মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভনে ঝর্ণাকে ধর্ষণের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জে এসপির সংবাদ সম্মেলন
হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব

সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভনে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে ধর্ষণ করেছে তার সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। রবিবার (৬ জুন) বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। তিনি বলেন, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সেই মামলায় জান্নাত আরা ঝর্ণা যে বক্তব্য দিয়েছে আমরা সেই বক্তব্যর সাথে আমরা তাকে (মামুনুলকে) জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পেয়েছি। যদিও বিচারাধীন বিষয়। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। নাশকতা ও ধর্ষণের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের দুই থানায় দায়েরকৃত পৃথক ছয় মামলায় রিমান্ড শেষে রবিবার (৬ জুন) বিকাল ৩ টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। এসময় উপস্থিত ছিলেন পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ জেলা পুলিশ কর্মকতাবৃন্দ।
এসপি জানান, বিয়ের সাক্ষী, কাবিননামা দেনমোহর এমন কি কোন লিখিত কিছুই মামুনুল হকের কাছে নেই। তার একাধিক বাড়িঘর ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে যার কোন আয়ের উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। প্রতিমাসে সে এক কোটি টাকা অনুদান পেত। ধারণা করা হচ্ছে সেই অনুদানের টাকা দিয়েই সে বাড়িঘর করেছে। গত ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ , প্রতারণা, নির্যাতনের অভিযোগ এনে সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। সোনারগাঁ থানায় মামলা নং ৩০ (৩০/০৪/২১)। মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও দায়ের করা মামলায় জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলেননি।
মামলার এজাহারে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, আমার সাবেক স্বামী মাওলানা শহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায় ২০০৫ সালে মামুনুল হকের সাথে আমার পরিচয় হয়। মামুনুল হকের সাথে আমার পরিচয় হওয়ার পূর্বে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল। যার ফলে আমাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্ম হয় (আব্দুর রহমান, মো: তামিম)। মামুনুল হক আমাদের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতেন। আমার উপর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। আমাদের স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরী করতে থাকে তিনি। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট আমার স্বামীর সাথে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে রাতযাপন করেন।
অভিযোগে জান্নাত বলেন, বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তাঁর অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তাঁর প্রলোভনে পা দেই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পারলারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’
জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক আমাকে নিয়ে যান। রিসোর্টের ৫ম তলার ৫০১ নং কক্ষে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামুনুল হক আমাকে ধর্ষণ করে। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। তারা আমাদের পরিচয় জানতে চায়। ভালো উত্তর দিতে না পারায় আমরা স্থানীয় জনগণের রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের (কলাবাগান) বাসায় ফিরতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আমাকে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।
জান্নাত বলেন, পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়। এদিকে সাংবাদিকদের ঝর্ণা বলেন , আমরা সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে অন্যায় করেছে, প্রতারণা করেছে। আমি রাষ্ট্রের কাছে এটার (মামুনুলের) সুষ্ঠু বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল মামুনুল হকের সমথকরা সোনারগাঁ রিসোর্টে এবং যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর করে। মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার সমর্থকরা। এঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হককে আসামি করে একাধিক মামলা হয়েছে। সে মামলায় পলাতক ছিলেন মামুনুল হক। রির্সোট বুকিংয়ে মামুনুল হক তার প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বার নাম লেখেন। প্রথম স্ত্রীর সাথে তার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ফোনালাপে তিনি ঝর্ণাকে শহিদুলের স্ত্রী বলে জানান।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৬২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ