সিটিভি নিউজ।। হালিম সৈকত তিতাস প্রতিনিধি।। =========জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের ঘায়েল করতে করা হয় মামলা। এজাহারে প্রতিবেশীর মারধরে গুরুতর জখম ও আঘাতের অভিযোগ আনা হয়। আদালত বাদীপক্ষের মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) তলব করেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) কুমিল্লার তিতাস থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কাওসার আদালতে মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দেন।
এরপর আসামিরা আদালতে হাজির হতে গেলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটে তিনি বাদীর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে আদালতকে জানান। প্রমাণস্বরূপ তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিকেল সার্টিফিকেটের উদ্ধৃতি দেন।
তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মামলার আইও তিতাস থানার এসআই আবুল কাওসার আদালতে যে চারটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করেন, তার সবকটিই জাল বা নকল। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চারটি এমসি'ই ভুয়া। এসব এমসি ঢামেক হাসপাতাল থেকে ইস্যু করা হয়নি। এমনকি এমসিগুলো যে চিকিৎসকের নামে ইস্যু করা হয়েছে, ঢামেক হাসপাতালে ওই নামের কোনো চিকিৎসকই নেই।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদীপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কাওসার অনৈতিক কোনো সুবিধা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, অপরাধ উদ্ঘাটনে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই অপরাধ করেছেন। তিনি ভুয়া বা জাল মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করে আদালতকে মিসগাইড (ভুল পথে চালিত করা) করেছেন। এর ফলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাদিম মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি যে আদালতকে তিনি মিসগাইড করেছেন, সেই বিচারকও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে পুলিশ প্রতিবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না দেখায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার তিতাস থানায় একটি মামলা করেন, মো. লিটন নামে এক ব্যক্তি। যার এফআইআর নম্বর-১৩ ও জিআর মামলা নম্বর ৯৮/২০২৪। আসামি করা হয় মামলার বাদীর ৯ প্রতিবেশীকে। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ‘আসামিরা তাকে লাঠিসোটা, লোহার রড ও পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে নিলাফুলা জখম করেন। বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করেন।’ এরপর আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বাদীর মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব করেন। তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কাওসার আদালতে তিনটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করেন। পরবর্তী তারিখে আসামিরা হাজির হতে গেলে ২ নম্বর আসামি ইমার আলী ওরফে ইমনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পরে প্রায় চার মাস জেল খেটে জামিনে বের হন তিনি। একইভাবে গত বছরের ২২ নভেম্বর একই থানায় আরও একটি মামলা করেন প্রথম মামলার বাদী লিটনের আপন চাচাতো ভাই সাকিব আহমেদ ওরফে মোহাম্মদ আলী। এই মামলায় আসামি করা হয় আটজন প্রতিবেশীকে। যার মধ্যে পাঁচজনই আগের মামলায়ও আসামি ছিলেন।
এজাহারে বলা হয়, ‘আসামিরা বাদীর পথ আটকে লাঠিসোটা, লোহার রড, লোহার পাইপ, ছুরি, চাপাতি, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এরপর লোহার রড ও পাইপ দিয়ে বাদীকে মেরে গুরুতর জখম করেন। আসামিদের হাতে থাকা রামদা দিয়ে কোপ মেরে বাদীকে গুরুতর জখম করেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি মামলাতেই তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশ প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানিয়েছেন, অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রমাণস্বরূপ আদালতে চারটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে মেডিকেল সার্টিফিকেটের উদ্ধৃতি দিয়ে বাদীর অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সে সব মেডিকেল সার্টিফিকেটের অনুলিপি সংগ্রহ করেছে সাংবাদিকগণ। এগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে যে চারটি মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন, তার সবকটিই জাল বা নকল। এসব মেডিকেল সার্টিফিকেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একটি সার্টিফিকেটেও কোনো রেফারেন্স বা স্মারক নম্বর নেই। অথচ সরকারি যে কোনো নথিপত্রে স্মারক নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক।
এরপর এমসিগুলো যাচাই করতে খোঁজ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তথ্য অধিকার আইনে এমসিগুলো যাচাইয়ের আবেদন করলে লিখিতভাবে উত্তর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত মো. আলী, বয়স ২৫ বছর, রেজি. নং ৩৬৭/২৬৪৬৭; লিটন, বয়স ৪০ বছর, রেজি. নং ২০৩১১/১১; মো. রিপন, বয়স ৩৫ বছর, রেজি. নং ৯৫৪/১৯৯০৪ ও মমতা, বয়স ৫৫ বছর, রেজি. নং ১১২৯/১৭৬২৯ ব্যক্তিদের নামে দাখিলকৃত জখমি সনদগুলো অত্র হাসপাতাল থেকে ইস্যু করা হয়নি। বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হলো।’
এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন। তারা বলেন, মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদেরকে জেল খাটানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যা রিপোর্ট প্রদান করেছে। আমরা তার শাস্তি দাবি করছি। সংবাদ প্রকাশঃ ১০-১১-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুকী তাপস
মোবাইল: 01711335013
www.ctvnews24.com