করোনার টিকা গ্রহণে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে আনসার বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন
সিটিভি নিউজ ।।    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে টিকা গ্রহণে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং আনসার ভিডিপির প্রতিটি সদস্যকে অনুরোধ করবো প্রতিটি মানুষ যাতে এই টিকাটা নেয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ভয় পায়, সুই ফোঁটাতেও ভয় পায়, কাজেই তারা যেন রোগাক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপটা নিয়েছি এবং সেখানে আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আপনারাও গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন যেন, এই মাহামারী, যেটা আজকে সমগ্র বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে, তার হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষ যেন মুক্তি পেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪১ তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের সফিপুর আনসার ও ভিডিপি একাডেমির সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, টিকাদানের জন্য তাঁর সরকার যেসব ডিজিটাল সেন্টার করেছে সেখানে গিয়েই সকলে নিবন্ধন করতে পারবেন। সেখানে গিয়ে নিজে এবং পরিবারের সকলে যেন টিকা নেয় তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত আনসার বাহিনীর মোট ১৯ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা সুরক্ষিত থাকেন এবং টিকা নিয়ে নিজেদের আরো সুরক্ষিত করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেটাও আমরা চাই।’
অনুষ্ঠান থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আসনার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ১৪০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যকে সাহসিকতা ও বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রদান করা হয়।
বাল্যবিবাহ রোধ কল্পে আনসার সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে ভাষণে এটি অব্যাহত রাখার ও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একটি কাজ আপনারা করে যাচ্ছেন সেটা হচ্ছে বাল্য বিবাহ রোধ করা। যেটি আপনাদের করে যেতে হবে।’
সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে
সরকার প্রধান বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদে যেন আমাদের দেশের যুব সমাজ সম্পৃক্ত না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা আপনারা রেখে যাচ্ছেন এবং এটা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ ব্যাপক কর্মসূচি আপনারাদের পালন করে যেতে হবে। ‘যাতে ছেলে-মেয়েরা বিপথে না যায়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের যুব সমাজের কর্মসংস্থান তৈরিতে এ বাহিনী সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
বিশেষ করে জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারীর ক্ষমতায়নে এ বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। সুবিশাল এ বাহিনীর অর্ধেক সদস্যই নারী। সমঅধিকারের ভিত্তিতে তাদের বিনামূল্যে আয়-বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত ‘আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক’ দেশব্যাপী ২৫৯টি শাখার মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ঋণ প্রদান করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক হতে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহপূর্বক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার জন্য ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা এ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে এবং তারা প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা খরচও করেছেন।
তিনি বলেন, এখান থেকে ৫ শতাংশ সুদে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত তাঁরা ঋণ নিতে পারেন।
আনসার ও ভিডিপি’র সদস্যরা বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার অগ্নিসন্ত্রাসের সময়ও তাঁদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় সারাদেশে জান-মাল ও রেল রক্ষায় আনসার বাহিনীকে সম্পৃক্ত করেছিলেন এবং তাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অগ্নি সন্ত্রাস মোকাবেলা করেছেন, সেজন্য তিনি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তাঁর সরকারের মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শ্লোগান-‘মুজিববর্ষের উদ্দীপন, আনসার ও ভিডিপি আছে সারাক্ষণ’ সময়োপযোগী হয়েছে। বাহিনীর সদর দপ্তর, একাডেমি, রেঞ্জ, ব্যাটালিয়ন ও জেলা কার্যালয়সহ প্রতিটি কার্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে চলমান মাস্টার্স কোর্সসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণসূচিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম শীর্ষক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রাপ্তদের অনুষ্ঠানে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক আওয়ামী লীগ সরকারই প্রবর্তন করেছে। বাহিনীর কর্মকর্তাদের নতুন সিরিমনিয়াল ড্রেস এবং কমব্যাট পোশাক প্রদান করা হয়েছে।
আনসার বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ও ভিডিপি’র স্থাপনাসমূহের ভৌত সুবিধাদি সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের ২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন এবং ১১৪টি ভবন ও স্থাপনা সংস্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু সরকারি দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিবেচনায় দেশের প্রতিটি রেঞ্জে একজন করে ভিডিপি সদস্যের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে একই বিবেচনায় প্রতি জেলায় ভিডিপি সদস্যকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
এ সময় মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেক গৃহহীন-ভূমিহীনকে ঘর করে দেওয়ার তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সকল ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতেও তাঁর সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিববর্ষে দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। সবাই বিদ্যুৎ পাবে। প্রতিটি গ্রামে আমরা শহরের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
সকলের উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবো, ইনশাআল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের এই মাসে মহান ভাষা আন্দোলনের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, ভাষা শহীদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার এবং মুক্তিযুদ্ধে আনসারের ৬৭০ জন বীর শহীদ সহ মুক্তিযুদ্ধের আত্মাহুতিদানকারী ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা- বোনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।সংবাদ প্রকাশঃ  ১১২০২১ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

Print Friendly, PDF & Email