হযরত শাহ জালাল (রহঃ)’র প্রকৃত পরিচয় উন্মোচন!

সিটিভি নিউজঃ ধর্মীয়(ইসলাম) ডেস্কঃ-

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম। ইতিহাসের নিরিখে বাংলার আধ্যাত্মিক প্রাণ পুরুষ, সিলেট বিজয়ী দরবেশ হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর প্রকৃত পরিচয় উন্মোচন। শেখুল মাশায়েখ হজরত শাহ জালাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে যাঁরা অমর হয়ে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। কিন্তু এই মহান ওলি আল্লাহর পরিচয় নিয়ে দেশে ও বিদেশে এক ধুম্রজাল বিরাজমান রয়েছে। কেউ বলেন তিনি তাবরিজি, কেউ বলেন ইয়ামিনী, আবার কেউ বলছেন কুনিয়াবি। হজরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি’র বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনায় এই ধুম্রজালকে দূর করে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় উদ্ঘাটন আমার একান্ত  জরুরী মনে হয়েছে। এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এ বিষয়ে আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে মুহাম্মদ ইবনে বতুতা রহঃ’র বক্তব্য। কারণ তিনি সরাসরি দরবেশ শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি’র সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর আতিথেয়তায় হযরতের সান্নিধ্যে তিন দিন অবস্থান করেন। হজরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি’র সাথে ইবনে বতুতার সাক্ষাৎকালীন সময়ে আরও বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল যা আমরা পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এখন আমরা শুধু হজরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি’র পরিচয় নিয়ে ইবনে বতুতার বর্ণনা আলোচনা করছি। তিনি তার বিখ্যাত কিতাব রিহলায় উল্লেখ করেন যে, কামরূপ অঞ্চলে তার গমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাবরিজের মহান শায়খ জালাল উদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করা। তিনি তার বর্ণনায় আরো উল্লেখ করেন, শায়খ তাকে বলেছেন বাগদাদের খলিফা মুস্তাসিম বিল্লাহ আল-আব্বাসিকে তিনি দেখেছিলেন এবং তার হত্যার সময়ও তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে শায়খের এক সহচর তাকে জানিয়েছিলেন যে, শায়খ ১৫০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। শায়খের আকৃতি বর্ণনায় তিনি রিহালায় উল্লেখ করেন, শায়খ হালকা-পাতলা লম্বাকৃতির ছিলেন এবং অধিক বয়সের কারণে তাঁর শরীরের চামড়া ধূসর বর্ণ ধারণ করে ছিল। মিনহাজ-ই-সিরাজের “তবাকাত আল-নাসিরি” গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, যখন শেখ আলাউল হক সিমনানী বাগদাদে বুজুর্গ শেখ নুরুল হকের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করছিলেন তখন ৬৮৮ হিজরি (১২৮৯ খ্রিস্টাব্দ) তিনি সেখানে সুলতান জালালউদ্দিন খোয়ারাজম শাহের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন। ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী, খলিফা মুস্তাসিম বিল্লাহ আল-আব্বাসির হত্যার সময় অর্থাৎ ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে সেই শায়খ বাগদাদে উপস্থিত ছিলেন। সুলতান জালালউদ্দিন খোয়ারাজম শাহের জীবনী লেখক শিহাব উদ্দিন আন-নাসিবি সিরাতে সুলতান জালালুদ্দিন গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, সুলতান চেঙ্গিস খানের বাহিনীর সাথে অল্প সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে সূর্য ডুবার সময় পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং আবছা অন্ধকারে তার রাজকীয় পোশাক খুলে সিলাহদারকে প্রদান করে দরবেশের তাকিয়া ও টুপি পরিধান করে ঘোড়ায় চড়ে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন, যা তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাঁর জীবনী লেখক আন-নাসাবি আরও উল্লেখ করেছেন, সুলতান জালালউদ্দিন খোয়ারাজম শাহের নাকে জন্ম চিহ্ন ছিল, যা তাঁকে সহজেই পরিচয় করিয়ে দিত এবং তা দেখেই শেখ আলাউল হক সিমনানি তাকে বাগদাদে চিনতে পেরেছিলেন। সুহেল ই ইয়েমিনীর জীবনীকার সিলেটের মুন্সেফ নাসিরউদ্দিন হায়দার তাঁর বইয়ে লিখেছেন যে, শায়খ জালাল (রহ.) সর্বদা রুমাল দিয়ে তাঁর মুখ ঢেকে রাখতেন অর্থাৎ চেহারায় নেকাব পড়তেন। আসলে তিনি আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর কেউ যেন তাঁকে চিনতে না পারে। বিশেষ করে তাঁর নাকের জন্ম চিহ্ন দেখে শত্রু পক্ষ তাকে চিনে ফেলতে পারে তাই তিনি রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন। ক্রস চেকিং অনুযায়ী: ১২৩১ খ্রিস্টাব্দে ৩৫/৩৬ বছর বয়সে সুলতানের ক্ষমতা ছেড়ে আত্মগোপনে যাওয়া। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে মুস্তাসিম বিল্লাহ আব্বাসী হত্যার সময় সেখানে অবস্থান। ১২৮৯ খ্রিস্টাব্দ (৮৮৬ হিজরী) শেখ আলাউদ্দিন সিমনানী কর্তৃক বাগদাদে তার সন্ধান লাভ। ১৩০৩/১৩০৪ খ্রিস্টাব্দ (২৬ শাওয়াল ৭০৩ হিজরী) সিলেট বিজয়। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে তার ওফাত লাভ যা ইবনে বতুতার রিহলাতে উল্লেখিত তাঁর ১৫০ বছর বয়সকে পূর্ণ সমর্থন করে। আবার ১৩০৩/১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে ইসলাম বিজয়ের পর ১৩৪৪ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন আলী মুবারক শাহ কর্তৃক পান্ডুয়ার দেওতলাতে মসজিদ নির্মাণের সময় তার নামে প্রথম ব্যবহৃত শিলালিপিতে নাম শেখ জালালুদ্দিন মুহাম্মদ তাবরিজী লিখা। আন-নাসিবি’র জীবনী গ্রন্থে উল্লেখিত তাঁর চিঠি পত্রের নমুনায় সুলতান জালালুদ্দিন মুহাম্মদ খোয়ারাজম শাহকে পূর্ণ সমর্থন করে। তবে পরবর্তীতে খোয়ারিজম শাহের পরিবর্তে তাবরিজি লিখার মর্ম হচ্ছে তাঁর শাসন কালের ২য় দফায় তিনি তাবরিজকে রাজধানী করে রাস্ট্র পরিচালনার কারণে হতে পারে যা নাসাবি তাঁর জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইয়েমেনের লোকজনের নামের ফরমেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জালালুদ্দিন বা শাহ জালাল এ জাতীয় নাম ইয়েমেন বা আরব অঞ্চলে প্রচলিত নয়। আর শাহ উপাধিও ইয়েমেনে নয় বরং পারস্য ও আমাদের উপমহাদেশেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উপরোল্লিখিত এই পর্যালোচনায় আমরা বলতে পারি যে, খোয়ারেজমের সুলতান জালালুদ্দিনই আমাদের সিলেট বিজয়ী বাংলার প্রাণপুরুষ আধ্যাত্মিক গুরু হজরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

সূত্র- রিহলা- ইবনে বতুতা পৃ-৪৫৯, তাবাকাতে নাসিরি -মিনহাজ ই সিরাজ পৃ-২৯৯ ( ভলি:২) বা-খিদমতে-এ.এফ.এম শহীদুল ইসলাম সেলিম। বন্ধন ডি /১০, দারুসসালাম মাদ্রাসা রোড, খাসদবির, আম্বরাখানা, সিলেট। মোবাইল-০১৭২৯-৭৪৪২৩৩।

সংকলনে-আলহাজ্ব শাহ মোহ্ম্মাদ ইউনুছ গাফ্ফারী বখ্শী।

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like)
আরো পড়ুন