রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য

সিটিভি নিউজ।। মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার: লেখক ===
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য ভ্যাকসিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। টাইফয়েড একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের শরীর এখনো সংবেদনশীল। তাই টাইফয়েড ভ্যাকসিন শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে অনেক অভিভাবকের মনে প্রশ্ন থাকে—এই ভ্যাকসিন আসলেই কতটা কার্যকরী এবং এটি কি নিরাপদ? সঠিক তথ্য জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় এবং শিশুদের অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি থেকেও বাঁচানো যায়।
কাজেই প্রত্যেকটা বাবা-মাকে অনুরোধ করব এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
স্কুলের বাইরের খাবারগুলোর মধ্যে যেমন ফুচকা, ভেলপুরি, চটপটি, আচার, শরবত বা আইসক্রিম—এগুলোর টক-মিষ্টি ও ঠান্ডা খাবার বাচ্চাদের মধ্যে পানিবাহিত রোগের অন্যতম কারণ। বিশেষ করে টাইফয়েড ও হেপাটাইটিসের সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, স্কুলের ছুটির পর এবং স্কুলের পাশের ফুচকা, ভেলপুরি, ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কিন্তু এই খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর নয় এবং শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এধরনের খাবার গুলোতে টাইফয়েডের জিবানু থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দুষিত পানি এবং এধরনের বাইরের খাবারগুলোই টাইফয়েড এ আক্রন্ত হওয়ার প্রধান কারণ।
সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লক্ষ থেকে ১.১ কোটি শিশু টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে প্রায় ১১০,০০০ থেকে ১,১৬,০০০ জনের মৃত্যু হয়। এই রোগটি বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, এবং দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশে টাইফয়েড একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ শিশু টাইফয়েড এ আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে মৃত্যুবরণ করে ৬০০০ শিশু। যেসব দেশে সরকারিভাবে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে প্রধানগুলো হলো:
পাকিস্তান: ২০১৯ সাল থেকে
নেপাল: ২০২২ সাল থেকে
ভারত: জাতীয় পর্যায়ে চালু হয়েছে
বাংলাদেশ: ২০২৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী কর্মসূচি শুরু হচ্ছে
আফ্রিকার কয়েকটি দেশ: যেমন মালাউই এবং আরও কিছু দূর্বল স্যানিটারি কন্ডিশন সম্পন্ন দেশে এখনো সীমিতভাবে বা নির্দিষ্ট এলাকায় পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে TCV ব্যবহার হচ্ছে।
আসলে কোন একটা ভ্যাকসিন যখন ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) এপ্রুভ করে তখন কিন্তু বিভিন্ন লেভেলে এটা নিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং বিভিন্ন লেভেলে এটা প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগ করে দেখা হয় প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর, তৃতীয় স্তরে, যখন দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একদম নাই বললেই চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে তখন ভ্যাকসিনটাকে প্রয়োগের জন্য এপ্রুভ করা হয় । তবে, ভ্যাকসিন প্রয়োগে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এটিও তার ব্যাতিক্রম নয় । তবে সেটা খুবই কম। যেমন: দেহের যে স্থানে প্রয়োগ করবে সেখানে সামান্য একটু ব্যথা হতে পারে। একটু প্যারাসিটামল সিরাপ বয়স হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আবার যে স্থানে প্রয়োগ করবে সেই স্থান একটু লাল হতে পারে। এছাড়া অন্য কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন একবার নিলে পাঁচ থেকে সাত বছর সুরক্ষা দেয়, আবার কোনো কোনো স্টাডিতে দেখা গেছে ১০ বছর পর্যন্ত প্রটেকশন দেয়। এবং এই ভ্যাকসিনটার সুবিধা হচ্ছে আগের ভ্যাকসিন থেকে দীর্ঘমেয়াদী প্রটেকশন দিবে। অনেকেরই প্রশ্ন, আমার বাচ্চার তো আগে টাইফয়েড হয়েছে, সে কি এই সরকারি ভ্যাকসিন নিবে?
অবশ্যই নিতে পারবে কোন অসুবিধা নেই। টাইফয়েড একবার হলে শরীর কিছুটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদি বা সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেয় না। কয়েক বছর পর আবার সংক্রমণ হতে পারে। এজন্য ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
ভ্যাকসিন মূলত একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং এটা পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিবে। এমনকি (দশ) বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। তার মানে এটা নয় যে, আপনি ভ্যাকসিনটা নিয়ে বাইরের খাবার খাওয়া শুরু করবেন? প্রত্যেকটা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কিন্তু ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ। এটা নিয়ে যে স্টাডি হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ৮৫ ভাগ দুই বছর পর্যন্ত প্রটেকশন দেয়। বাকি যে ১৫% রয়ে গেল, তার জন্য আপনাকে নিয়ম মানতে হবে সবার আগে। এখন থেকে আপনি বাইরের কোনো দূষিত খাবার খাবেন না। আপনাকে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে, হাইজিন মেইনটেন করতে হবে, বাথরুম ব্যবহার করার পরে হাত ভালো করে ধুতে হবে। সবজি রান্না করার সময় হাত ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করতে হবে। এটা কোনভাবেই কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।
টাইফয়েড ভয়াবহ রূপ নিতে পারে যদি আপনি চিকিৎসা করতে দেরি করেন। এই টাইফয়েড হলো নাড়িতে ঘা বা অন্ত্রে ঘা; যার ফলে আস্তে আস্তে নাড়িটা ফুটো পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে, তখন সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে আবার লিভারে কিন্তু এটার প্রদাহ ছড়িয়ে যেতে পারে তখন লিভারের এনজাইম বেড়ে যায় তখন আমরা এটাকে বলি হেপাটাইটিস। আবার অগ্নাশয়ে এটার প্রদাহ ছড়িয়ে যেতে পারে তখন এটাকে বলা হয় প্যানক্রিয়াটাইটিস। এছাড়া গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে প্রদাহ ছড়িয়ে যেতে পারে তখন এটাকে বলা হয় কোলেসিস্টাইটিস। এমনকি ফুসফুসে এটার প্রদাহ হতে পারে তখন এটা হতে পারে নিউমোনিয়া। আবার হার্টে এটার প্রদাহ ছড়িয়ে গিয়ে মায়োকারডাইটিস হতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ যেটা ব্রেনে যদি প্রদাহ শুরু হয় হতে পারে মেনিনজাইটিস, এনক্যাফালাইটিস, এনক্যাফালোপ্যাথি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কাজেই কেন আপনি এত বড় রিস্ক নিয়ে থাকবেন? সরকারিভাবেই সরকার এটার ব্যবস্থা করেছে। তাই অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করুন এবং খুব সহজে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। তবে রেজিস্ট্রেশন করতে বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন নম্বর লাগবে। বাচ্চা কোন স্কুলে, কোন ক্লাসে পড়ালেখা করে সেটা লাগবে।

লেখক:চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী। সংবাদ প্রকাশঃ ২৫-১০-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like)
আরো পড়ুন