দেবীদ্বারে হানাদারমুক্ত দিবস পালিত: স্বাধীনতার চেতনায় স্মৃতিচারণ ও শোভাযাত্রা

সিটিভি নিউজ।। এবিএম আতিকুর রহমান বাশার দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি ==================
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তঝরা প্রতিটি দিনই ত্যাগ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সাক্ষ্য বহন করে। সেই চেতনায় আগামীর বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় দেবীদ্বারে হানাদারমুক্ত দিবসের আলোচনা সভায়।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে দেবীদ্বার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয় দেবীদ্বার হানাদারমুক্ত দিবসের আলোচনা সভা। এতে প্রধান বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের অনন্য চেতনা লালন করেই আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ার মো. জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মূন্সী আব্দুর রৌফ, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিউল্লাহ মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, সাংবাদিক সফিউল আলম রাজীব, সাংস্কৃতিক কর্মী মো. দেলোয়ার হোসেন, বৈম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কাজী নাছির উদ্দিন, মো. নাঈম হাসান প্রমুখ।
স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার।
এর আগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ ও ‘গণকবরে’ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ।
আলোচকরা জানান, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার পাক হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল একে একে দখলমুক্ত হয়। ওইদিন মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতু মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের জেনারেল আর. ডি. হিরার নেতৃত্বে ট্যাংক বহর দেবীদ্বারে প্রবেশ করলে পাক হানাদাররা রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা তখন মুক্ত এলাকায় অপ্রসর হচ্ছিলেন। তবে দেবীদ্বার-চান্দিনা সড়কের মোহনপুর এলাকায় ভুল বোঝাবুঝির কারণে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে মিত্রবাহিনীর ছয় সেনা শহীদ হন। সেদিনই দেবীদ্বারের আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা; বিজয়ের উচ্ছ্াসে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে উপজেলা সদর।
আলোচনায় বক্তারা জানান, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের নিকটবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চল ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাধীনতার পাঁচ দিনের মাথায় মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনার সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে ইতিহাসের প্রথম বিজয় ছিনিয়ে আনেন; এতে ১৫ পাক সেনা নিহত হয় এবং ৩৩ জন বাঙালি যোদ্ধা শহীদ হন। ভানী, বরকামতা ও অন্যান্য যুদ্ধে বহু পাক সেনা নিহত হয়, যার মাশুলও দিতে হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষকে।
পাক হানাদারদের বর্বরতার সাক্ষী আজও অক্ষত রয়েছে ১৯ শহীদের গণকবর, নৌ কমান্ডো শহীদ আবুবকরের কবর, ভূষনার ৬ শহীদের কবর, বারুর গ্রামের শহীদ যোদ্ধার কবর, মাওলানা আজীমুদ্দিন পীরের দুই নাতির কবর, ভিড়াল্লার শহীদ মজিবুর রহমানের কবর, মহেশপুরের ১৪ মুক্তিযোদ্ধার কবর, বরকামতার ২৬ শহীদসহ অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন।
দেবীদ্বার ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ পথ ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে যোদ্ধা-নেতাদের ভারত সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার প্রধান রুট। ফতেহাবাদের ‘নলআরা’ জঙ্গল এবং প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের এলাহাবাদের বাড়িতে দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ছিল। মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যার দিক থেকে দেবীদ্বার ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত এলাকা।
ছবির ক্যাপশন: দেবীদ্বার হানাদার মুক্ত দিবসে র্যালী, আলোচনা সভা ও শহীদদের স্মরনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের ছবি। সংবাদ প্রকাশঃ ০৪-১২-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=