Sunday, February 23, 2025
spot_img
More

    দিন দিন বাড়ছে ডিভোর্স: কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়

    সিটিভি নিউজ।। __ মোয়াজ্জেম চৌধুরী সংবাদদাতা জানান === বর্তমান সময়ে ডিভোর্সের হার বেড়ে যাচ্ছে, যা পরিবার ও সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্পর্কের এই ভাঙনের পেছনে নানা কারণ রয়েছে । তবে সচেতনতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

    দেশে যেমন বিয়ের হার বাড়ছে পাশাপাশি বেড়েছে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদও । এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং দাম্পত্যজীবনে বনিবনার অভাব।

    বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২২ নামে গত জানুয়ারী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে নমুনা হিসেবে তিন লাখের বেশি পরিবারের তথ্য নেয়া হয়েছে।

    জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে হার ছিল ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ আর ২০২২ সালে ২৫ শতাংশের কিছু বেশি।

    বিবিএস বলছে, তারা তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপ করেছে। ফলে এই জরিপের মাধ্যমেই আসল কারণ উঠে এসেছে।

    এতে বলা হয়েছে, তালাকের বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ এই কারণ দেখিয়েছেন। এরপর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা, যা ২২ শতাংশ। ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।

    জরিপে উঠে আসে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি তালাক হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতায় তালাক বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে অসামর্থ্যতার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি রাজশাহীতে, চট্টগ্রামে তার তুলনামূলক কম।

    পারিবারিক চাপে তালাক বেশি ময়মনসিংহে, কম ঢাকায়। নির্যাতনের কারণেও তালাক বেশি হয়েছে ময়মনসিংহে, কম রাজশাহীতে। যৌন অক্ষমতা অথবা অনীহার কারণে রংপুরে তালাক বেশি হয়েছে। বরিশালে এ ক্ষেত্রে হার প্রায় শূন্যের কোটায় । দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটনা বেশি ঘটছে সিলেট বিভাগে ।

    বিবিএসের পরিসংখ্যানের বাইরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন সাধারণত বেশি করেন নারীরা। ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট তালাক হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৮টি।

    এর মধ্যে স্ত্রীরা আবেদন করেছিলেন ৫ হাজার ৩৮৩টি, যা মোট আবেদনের ৭০ শতাংশ। ঢাকা উত্তরের চিত্রও প্রায় একই। সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের ৬৫ শতাংশই নারী।

    ডিভোর্স বৃদ্ধির পাওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলে দীর্ঘ বর্ণনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রাসঙ্গিক ভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো :

    ১. যোগাযোগের অভাব

    অনেক দম্পতি খোলামেলা কথা বলেন না, ফলে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।

    ২. অর্থনৈতিক চাপ ও মতভেদ

    অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন বাড়ে।

    ৩. অবিশ্বাস ও প্রতারণা

    পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব ও পরকীয়া সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে ডিভোর্সের অন্যতম কারণ।

    ৪. পারিবারিক হস্তক্ষেপ

    স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়ে পরিবারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ায়।

    ৫. গুরুত্ব না দেওয়া ও অবহেলা

    একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া ও অবহেলা করলে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে।

    ৬. গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মতপার্থক্য

    সন্তান লালন-পালন, কর্মজীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় একমত হতে না পারলে দূরত্ব তৈরি হয়।

    ৭. গার্হস্থ্য সহিংসতা

    মানসিক, শারীরিক বা আর্থিক নির্যাতন অনেক সম্পর্কের ইতি টানে।

    ৮. সামাজিক ও প্রযুক্তিগত প্রভাব

    সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, অপ্রয়োজনীয় সন্দেহ, অথবা বাইরের সম্পর্কের কারণে দূরত্ব বাড়ে।

    ৯. পরকীয়া প্রেমে আসক্ত

    বর্তমানে ভার্চুয়াল ও স্বামী বা স্ত্রীর অবাদ চলাফেরা বিভিন্ন নারী/পুরুষ একাধিক অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে যার কারণে সংসারে বিবেধ সৃষ্টি হয়।

    আর এসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আচরণ ও ভুল বুঝাবুঝি এবং মতানৈক্য সৃষ্টি হয়ে এক পর্যায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স হয়ে থাকে।

    ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ প্রতিরোধে করণীয়

    ১. সঠিক ও খোলামেলা যোগাযোগ করুন

    পরস্পরের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং মতামত দেওয়া সম্পর্ক দৃঢ় করে।

    ২. পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখুন

    একে অপরের মতামত, কাজ ও অনুভূতিকে সম্মান করুন।

    ৩. বিশ্বাস ও সততা বজায় রাখুন

    সম্পর্কের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে সন্দেহ বা ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ কমে যায়।

    ৪. সমস্যা সমাধানে ধৈর্য ধরুন

    ঝগড়ার সময় আবেগী না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সমাধানের পথ খুঁজুন।

    ৫. সময়ের সঠিক ব্যাবহার করুন

    কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন।

    ৬. পারিবারিক হস্তক্ষেপ কমান

    সমস্যা সমাধানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কমিয়ে নিজেদের মধ্যে সমাধান করুন।

    ৭. পেশাদার সাহায্য নিন

    প্রয়োজনে বিবাহ পরামর্শদাতা (Marriage Counselor) বা মনোবিদের সাহায্য নিন।

    ৮. ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা চর্চা করুন

    নৈতিকতা ও পারস্পরিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন থাকলে সম্পর্ক মজবুত হয়।

    ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে পরিশেষে বলা যায়,

    ডিভোর্স সবসময় নেতিবাচক নয়; অনেক ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজনীয়ও হতে পারে। তবে অপ্রয়োজনীয় বিচ্ছেদ এড়াতে দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বোঝাপড়া বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা এই ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ কমাতে পারি।

    লেখক
    মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
    গবেষক, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
    ইমেইল – pressmuazzambd@gmail.com সংবাদ প্রকাশঃ ১৫-০২-২০২৫ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= ==আরো =বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে নিউজ লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments