কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কের ধুলায়, দুর্ভোগে মানুষ হতাশা 

সিটিভি নিউজ।।    নেকবর হোসেন   কুমিল্লা প্রতিনিধি  জানান ===
কুমিল্লা – নোয়াখালী দুই লেনের সড়কটি উন্নীত হবে চার লেনে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের বাকি আছে মোটে সাত মাস। নোয়াখালীর একটি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি। আবার কুমিল্লার অংশের অধিগ্রহণ শেষ হলেও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি সওজকে। ফলে ওই অংশের কিছু এলাকায় কাজ শুরু হয়নি। এতে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ‘কুমিল্লা অংশে সওজ এ পর্যন্ত যেসব স্থানে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে, তার সবটুকুই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উন্নয়নকাজে যদি বিলম্ব হয়, সেটি সওজের কারণেই হবে।’ একই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খানের ভাষ্য, মৌজার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর সেটি কেটে গেছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে সওজকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। সড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার পড়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। আর বাকি ১৪ কিলোমিটার পড়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়ী উপজেলায়। সড়কটি দিয়ে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও কুমিল্লার একাংশের মানুষজনের যাতায়াত বেশি। প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুনে। মেয়াদের প্রায় আড়াই বছরে কুমিল্লা অংশের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং নোয়াখালী অংশের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সওজ সূত্র জানায়, কুমিল্লার টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) পর্যন্ত সড়কটিকে দুই লেন সড়ক থেকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। এর মধ্যে পিচঢালা রাস্তা হবে ৫৪ ফুট। এর বাইরে দুই পাশে ৩ ফুট করে ফুটপাত রাখা হবে। নিজ নিজ জেলার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর প্রকল্পের কাজটি তদারকি করছে।
সরেজমিন
১৬ নভেম্বর সড়কটির নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা থেকে কুমিল্লার বিশ্বরোড পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, নোয়াখালী অংশের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে চৌমুহনী চৌরাস্তা থেকে দিঘিরজান পর্যন্ত কিছু অংশে কাজ শেষের দিকে, আর বাকি অংশের কাজ চলমান। আর দিঘিরজান থেকে সোনাইমুড়ী বাইপাস পর্যন্ত আংশিক কাজ করার পর বন্ধ।
অপর দিকে কুমিল্লা অংশের বিপুলাসার বাজার হয়ে কাঁচিরপোলের উত্তর অংশ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার কাজ মাঝপথে বন্ধ আছে প্রায় পাঁচ মাস। এতে সড়কের ধুলাবালুতে এলাকার লোকজনের অবস্থা কাহিল। কাঁচিরপোলের সড়ক-সংলগ্ন দোকানি জসিম উদ্দিন জানান, ধুলাবালুতে হাঁচি, কাশি, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে ভুগছেন তাঁরা। ধুলাবালুর কারণে দোকানে বসা দায়।
হিমাচল পরিবহনের যাত্রী মোরশেদ আলম বলেন, ভোগান্তির অপর নাম এখন কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়ক। গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লা বিশ্বরোড পর্যন্ত আসতে তাঁর সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। আর শুধু লাকসাম বাইপাস পার হতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা। এতে গাড়িতে থাকা নারী-শিশুরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হয়।
ভূমি অধিগ্রহণে আটকে উন্নয়ন
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর চাষিরহাট অংশের ৩ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজে এখনো হাতও দেওয়া হয়নি। একটি দলিলে মূল্য বেশি থাকায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা দেখা দেয়। এতে আটকে যায় ওই অংশের ভূমি অধিগ্রহণ।
এ ছাড়া একই কারণে কুমিল্লা অংশের হাতিরচর চৌরাস্তা থেকে লালমাই থানা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এবং বাগমারা বালিকা বিদ্যালয় থেকে লালমাই দক্ষিণ বাজার গোলচত্বর পর্যন্ত আরও প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। অথচ সড়কের ওই দুটি অংশে ছয়-সাত মাস আগে সওজ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে ‘ফোর লেনের কাজ চলিতেছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত’ লেখা অনেকগুলো সাইনবোর্ড।
দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা
সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্যাহ বলেন, কুমিল্লা অংশের টমছম ব্রিজ থেকে লালমাই পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ, লালমাই-লাকসাম অংশের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং লাকসাম-সোনাইমুড়ী অংশের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। লালমাই-লাকসাম অংশে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তিন মাস আগে।
এক প্রশ্নের জবাবে আহাদ উল্যাহ বলেন, লালমাই-লাকসাম অংশে ভূমি অধিগ্রহণে সময় লেগেছে। প্রয়োজনীয় অর্থ জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই জেলা প্রশাসন থেকে সওজকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা।
অপর দিকে নোয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, নোয়াখালী অংশের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ–সম্পর্কিত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় সোনাইমুড়ী চৌরাস্তা থেকে চাষিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু করতে পারছেন না।
এত দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নোয়াখালী নাগরিক অধিকার মোর্চার যুগ্ম আহ্বায়ক ও উন্নয়নকর্মী নুরুল আলম। তিনি বলেন, নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর মানুষের মনে যে আশার জন্ম নিয়েছে, কাজে ধীরগতির কারণে এখন তা হতাশায় পরিণত হয়েছে। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম এক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নাগরিকেরা।সংবাদ প্রকাশঃ  ১৮১১২০২০ইং (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like সিটিভি নিউজ@,CTVNEWS24   এখানে ক্লিক করে সিটিভি নিউজের সকল সংবাদ পেতে আমাদের পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুনসিটিভি নিউজ।। See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন=   

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ