Sunday, November 24, 2024
spot_img
More

    নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি

    সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তিন হাজার ৭’শ ১৭ দশমিক ৫০ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ বাবদ ৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। মাত্র ২০৫ বর্গমিটারের ঘর নির্মাণ করেই ব্যয় দেখানো হয়েছে চার কোটি টাকা। যার নির্মাণ ব্যয় সর্বোচ্চ ২২ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
    প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১৮ মিটার রাস্তা নির্মাণ বাবদ ৫ কোটি ২ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়। অথচ ১ হাজার ১২ মিটার রাস্তা নির্মাণ করেই সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার শুধু তিন অর্থবছরের মোট ১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার জমা না দিয়ে প্রকল্পের হিসেবে জমা দেওয়া হয়, যা আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সরেজমিনে পরিদর্শনে দুর্নীতির এ চিত্র উঠে এসেছে।
    নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, আমি আসার আগেই এ প্রকল্পটির কাজ হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি খুব বেশি দিন হয়নি। আমার মনে হয় প্রকল্পের এক খাতের টাকা অন্য খাতে গেছে। প্রকল্পটির কাজ শতভাগ সমাপ্ত ঘোষণা করার পরও কিছু অর্থ সংস্থানের জন্য আবার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। প্ল্যান্ট তৈরির কথা ছিল সেটার কাজ কিছুই হয়নি। এ খাতে বরাদ্দ অর্থ অন্য খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
    আইএমইডি জানায়, পরিদর্শনকালে অফিস ভবন পাওয়া গেছে মাত্র ২০৫ বর্গমিটার। ২ হাজার ১৮ বর্গমিটারের পরিবর্তে ১ হাজার ১২ মিটার রাস্তা পাওয়া যায়। এ খাতের প্রকৃত ব্যয় হওয়ার কথা ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অথচ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি টাকার ওপরে। ২ হাজার ৫ বর্গমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। আরসিসি ড্রেন মাত্র দেড় হাজার বর্গমিটার পাওয়া গিয়েছে। সেই হিসাবে ব্যয় হওয়ার কথা ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। অথচ ড্রেন নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি টাকা।
    দুর্নীতির ফাঁদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কাজ ছাড়াই গায়েব ৭ কোটি টাকা ঃ প্রকল্পের উপ-পরিচালক নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরীর বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। এর পরে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়ছে না।
    একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১৯১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। জুলাই ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কয়েক ধাপে বাড়তে বাড়তে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় জুন ২০২৪ নাগাদ। জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও যৌক্তিকতা না থাকায় সেটি করা হচ্ছে না। বলে সূত্র জানায়।
    সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি ১৫ কোটি টাকা ঃ চলমান প্রকল্পটির আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অবমুক্ত অর্থের ১২ কোটি ৪ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ৩৫ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ৩ কোটি ১৪ লাখসহ মোট ১৫ কোটি ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নিয়মানুযায়ী সরকারি কোষাগারে সমর্পণ করার কথা। এটা না করে প্রকল্পের হিসাবে জমা রাখা হয়। এ বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলে জানায় আইএমইডি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এরা শুধু দুর্নীতি করেননি, বহুমাত্রিক প্রতারণা করেছেন। যারা জড়িত তাদের জবাবহিদিতার আওতায় আনতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহার করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। তার একটা ছোট দৃষ্টান্ত মাত্র। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না।
    প্রকল্প শেষ অথচ শুরু হয়নি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন! ঃ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সংগ্রহ করা কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ৬০০ টন বর্জ্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্ল্যান্টে সরবরাহ করা। এ লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে প্রতিদিন ৬০০ টন বর্জ্য সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় টনপ্রতি জরিমানা দিতে হবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্টটির কাজ শুরুই হয়নি। এছাড়া এ বর্জ্য সরবরাহের জন্য লজিস্টিক সক্ষমতা সিটি করপোরেশনের নেই।
    আইএমইডি বিভাগের পর্যবেক্ষণ বাকি অর্থ খরচের জন্যই মেয়াদ বৃদ্ধি ঃ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি শতভাগ। অর্থাৎ প্রকল্পটির আওতায় কোনো কাজ বাকি নেই এবং বরাদ্দের বিপরীতে আর্থিক অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অবমুক্তি সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরএডিপি বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
    মন্ত্রণালয় থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, আরএডিপি বরাদ্দ ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে, প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি দেখানো হয়েছে শতভাগ। অর্থাৎ প্রকল্পটির আওতায় কোনো কাজ অবশিষ্ট নেই। তাহলে চাহিত অর্থ কোন কাজে ব্যয় হবে তা প্রস্তাবে স্পষ্ট নয়।
    এ বিষয়ে আইএমইডির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, প্রকল্পের আওতায় কাজের কাজ কিছু হয়নি। এর বদলে জনগণের টাকা লুট হয়েছে। পরিদর্শনে গিয়ে পদে পদে দুর্নীতি দেখেছি। সংবাদ প্রকাশঃ ২০-৯-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments