Wednesday, October 9, 2024
spot_img
More

    নারায়ণগঞ্জে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে

    সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে নিট শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট শিল্পে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বর্তমানে জেলার গার্মেন্টসগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রায়শই বিভিন্ন গার্মেন্ট মালিকরা বায়ারদের নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে করে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে শিল্পমালিকরা। এহেন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জে অনেক গার্মেন্ট লোকসানের কবলে বন্ধ হয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন গার্মেন্ট মালিকরা।
    কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় গার্মেন্টস রয়েছে ১ হাজার ১৫১টি। স্পিনিং অ্যান্ড কটন মিল রয়েছে ২১টি। টেক্সটাইল রয়েছে ৪৩৮টি। ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে ১১৬টি। এক্সেসরিজ তৈরির কারখানা রয়েছে ১২০টি। জেলায় সব ধরনের মোট কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ২২১টি। এছাড়াও হোসিয়ারী ২ হাজার ৪৮০টি, টেক্সটাইল ৩০টি, নিটিং ৫৬টিসহ সর্বমোট ২ হাজার ৭২১টি অরেজিস্ট্রিকৃত কারখানা রয়েছে। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লাতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট কারখানা। বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে ধুঁকছে রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত এই গার্মেন্ট সেক্টর।
    ফতুল্লার হাজীগঞ্জের আনোয়ারা গ্রæপের সুইং বিভাগের সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম জানান, গ্যাসের ব্যবহার বেশি হচ্ছে ডাইংয়ে। গার্মেন্টে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি। বর্তমানে গ্যাস বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে আমাদের উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি অর্ডারও কমে যাচ্ছে। বর্তমানে লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের কাজের পরিধিও কমে গেছে। আগে আমরা ওভারটাইম করতে পারতাম। শ্রমিকদের আয়ও আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু এখন শুধুমাত্র বেসিকেই কাজ করতে হচ্ছে। এক্সট্রা কোন আয় হচ্ছে না।
    মডেল গ্রæপের শ্রমিক বিপ্লব হোসেন জানান, আগে আমাদের যে আয়টা হতো সেটা গ্যাস বিদ্যুতের প্রবলেমের কারণে অনেক কমে গেছে। আগে দৈনিক ৪ থেকে ৫’শ টাকা আয় হতো এখন সেটা ৩ থেকে ৪’শ টাকায় নেমে এসেছে।
    গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জানান, গ্যাস ও বিদ্যুতের যে বিষয়টি এটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রবলেম নিরসনে হয়তো একটু সময় লাগবে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার চেষ্টা করলে এটা সমাধান করতে পারবে। বর্তমানে গার্মেন্ট শিল্পের পরিবেশ অশান্ত করতে আন্তর্জাতিক নানা ইন্ধন আছে। এগুলো মোকাবিলা করে এগুতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
    ইউনিটি নিট কম্পোজিটের জিএম (ডাইং) রাজীব আহাম্মেদ জানান, কখনো কখনো এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, গ্যাস একেবারেই থাকে না জিরো পিএসআই থাকে। তখন ডাইং ফিনিশিং কিছুই চলে না। শুধু গ্যাসই নয় বিদ্যুতের লোডশেডিংও মারাত্মক অবস্থা। এক ঘণ্টা থাকলে আরেক ঘণ্টা থাকে না। আমাদের গ্যাসের বিলও দিতে হচ্ছে বিদ্যুতের বিলও দিতে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, মেশিনে রং দেয়া হয়েছে কিন্তু তখন যদি বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে মেশিন শাটডাউন হয়ে পুরো রংটাই নষ্ট হয়ে যায়। তখন সেটা ঠিক করতে ডাবল কস্ট লাগে। গার্মেন্টগুলো কোনরকম চললেও ডাইংগুলো গ্যাস বিদ্যুৎ না থাকলে চালানো অসম্ভব। এক্সপোর্ট সাধারণত একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে করতে হয়। করতে না পারলে গার্মেন্টগুলো ডিসকাউন্ট খাচ্ছে। আমরা বেতন দিতে পারছি না। ওভারটাইম দিতে পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটা ভেবে পাচ্ছি না।
    তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে গ্যাস বিদ্যুৎ নিয়ে চরম সঙ্কটে রয়েছি। বিগত সরকারের আমলে যখন গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি করা হলো তখন কথা ছিল আমাদেরকে আনইন্টারেপ্টেড পর্যাপ্ত গ্যাস দিবে। এজন্যই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু সত্য হলো আমরা বর্ধিত দামেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাইনি। বর্তমানে কোন কোন এলাকায় তো গ্যাস একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণেও আমরা অনেক সমস্যায় ভুগছি। বর্তমান সরকারকে আমরা বলেছি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব সমস্যার সমাধান করতে। গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন ৫০ ভাগে নেমে এসেছে। কোন কোন স্থানে উৎপাদন ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমেছে। অঞ্চলভেদে গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি। সাভারের ওই সাইডটাও ভুক্তভোগী। দেখা যায়, আমাদের এক্সপোর্টের একটা টাইম লিমিটেশন রয়েছে। টাইম লিমিটেশনে শিপমেন্ট ফেইল করলে যেটা হয় বায়ার আমাদের কাছে হয় ডিসকাউন্ট দাবি করে নয়তো এয়ার শিপমেন্ট করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়। তবে এটা হলো ইনস্ট্যান্ট ক্ষতি। আর লংটার্ম যে ক্ষতি সেটা হচ্ছে যে, বায়ার আমার উপর আস্থা হারানোর পর আমাকে আর অর্ডার দিবে না। তখন সে হয়তো বাংলাদেশেই অন্য কারো কাছে যাবে নয়তো দেশের বাহিরে অন্য কোথাও যাবে।
    মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, আমরা যে কয়েকটা সমস্যা চিহ্নিত করেছি তার মধ্যে ১নং কারণ হচ্ছে গ্যাস বিদ্যুতের সঙ্কট। এটা নিয়ে যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা যায় তাহলে হয়তো ইমিডিয়েট সমাধান পেতে পারি যদিও এটা সমাধানে লংটার্ম সময় লাগবে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনে সরবরাহ করা হলে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান কিছুটা হতে পারে।
    তিনি বলেন, আমি হতবাক গত সরকারের সময় শুনেছিলাম আমরা বিদ্যুৎ সারপ্লাস উৎপাদন। তাইলে সেই বিদ্যুৎ গেল কোথায়? এটা কি কোনো সাবোটাজ কিনা এটা দেখার বিষয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ কিন্তু কনটিনিউয়াস থাকছে না। অথচ তেলের দাম আগে যেখানে ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছিল সেটা ৭০ ডলারে নেমে এসেছে। এতে উৎপাদন খরচ কমার কথা। আগে ক্যাপাসিটি চার্জ নামে বিদ্যুৎ না নিয়েও অনেক বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে টাকা দেয়া হয়েছিল। এই টাকা কিন্তু জনগণের টাকা। এখানে জনগণের বিপুল পরিমাণ টাকা অপচয় হয়েছে। আমরা যদি গ্যাস বিদ্যুৎ না থাকার কারণে শিপমেন্ট করতে না পারি রপ্তানি করতে না পারি তাহলে বেতন দিব কিভাবে। সংবাদ প্রকাশঃ =০৮-১০-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments