সিটিভি নিউজ।। মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার, লেখক:== অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। অথচ ভুল ব্যবহারে এই ওষুধ জীবন রক্ষার বদলে জীবনঘাতি হয়ে উঠছে। অনিয়ন্ত্রিত বিক্রি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকির দুর্বলতার সুযোগে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিমাত্রায় প্রয়োগ চলছে।
প্রয়োজন না হওয়া সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি অ্যান্টিবায়োটিক। সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই মানুষ সেবন করছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। যার ফলে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে দেহের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো। শুধু তাই নয়, ডাক্তারের পরামর্শকে উপেক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো ডোজ শেষ করেন না অনেকে। যার ফলে শরীরে থেকে যাওয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় আরও বড় ধরনের রোগের ঝুঁকি। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স।
অসুখ হলে ওষুধ খেতে হয়, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এবং সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করি না। ওষুধ খেতে আমরা যতটা তৎপর, ওষুধ খাবার নিয়ম মানতে ততটাই উদাসীন। আমাদের এই অবহেলা জীবন রক্ষাকারী ওষুধকে করে তুলতে পারে জীবনবিনাশী। ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই যে অনিয়মটা করি, তা হলো চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়া। আমরা নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করি, কখনো আত্মীয়, কখনো বন্ধুর পরামর্শ নিই, কখনো চিকিৎসকের চেয়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর বেশি নির্ভর করি।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সমাদৃত এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে যার অবদান অবিস্মরণীয়। ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মানবজাতির জীবন রক্ষার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে ওষুধের ক্ষমতা কোনো কোনো জীবাণু ধ্বংসের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। এর যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক জীবাণু প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক হয়ে উঠছে, জীবাণুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী এবং ওষুধের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়- এমন পরিস্থিতিকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিবন্ধকতা, যা মানুষের জন্য প্রাণঘাতী। অনেক সময় দেখা যায়, জীবাণুগুলো একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে, তাকে বলে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স, অনেক সময় একে বলা হয় সুপারভাগ, যা আরও ভয়ংকর।
মানুষ কোনো রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেই প্রাথমিকভাবে তার নিকটবর্তী দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে পারে। ওষুধ কিনতে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং ডাক্তারের কোনো প্রেসক্রিপশন না লাগায় মানুষ সহজেই এ কাজটি করছে। এটি হচ্ছে জনসচেতনতার অভাবে। ফলে অপরিমিত ও মাত্রাহীন ওষুধ খাওয়ার ফলে এর জীবাণুনাশক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি অনাগত ঝুঁকি। এরপরও অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হয়েই চলছে। একটা অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সেটিও কাজ করছে না। তখন অধিক কার্যকরী এবং অনেক দামি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে যে ফল পাওয়া সম্ভব ছিল, দেখা যায় অধিক কার্যক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও সে ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে অপব্যবহার আর যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে এবং রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথাগত অ্যান্টিবায়োটিক কাজে আসছে না। এটি মানুষ ও পশু স্বাস্থ্য এবং কৃষি সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যে রোগ শুরুতেই ভালো করা যেত, ভুল ব্যবহারের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না, নতুন ওষুধ দরকার হচ্ছে, কখনো তাতেও কাজ হচ্ছে না।
প্রায় সময়েই দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া দরকার ৭ থেকে ১০ দিন। অনেক রোগীও কয়েকটা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সুস্থতাবোধ করলে মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেয়। মনে করে, ‘আমি তো ভালোই হয়ে গেলাম, ওষুধ খাবার আর দরকার কী?’ এটি খুবই ক্ষতিকর। এভাবে ওষুধের মেয়াদ পূরণ না করায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে এবং রোগীর বিপদও বাড়ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেষ্ট ব্যবহারের ফলেই এমন ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং দিন দিন তা বেড়েই চলছে।আমাদের দেশে জীবাণুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার অন্যতম কারণগুলোর একটি হলো ওষুধের দোকানগুলোতে কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করা হয়। যে কেউ চাইলেই ফার্মেসিতে গিয়ে ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারে, ডোজ মানছে না, নিয়ম মানছে না, যেমন ইচ্ছা হলো খাচ্ছে। যখন ইচ্ছা করছে বন্ধ করছে, যেগুলো আরও ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
সবার স্বার্থে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ করতে হবে। যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যাতে কোন ফার্মাসি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক:চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী। সংবাদ প্রকাশঃ ০৫-১১-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ওমর ফারুকী তাপস
মোবাইল: 01711335013
www.ctvnews24.com