Wednesday, July 2, 2025
spot_img
More

    ২ কেজি ‘বীজ ধান’ বদলে দিল ভূমিহীন কৃষক রফিকের জীবন

    সিটিভি নিউজ।। এবিএম আতিকুর রহমান বাশারঃ দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি/ =================
    নিজের কোন জমি ছিলনা কৃষক মো. রফিক আহমেদের। পরের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। ৬০ বছর বয়সী সেই অসচ্ছল কৃষক রফিকের জীবনের গল্প বদলে দিয়েছে মাত্র দুই কেজি ‘বীজ ধান’।
    আজ তিনি স্বাবলম্বী, তবে বাস্তবে ভূমিহীন। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে পরের ৬ একর জমি বার্ষিক পত্তনে ধান চাষ করেন। ৩ ফসলী প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকা করে ২০ বিঘা জমি পত্তনে চাষ করেন। দেশ জুড়ে খ্যাতী তার ‘বীজ সুলতান (রফিক)’ নামে।
    ২০০৮ সাল থেকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহযোগীতায় রফিক ধান বীজ উৎপাদন শুরু করেন। প্রতি বছরে তিনি ৩ শত থেকে ৩৫০ মন বীজ ধান উৎপাদন করেন। রফিকের ধানের বীজ দেশের ৮টি কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও ধান গবেষণা ইনিষ্টিটিউটে শোভা পাচ্ছে। কৃষি গবেষনাগারের বিজ্ঞানীরাও রফিকের কৃষিমাঠ দেখতে আসেন। দেশের বিভিন্ন জেলার বীজ ডিলারদের কাছে তার বীজ খুবই সমাদৃত। বিশেষ করে রংপুর মিঠা পুকুরের বীজ ডিলারগন তাদের কোম্পানীর সিলে প্যাকেটজাত করে তার নির্ভেজাল বীজ ধান বিক্রি করেন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, বিনা উপকেন্দ্র, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিষ্টিটিউট এবং আশেপাশের উপজেলা ও জেলার কৃষক রফিকের ধান বীজ সংগ্রহ করে থাকেন।
    মূলতঃ বিজ্ঞানীরা তাদের আবিষ্কৃত আধুনিকতম বিভিন্ন ধানের বীজ রফিকের’ কাছে পাঠান। তিনি এ বীজগুলো কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় মাঠ পরীক্ষণ সম্পন্ন করেন। উৎপাদিত ধানের ফলন, রোগবালাই আক্রমন, অন্যান্য সুবিধা অসুবিধাসহ তথ্য সংগ্রহে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করেন। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় বাজারজাত হওয়া আধুনিক জাত ব্রি-ধান ১০২ ও ব্রি ধান ১০৮ জাতের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাছাড়া সম্প্রতি আবিস্কৃত ব্রি ধান ১০৯ হতে প্রস্তাবিত ব্রি ধান ১১৭ পর্যন্ত ধানের বীজ তার সংরক্ষণে রয়েছে। যে ধানের বীজ দেশের কোথাও সংরক্ষণে নেই।
    দেশ ব্যাপী আলোচিত এ ‘বীজ রফিকের’ কোন বীজ সংক্ষনাগার নেই। নিজের ঘরের সামনে এবং আবাদী জমিতে কাচা ভিটির উপর ইট বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে বস্তায় ও ড্রামে পুড়িয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে সংরক্ষণ করেন তিনি। প্রতিবেশী কৃষকের বাড়িতেও বীজ সংরক্ষণ করেন তিনি। শুধু ধান বীজই নয়, তার কাছে সরিষা, তিল, ভুট্টা, সূর্য্যমূখীসহ বিভিন্ন ফসলী বীজ সংরক্ষণ করেন। বীজ রফিকের সংগ্রহে যত বীজ সংরক্ষিত, তত পরিমান ধান এ অঞ্চলের বড় ধরনের কোন কৃষকের ঘরে এতো ধান সংরক্ষনে নেই। এক্ষেত্রে রফিকের জন্য সরকারী কোন সহযোগীতা নেই। সরকারী সহযোগীতা পেলে বীজ রফিক দেশের খাদ্যঘাটতি মোকাবেলায় বিশাল অবদান রাখতে পারত।
    মো. রফিক আহমেদ(৬০), ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বাথানিয়া গ্রামের মৃত: মো. ইউনুছ মিয়ার পুত্র। অভাবের কারনে অষ্টম শ্রেণীর পর আর লেখাপড়াও করতে পারেননি। ১৯৭৮ সালে অভাব ঘুচাতে কর্মের সংস্থানে চলে আসেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা আড়িখোলা জুট মিলে। এখানে তিনি শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। চাকরি সুবাদে এলাকার মানুষকে আপন করে নেন তিনি। ১৯৮৮ সালে কাবিলপুর গ্রামের রাজিয়া বেগমকে বিয়েও করেন। এরই মধ্যে ২ পুত্র সন্তানের জনক হন। সংসারের খরচ বেড়ে যায়। দায়-দেনা করে ১৯৯৪ সালে সৌদী আরব, দাম্মাম এবং পাকিস্তানে পাড়ি জমান।
    প্রবাস জীবনের ৬ বছর হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দায় দেনা পরিশোধ করেন। নিজের কাছে কোন আমানত না রেখে সবই পাঠান স্ত্রীর নামে। ২০০০ সালে দেশে এসে দেখেন তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম পরকিয়ায় জড়িয়ে অন্যের ঘরে সংসার করছেন। সংসারের অভাব দেখিয়ে স্বামী সন্তানদের ফেলে চলে যান রাজিয়া। দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে রফিক বিপাকে পড়েন। এক বেলা খাবারের জোগার হলে অন্য বেলা উপুষ থাকেন। মায়া দুই পুত্রকে নিয়ে, ভাতের কষ্টের বিবরণ দিতে যেয়ে রফিক অশ্রুসিক্ত হয়ে যান। খাবার জোগাতে পরের ঘরে কাজের সন্ধানে বের হন, কোন দিন কাজ পান, কোন দিন থাকেন বেকার। কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর আবেগ মানেনা।
    দেখা হলো কৃষি উপসহকারী মো. তাজুল ইসলামের সাথে। তিনি ২ কেজী ধানের বীজ দেন রফিককে। ৩০ শতাংশ জমি বাগায় ওই বীজ ধান রোপন করেন। শুরু হয় নতুন জীবন। হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে জীবন বদলাতে থাকেন। অন্যের এক টুকরু জমিতে স্থানীয়দের সহযোগীতায় একটি দোচালা টিনের ছাউনি তুলেন। থাকার ঠিকানা হলো, এবার সন্তানদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হলেন। ২০০১ সালে ঝরনা বেগমকে বিয়ে নতুন করে সংসার শুরু করেন। পূর্বের সংসারের দুই পুত্র সন্তানের বশির আহমেদ(৩২)কে মালদ্বীপ প্রবাসে পাঠিয়ে দেন, দ্বিতীয় ছেলে ডাঃ নাজির আহমেদ(২৮)কে ডেন্টাল সার্জন তৈরী করেন। সে বর্তমানে কুমেক হাসপাতালে কর্মরত আছেন। নতুন সংসারেও ৩ পুত্র সন্তান সামিউল হাসান(১৮), অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া শেষে ট্রাক চালক। আব্দুল্লাহ সৈকত(১৪) পিতার কৃষিকাজে সহায়তা করেন। ছোট ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক(১২) পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
    কৃষক রফিক বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রনা আজ আমাকে অতদূর এনেছে। তাই দেশের মানুষের ক্ষুধা নিবারনের কাজ করে যেতে চাই। আমাকে কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় বীজ ধান উৎপাদন এবং বীজ সংরক্ষণ করে আসছি। কৃষি বিভাগ থেকে বীজ এবং পরামর্শ পেয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগীতা পাইনি। সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তফা সাহেব এবং বীনা ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট পেয়েছি আর বর্তমান দেবীদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায়ের ভালোবাসা পেয়েছি।
    এ ব্যপারে দেবীদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় জানান, রফিক আহমেদ একজন প্রগতিশীল ও আদর্শ কৃষক। আধুনিক ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষনে উনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমানে পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় উনাকে বীজ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। উনি শুধু দেবীদ্বার নয়, বাংলাদেশের গর্ব। সুলতানপুর ইউনিয়নে বাড়ি হওয়ায় এর সাথে মিলিয়ে উনাকে আমরা ‘বীজ সুলতান’ হিসেবে জানি।
    ছবির ক্যাপশনঃ ১) দেবীদ্বারের কৃষক রফিক আহমেদ (‘বীজ সুলতান রফিক(৬০) তার কৃষি মাঠে কাজ করছেন। ২) বাড়ির আঙ্গীনায় খোলা আকাশের নিচে বস্তা ও ড্রামে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন বীজ সংরক্ষণাগার। সংবাদ প্রকাশঃ ০১-০৭-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments