠাকুরগাঁও থেকে আসা একটি শ্রমিক দলের প্রধান আবদুল কবির হোসেন (৩৬) জানান, কুমিল্লা জেলা বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ শ্রম বিক্রি করে। তাদের দলে ৪০ জন রয়েছে, একটি ইট ভাটা বস্তিতে একসঙ্গে থাকেন তারা।
    গাইবান্ধার রহিম মিয়া (৩৫) সংসারের চাকা ঘুরে গৃহস্থালি আর কৃষি জমি কাজ করে। মাসে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকা রোজগার করেন বলে জানান এ শ্রমিক। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী, পঞ্চম ও অস্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মেয়ে আছে। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে অর্ধেকের বেশি খরচ হয়ে যায় কুমিল্লায়। বাকিটা বাড়িতে পাঠাই।
    দিনাজপুরের শ্রমিক রব্বান মিয়া বলেন, আমরা কাজ না পেলে অনেক কষ্টে দিন পার করি। অনেক সময় না খেয়েও থাকি। আর পরিবারের জন্য তো কিছু পাঠাতেই পারি না। কোম্পানীগঞ্জ বাজারে কথা হয় কুড়িগ্রাম জেলা রৌমারী উপজেলা বন্দবেড় ইউনিয়নের বাসিন্দা মনু মিয়ার সঙ্গে। আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ার কারণে কাজের আশায় কুমিল্লায় এসেছেন বলে ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ জানান। কোনো কোনো দিন কাজ পান, আবার কোনো দিন তাকেও খালি হাতে ফিরতে হয়।
    ওই উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে দুই বছর ধরে শ্রম বিক্রি করেন নীলফামারী সফি মিয়া (৩২) বলেন, যারা কাজের জন্য নিয়ে যান, তারা লোক ভালো হলে থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হয় না। আবার অনেকে আছে, যারা আমাদের মানুষই মনে করেন না।
    সোহেল মিয়া (২৯) বলেন, শ্রমিক দরকার তাই ভোরেই চলে এসেছি। স্থানীয় শ্রমিকদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে এখানে লোক পাওয়া যায়, তারা কাজেও বেশ আন্তরিক। তাই বেশিরভাগ মানুষই এখানে শ্রমিক নিতে আসেন।
    কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কাজের চাহিদা বেশি থাকে। এই সময় তারা মুরাদনগর উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের আশপাশের গ্রামে গ্রামের বাসা ভাড়া করে অস্থায়ী বসতি করে থাকেন। সংবাদ প্রকাশঃ ২৪-৬-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments