aaa
ঢাকাMonday , 13 October 2025
সর্বশেষ সবখবর

বিদ্যালয় ফান্ডের পাওনা প্রায় ১৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে না দিয়েই অবসরে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

CTV News 24
October 13, 2025 7:22 pm
Link Copied!

সিটিভি নিউজ।। মনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিদ্যালয় ফান্ডের পাওনা প্রায় ১৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরে যাচ্ছেন তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. কামরুজ্জামান। অবসরজনিত বিদায়কে কেন্দ্র করে ওইদিন তিনি নিজ উদ্যোগেই তড়িগড়ি করে বিদ্যালয়ে আয়োজন করছেন বর্ণাঢ্য বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। অথচ বিদ্যালয়ের হিসাব-নিকাশের পর তার কাছে বিদ্যালয়ের পাওনা টাকা তিনি এখনো বুঝিয়ে দেননি। এরই মধ্যে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। অথচ এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের হিসাব-নিরীক্ষা কমিটি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানকে একাধিকবার নিরীক্ষা কপিসহ নোটিশ প্রদান করলেও আজ পর্যন্ত (দুই সপ্তাহ পরও) তিনি এসব নোটিশের কোনো জবাব দেননি। তবে, তার দাবি ছয়মাসের জন্য নিযুক্ত বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির চার বছরের হিসাব-নিরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গত রবিবার (১২ অক্টোবর) কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন স্থানীয়রা।

বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় হিসাব নিরীক্ষা উপ-কমিটি সূত্রে জান গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসেব নিরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যার মধ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সরকারি অনুদান, টিউশন ফি, উন্নয়ন তহবিল, শিক্ষার্থীদের বেতন, রেজিস্ট্রেশন ফি, সেশন ফি, ফরম পূরণ ফি, বিভিন্ন সেমিস্টার পরীক্ষার ফিসহ অন্যান্য ফি এবং ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আয়-ব্যয়ের হিসেব গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় আগস্ট-২০২১ থেকে আগস্ট-২০২৫ পর্যন্ত ক্লোজিং ব্যালেন্স ১৭ লাখ ৭৪ হাজার ২৩২ টাকা থাকার বিপরীতে ক্যাশ বই অনুসারে ক্লোজিং ব্যালেন্স পাওয়া যায় মাত্র ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫১ টাকা। হিসাবে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ টাকার আর্থিক অনিয়ম ও গড়মিল পাওয়া গেছে। এরপর হিসাব নিরীক্ষা কমিটি অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামানকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। নিরীক্ষা উপ-কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মজুমদার, সদস্য আলমগীর আলম মাঝি, রোকেয়া আক্তার, মাহবুবুল হক ভ‚ঁইয়া কর্তৃক যৌথ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

লিখিত প্রতিবেদনটিতে ২০২১-২০২৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের অনিয়মগুলো ছক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক উপস্থাপিত বিদ্যালয়ের হিসাবে ব্যাংক-ব্যালেন্স যথাযথভাবে মিলিয়ে করা হয়নি, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক রেকর্ডের সঠিকতা, সম্পূর্ণতা এবং নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমনও সম্ভাবনা রয়েছে যে, কিছু কিছু লেনদেনের রেকর্ড-ই হয়নি, কিছু কিছু আর্থিক বিবরণীতে ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করার পাশাপাশি অর্থের অপব্যবহার এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে মর্মে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল হকের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান। নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই তিনি বিদ্যালয়ের সকল প্রকার ফি অতিরিক্ত হারে আদায় শুরু করেন। জড়িয়ে পড়েন নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে। সরকারি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতেন নিজ ইচ্ছে মতো। অধিনস্থ শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপক হয়রানির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনুসারী শিক্ষকদের দিতেন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। বিপরীতে যে শিক্ষক তার এসব অনিয়ম ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতো, তিনি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেন। আটকে দিতেন বেতন-ভাতা সহ বিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা। ওই সময় প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিচালনা কমিটির একাংশের সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট বিরোধের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির তৎকালীন সভাপতি পক্ষের সন্ত্রাসীরা বিদ্যালয়েল দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মুকতার আহমেদ চৌধুরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। হামলার ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেইসময় পাঁচ দিন পর্যন্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল সহ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে দুর্বার আন্দোলন করেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে সংগঠিত চরম আন্দোলন নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল। তবে, উপজেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকার সুবাদে তিনি ছিলেন তখন সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। এভাবেই তৎকালীন সময়ে তিনি বারবার অন্যায় করেও বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যান। বিদ্যালয়ে কায়েম করেছিলেন একনায়কতন্ত্র। দলীয় প্রভাবের কারণে তখন ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইতো না। তবে, ২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ‚্যত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পরই তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিক থেকে উঠে আসে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মত গুরুতর অভিযোগ। অভিযুক্ত এ প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি করেন স্থানীয়রা। সর্বশেষ হিসাব নিরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমানও মেলে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ২০১৯ ও ২০২০ অর্থ বছরের হিসাবেও ৯ লক্ষাধিক টাকা গড়মিলের প্রমাণ মিলেছে তৎকালীন নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদন সূত্র থেকে।

স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও অনিয়মের ফলে ঐতিহ্যবাহী তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম-সুখ্যাতি ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দুর্নীতিবাজ ও অর্থ আত্মসাতকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক। যাতে ভবিষ্যতে দেশের কোনো শিক্ষক বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা আত্মসাতের সাহস না পায়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান অর্থ আত্মসাতের কথা অস্বীকার বলেন, ‘সম্পূর্ণ মনগড়া প্রক্রিয়ায় বহিরাগতদের দিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে আমার অনুপস্থিতিতে অডিট করা হয়েছে। রেজুলেশন ছাড়া কোনো অডিটের সুযোগ নেই। আমাকে নোটিশ প্রদান করা হলেও আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। অডিটে বিগতদিনের সম্পন্ন হওয়া হিসাব-নিকাশ টানা হয়েছে, যা ছয় মাসের অ্যাডহক কমিটির দেখার কোনো ইখতিয়ার নেই।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম মজুমদার প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান কর্তৃক বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের তথ্যটি সঠিক বলে স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার প্রধান শিক্ষকের সাথে বসেছি। কোনো সুরাহা না হওয়ায় আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। বিদ্যালয়ের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দিলে উনার কাছে আমাদের আর কোনো দাবি নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আশা করছি সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের পাওনা টাকাগুলো বিদ্যালয় কোষাগারে জমা করতে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

সোমবার দুপুরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মীর হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামানের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে রবিবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অর্থ তসরুপ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্ত শিক্ষককে অবশ্যই বিদ্যালয় ফান্ডে আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরত দিতে হবে।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ সংবাদ প্রকাশঃ ১৩-১০-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=

"এই সাইটে কোন নিউজ নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।"