Friday, November 22, 2024
spot_img
More

    “বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন” নোয়াখালীতে বন্দোবস্তের পাঁচগুণ জায়গা অবৈধভাবে দখল

    সিটিভি নিউজ।। নোয়াখালী প্রতিনিধি=============
    চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত নিয়ে দোকানঘর নির্মাণ, পরবর্তীতে বন্দোবস্তের চার থেকে পাঁচগুণ জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বিল্ডিং কোড না মেনেই গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। এভাবেই বেহাত হয়ে যাচ্ছে গণপূর্ত বিভাগের সরকারি হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। প্রশাসনের নাকের ডোগায় এসব অবৈধ দখল কর্মযজ্ঞ চললেও আইনি কোন বেগ পেতে হচ্ছে না দখলদারদের। সরকারি জায়গার জলাশয়, খাল ও ড্রেন দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ এসব স্থাপনার কারণে শহরজুড়ে তৈরী হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

    সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন, সাংবাদিক এমবি আলম, মাহবুবুর রহমান টিপুসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন খোকন। নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে ৬৫ ফুট সরকারি ভূমি চান্দিনা ভিটি হিসেবে বন্দোবস্ত নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল সেন্টার নামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে নোয়াখালী চার লেন সড়ক বাস্তবায়নের জন্য তাঁর বন্দোবস্তকৃত ওই ৬৫ ফুট চান্দিনা ভিটি থেকে ২৪ ফুট ভূমি অধিগ্রহন করে নেয় সরকার। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন খোকনকে ৮৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়েও তাঁর বন্দোবস্তকৃত ৪১ ফুট জায়গার বাহিরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠানের পিছনের অংশের ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ ফুট খালি সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নোয়াখালী পৌরসভার বিল্ডিং কোড না মেনেই গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। তাদের মতে, এই যেন এক রামরাজত্ব!

    স্থানীয় এসব ব্যক্তি আরো বলেন, শুধু সাহাব উদ্দিন খোকনই নয়, জেলা শহরের সোনালী ব্যাংকের দক্ষিণ পাশ থেকে বক্শি মিজির পোল পর্যন্ত প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে ৬৫ ফুট সরকারি ভূমি চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত নিয়ে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তুলেন অবৈধ স্থাপনা। কেউ কেউ সরকারি খাল, ড্রেন ও কালভার্টের মুখ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফেলেছেন। এসব বহুতল ভবন নির্মাণে কেউই পৌরসভার বিল্ডিং কোড বা প্ল্যান অনুমোদন নেননি। সরকারি জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় জেলা শহরে এবার বন্যা পরবর্তী দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণের কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্টসসহ দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা।

    শহরের বিশাল সেন্টারের জায়গার বন্দোবস্তের পরিমাণ, বাড়তি জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানের মালিক সাহাব উদ্দিন খোকনের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তার বক্তব্য জানতে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালোও তিনি কোন বক্তব্য দেননি।

    স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে বিভিন্ন সময় সভা-সেমিনার ও প্রশাসনের কাছে জোর আবেদন-নিবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বড় ধরনের দুর্যোগ অথবা জনসাধারণের জোর প্রতিবাদে ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দু-একটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও বছরের পর বছর প্রভাবশালীদের চত্রছায়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা উচ্ছেদে রহস্যজনক ভাবে কোন কার্যক্রম পরিচালনা নজরে আসেনি।

    স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্তব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের মোটা অংকের বিনিময়ে ম্যানেজ করে সরকারের কোটি কোটি টাকার এসব সম্পত্তি দখলে নিয়েছে প্রভাবশালী দখলদাররা জেলা শহরে বন্যা ও জলাবদ্ধতার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরী হয়। মানবসৃষ্ট এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

    জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান বলেন, গত ১৫-২০ বছরে শহরের বেশিরভাগ সরকারি জায়গা, জলাশয় ও খালগুলো দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। যার কারণে এখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সরকারি এসব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জলাশয় উন্মুক্ত ও খালগুলোর পানির গতিপথ সচল করার এখন সময় এসেছে। আশা করছি বর্তমান প্রশাসন এব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে নোয়াখালী শহরের সৌন্দর্য রক্ষা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে।

    ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্ল্যান পাসের বিষয়ে নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুজিত বড়ুয়া বলেন, পৌর এলাকায় যেহেতু মানুষের বসবাসের গণত্¦ রয়েছে, সেই ক্ষেত্রে এখানে প্ল্যান পাস ছাড়া প্রত্যেকটি বিল্ডিংই ঝুঁকিপূর্ণ। জেলা শহরের প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশের চান্দিনা ভিটিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্ল্যান অনুমোদন দিতে গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদেরকে চিঠি নিয়ে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণের সময় ভিটির মালিকরাও আমাদের সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ করেনি।

    গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, শহরের সোনালী ব্যাংক থেকে বকস্ মিজির পোল পর্যন্ত যে চান্দিনা ভিটি হিসেবে ৬৫ ফুট বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর কাগজপত্রও সঠিকভাবে নেই। তারমধ্যে নোয়াখালী ফোরলেন সড়ক বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের দখলকৃত জায়গা থেকে ২৪ ফুট জায়গা অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ দিয়ে অধিগ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে অনেকেই তাদের দোকানের পিছনের অংশে অনেক জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে।

    সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ এসব স্থাপনা কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কোন ম্যাজিস্ট্রিসি পাওয়ার নেই। জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করলে আমরা অভিযান করতে পারি। কবে নাগাদ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে এমন প্রশ্নে মো. কামরুল হাসান বলেন, আমরা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসন বরাবর চিঠি লিখবো। জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
    জেলা প্রশাসক খন্দাকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, সরকারি জায়গা ও খাল দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। শীঘ্রই শহরের প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধার করা হবে।সংবাদ প্রকাশঃ =১৭-১০-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments