Thursday, December 5, 2024
spot_img
More

    *মেডিকেল শিক্ষা : জ্ঞান, দক্ষতা ও মনোভাব।*

    সিটিভি নিউজ।। ( *লেখকঃ ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ) ডা. বরকত (কাল্পনিক) এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কারিকুলাম অনুযায়ী পড়াশোনা করে চিকিৎসা দেয়া শিখেছেন। সে শিক্ষা নিয়ে তিনি রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন। তিনি অনুভব করেন তার পড়াশোনা ও চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া প্রয়োজন।

    মেডিকেল শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা বিজ্ঞান, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং রোগ প্রতিরোধের মতো জ্ঞান অর্জন করে। তবে এটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। চিকিৎসা পেশার প্রকৃতি এমন যে এটি জ্ঞান, দক্ষতা এবং সঠিক মনোভাবের সম্মিলনে গড়ে ওঠে। এই তিনটি উপাদান একে অপরের পরিপূরক এবং চিকিৎসকের সামগ্রিক দক্ষতার ভিত্তি।

    ডা. বরকতের চিকিৎসা দেয়ার শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান, চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা হচ্ছে দক্ষতা আর সঠিক চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন এই অনুভূতিই হচ্ছে মনোভাব।

    মেডিকেল শিক্ষায় জ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একজন চিকিৎসকের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা নিশ্চিত করে।

    আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান: বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স এবং মেডিসিন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর গভীর অধ্যয়ন।

    রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি: বিভিন্ন রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ বোঝা এবং সেগুলো মূল্যায়ন করা।

    প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন: চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং গবেষণার সর্বশেষ অগ্রগতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া।

    তবে কেবলমাত্র তথ্য সংগ্রহই যথেষ্ট নয়। চিকিৎসকদের এই জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

    মেডিকেল শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন হলো ক্লিনিকাল ও সার্জিকাল কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা। এই দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।

    ক্লিনিকাল দক্ষতা: রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ, রোগের ইতিহাস গ্রহণ এবং শারীরিক পরীক্ষা।

    প্রযুক্তিগত দক্ষতা: বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ল্যাবরেটরি টেস্ট পরিচালনা এবং অপারেশন করার সক্ষমতা।

    সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

    দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, ক্লিনিক্যাল রোটেশন এবং ইন্টার্নশিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    মনোভাব: পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা

    মনোভাব মেডিকেল পেশার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। চিকিৎসকের সঠিক মনোভাব রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল, নৈতিক এবং দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করে।

    নৈতিকতা: রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান।

    সহানুভূতি: রোগীর কষ্ট ও দুর্ভোগ বুঝতে পারা এবং তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা।

    দায়িত্বশীলতা: নিজের কাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা এবং নিজের দক্ষতা ক্রমাগত উন্নত করা।

    জ্ঞান, দক্ষতা এবং মনোভাব—এই তিনটি উপাদান মেডিকেল শিক্ষার মূল স্তম্ভ। একজন চিকিৎসক তখনই সফল হন, যখন তিনি এই তিনটি দিক সমন্বয় করে কাজ করতে পারেন। শুধুমাত্র জ্ঞান থাকলে দক্ষতার অভাবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। দক্ষতা থাকলেও সঠিক মনোভাব না থাকলে রোগীর আস্থা অর্জন করা কঠিন। মনোভাব ভালো হলেও জ্ঞান বা দক্ষতার অভাব রোগ নিরাময়ে ব্যর্থতা ডেকে আনতে পারে।

    বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা কারিকুলামের লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক, দক্ষতা সম্পন্ন ও ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন চিকিৎসা জনশক্তি তৈরি করে দেশের জনগনের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।

    সরকারি – বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস স্নাতক কোর্স, বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান ও কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন থেকে একটানা মেডিকেল শিক্ষা ও ট্রেনিং প্রদানের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১৭৮টি পদ নিয়ে গঠিত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে।

    বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন চিকিৎসকদের নিবন্ধন-নিবন্ধন বাতিলসহ আইনের আওতায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিশ্বমানের সাথে তাল মিলিয়ে রাখতে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন আ্যক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান যাচাইপূর্বক বিধি অনুযায়ী নিবন্ধন প্রদান করবে এবং দেশের চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সনদপ্রাপ্ত সকল চিকিৎসক যাতে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা সেবা দিতে পারে সেজন্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ মেডিকেল এডুকেশনে নিবন্ধিত হবে।

    প্রতি বছর দশ হাজারের অধিক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এ সকল মেধাবী শিক্ষার্থীগন ডা. বরকতের ন্যায় জ্ঞানভিত্তিক, দক্ষতা সম্পন্ন, ইতিবাচক মনোভাবপন্ন চিকিৎসক হিসাবে দেশে-বিদেশে বিশ্ব মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে এই প্রত্যাশা করি।

    *লেখকঃ ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন,
    সহযোগী অধ্যাপক (ফার্মাকোলজি), নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ।* সংবাদ প্রকাশঃ =০১-১২-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments