মাদরাসায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের মানহীন খাবার পরিবেশন প্রতিবাদ করায় অভিভাবকের উপর হামলা

চৌদ্দগ্রামে মুন্সীরহাট ইকরা মাদরাসায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের মানহীন খাবার পরিবেশন
প্রতিবাদ করায় অভিভাবকের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা
সিটিভি নিউজ।। মনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা সংবাদদাতা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুন্সীরহাট ইকরা মহিলার আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মানহীন খাবার পরিবেশন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় মাদরাসার মুহতামিম (প্রতিষ্ঠান প্রধান) মাওলানা মো. হাবিবুর রহমান কর্তৃক মো. আলা উদ্দিন নামে এক অভিভাবক ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হন। এ সময় মারধর ও লাঞ্ছনা শেষে ওই অভিভাবককে মাদরাসায় আটকে রাখার ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার মুন্সীরহাট বাজারের ইকরা মহিলা মাদরাসায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগি অভিভাবককে উদ্ধার ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
ভুক্তভোগির পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার হলো মুন্সীরহাট বাজার। একই ইউনিয়নের যুগীরহাট গ্রামের মাওলানা হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে “মুন্সীরহাট ইকরা মহিলা মাদরাসা” নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মাদরাসাটিকে বালক-বালিকা শাখার পৃথক নামকরণ করে আবাসিক-অনাবাসিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আবাসিক শিশু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ৬ হাজার টাকা হারে ফি নিলেও তাদেরকে পরিবেশন করা খাবারের মান খুবই নিম্নমানের বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বহু অভিভাবক দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা, অভিযোগ প্রদান সহ প্রতিবাদ করলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক অভিভাবক বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখিও করেন। এতকিছুর পরও টনক নড়েনি মাদরাসার স্বৈরাচারি মনোভাবাপন্ন মুহতামিম মাওলানা হাবিবুর রহমানের। প্রতিষ্ঠানের নামে চটকদার বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী কালেকশন করে পরে তাদেরকে সঠিক যত্ন না নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে মুহতামিমের বিরুদ্ধে। তার একঘেয়েমির কারণে অনেক সচেতন অভিভাবক তার শিশু সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বছরের মাঝখানে নিজ সন্তানকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিতে পারছেন না বা পারলেও বাৎসরিক স্বাভাবিক পাঠ কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারার দুচিন্তায় অন্যত্র না নিয়ে বরং একপ্রকার বাধ্য হয়েই অত্র প্রতিষ্ঠানে রেখে দিয়েছেন অনেকে। যারফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার দৈনন্দিন খাবার গ্রহণে বেশ ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে। মাদরাসা হোস্টেলে পরিবেশনকৃত খাবারের মান নিয়ে নানান অভিযোগের ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের বাড়তি যত্ন নিতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তি কিছু খাবার কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এজন্য অভিভাবকদের খরচ করতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এত এত অভিযোগের মধ্যে শনিবার দুপুরে মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের আলা উদ্দিন নামে এক অভিভাবককে মারধর ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। ওই মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর আবাসিকে থেকে পড়ে তার ২ ভাগিনা। শুক্রবার রাতে তাদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আজ দুপুরে অভিযোগ জানাতে গেলে তার সাথে বাগবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা হাতাহাতি ও মারামারিতে রূপান্তরিত হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মাদরাসা মুহতামিম মাওলানা হাবিবুর রহমান ওই অভিভাবকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেত্রাঘাত সহ ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষকরা দৌঁড়ে এসে মাদরাসার মূল কলাপসিবল গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়ে ওই অভিভাবককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। নিরুপায় হয়ে পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের সহযোগিতা চান। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.আশরাফের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগি অভিভাবককে উদ্ধার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময়ে থানা পুলিশ মুন্সীরহাট বাজারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ডা. শাহজালাল, আলকাছসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বিষয়টি দ্রুত সুরাহার দায়িত্ব প্রদান করেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মাদরাসা মুহতামিম পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিভাবক আলা উদ্দিন জানান, মাহিন ও আশফি নামে আমার দুই ভাগিনা মুন্সীরহাট ইকরা মাদরাসার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে। তারা উভয়ই ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। আমার ভগ্নিপতি বিদেশ থাকায় বেশিরভাগ সময় আমিই তাদের দেখাশুনা করি। শুক্রবার রাতে ভাগিনা মাহিন ফোন করে আমাকে জানায়, ওইদিন রাতে তাদেরকে খুবই নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়েছে, তাই তারা ওই খাবার খায়নি। আমি আজ দুপুরে মাদরাসায় গিয়ে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়ে মাও. হাবিবুর রহমানের সাথে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তিনি আমাকে তার হাতে থাকা জালি বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এরপর গেইটে তালা লাগিয়ে তারা আমাকে দীর্ঘক্ষণ মাদরাসা ক্যাম্পাসে আটকে রাখে। আমি নিরুপায় হয়ে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশি সহায়তা চাই।
এ বিষয়ে জানতে মুন্সীরহাট ইকরা মাদরাসায় গিয়ে মুহতামিম মাওলানা হাবিবুর রহমানকে না পেয়ে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার নাম বলে ওই নেতার সাথে যোগাযোগ করতে বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর বহুবার তাকে কল দিলেও তিনি আর কলটি না ধরায় কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিভাবককে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আমার নজরে আসে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত মুহতামিমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, জরুরী সেবার মাধ্যমে ফোনকল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাতে উভয়পক্ষ বসে বিষয়টির সুরাহা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। সংবাদ প্রকাশঃ ১৯-১০-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=