Thursday, September 19, 2024
spot_img
More

    নিট শিল্পের শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে নারায়ণগঞ্জে মতবিনিময় সভা

    সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : নিট শিল্পের সূতিকাগার নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে শ্রম শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
    মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ইউরোপ আমেরিকার ক্রেতারা (বায়ার) আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। যে কোনো মূল্যে ইন্ডাস্ট্রির চাকা চালু রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে মালিকদের যেমন লোকসান হবে তেমনি শ্রমিকরাও কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে অনেক অর্ডার চলে গেছে, ক্রিসমাসের অর্ডার বেশিরভাগই চলে গেছে। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় অনেকদিন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এগুলো মেনে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।
    তিনি আরও বলেন, দাবি হল বেতন বাড়ানোর। এখানে মজুরি বোর্ড আছে। এটা দেখতে হবে। তবে এটার জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিলে তো সমাধান হবে না।
    তিনি বলেন, এখানে মেরিটের ওপর ভিত্তি করে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। আমাদের জেন্ডার ইস্যু বায়ারদের জন্য ইম্পর্ট্যান্ট। এখানে পিছিয়ে পড়া নারীরা কাজ করছে। এটা বায়ারদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
    শ্রমঘন এলাকাগুলোতে আমরা টিসিবির সঙ্গে কথা বলে এই এলাকাগুলোতে পণ্য বিক্রি বাড়ানোসহ প্রণোদনার মতো ব্যবস্থা করছি। এখানে অনেক দাবি এসেছে। আমরা এগুলো প্রক্রিয়া অনুযায়ী করবো। আবার অনেক দাবি আছে অযৌক্তিক।
    শ্রম সচিব বলেন, আমি মালিক পক্ষকে নিয়ে হতাশ। আমাদের শ্রমিক প্রতিনিধিদের কথা শোনার ধৈর্য্য না থাকলে তো এটা সমাধান হবে না। কথা শুনতে হবে। শ্রমিকদের সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের অনেক বিভেদ রয়েছে। আমাদের এসকল জায়গায় ফোকাস করা দরকার।
    তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্টের পর অনেক বড় বড় মালিক পালিয়ে গেছে, আইনের আওতায় চলে এসেছে। সেখানে বেতন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমে বেক্সিমকো থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। সরকার ইতোমধ্যে একটি ফান্ড তৈরি করে সমাধান করেছে। আমি মনে করি এগুলো বড় কোনো সমস্যা না।
    শফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। আপনাদের যত আবেদন সেখানে দেন। ইতোমধ্যে আমার কাছে ১৩৮টি অভিযোগ এসেছে। প্রতিটি অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন, আমি শ্রমিক নেতাদের বলব, ফৌজদারি অপরাধীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যারা আগুন দিয়েছে, তাদের ধরলে আপনারা ব্যারিকেড দিয়ে আবার বলবেন ছেড়ে দিতে, সেটা করা যাবে না। অনেক কমিটি পলিটিসাইজ হয়ে গেছে। আমরা এগুলো সংস্কার করবো।
    তিনি বলেন, যে কোনো সময় আপনারা পরামর্শ দেবেন। আমরা আইনগতভাবে আপনাদের সহায়তা প্রদান করবো। এক হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আমরা কিন্তু গুলির সামনে দাঁড়ানোর সাহস করতাম না, কিন্তু তারা করেছে। ওরা আন্দোলন করেছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
    সবশেষে তিনি বলেন, আপনারা শ্রমিক নেতারা এখানে বলে যান, আগামীকাল সোমবার থেকে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ হবে না, হলে আপনারা দ্রæত সমস্যাটা চিহ্নিত করে আমাদের বলবেন, আমরা দ্রæত সে বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করবো। কেননা আর্মি পাহারা দিয়ে গার্মেন্টস চলতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ সারা দেশে একটি মডেল।
    বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে বায়াররা কিন্তু এই দেশে আসতে চাইবে না, অর্ডার দিতে চাইবে না। এই সংকটের সময় শ্রমিক, মালিক, সরকার আমরা সবাই যদি একসাথে কাজ করতে না পারি, তাহলে সংকট কিন্তু আরও বাড়বে।
    তিনি আরও বলেন, যে কোনো দাবি থাকতে পারে, যেটা আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা না করে, ফ্যাক্টরী ভাংচুর করে, হামলা করে কোনো লাভ হবে না। কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকদের কোনো লাভ হবে না।
    সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের যৌক্তিক সকল দাবি আমরা পূরন করবো। কিন্তু অযৌক্তিক কোনো দাবি, মেনে নেয়া হবে না। তিনটি বিদেশী ফ্যাক্টরির মালিক এখানে ছিলো, তাদের অন্যান্য দেশে ফ্যাক্টরী আছে। তারা বাংলাদেশে আরও বৃহৎ পরিসরে ইনভেস্ট করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অবস্থা যদি এমন থাকে তাহলে তারা এই দেশ থেকে তাদের ব্যবসা অন্য দেশে নিয়ে যাবে তারা।
    তিনি বলেন, বিদেশীদের হাতে এই ব্যবসাটা যাতে চলে না যায়। কারা লাভবান তা আপনারা সকলেই জানেন। কাজেই এই শিল্প যাতে ধ্বংস না হয়, সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
    তিনি আরও বলেন, এই দেশটা আমাদের, এই দেশ এগিয়ে নিতে মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা প্রত্যাশা করছি। দেশের এই শিল্প যাতে অন্য কোনো দেশে চলে না যায়, সেলক্ষ্যে সকলকে সজাগ রাখতে হবে।
    বিজেএমইর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, পোশাক শিল্পে এই দেশে যত লোক কাজ করে, তত লোক অন্য কোনো পেশায় কাজ করে না। বিশেষ করে নারীদের এই শিল্পে বড় অংশগ্রহন রয়েছে। নারীরা এই শিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে। মিডিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাদাকে সাদা বলা, কালোকে কালো বলার মতো সৎ সাহস আপনাদের থাকতে হবে।
    শিল্প পুলিশ সদর দপ্তরের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. সিবগাত উল্লাহ বলেন, গত ১৪ দিন যাবৎ আশুলিয়ায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে হামলা হচ্ছিলো। ঐ সময়টায় আমি, আইজিপি স্যার ও স্বরাষ্ট্র সচিব মহোদয় সর্বদা টেনশনে থাকতাম, কখন কোন ফ্যাক্টরীতে যেন হামলার ঘটনা ঘটে।
    কিন্তু এ সময়ে নারায়ণগঞ্জে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। এটা সম্ভব হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক, মালিকসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
    তিনি আরও বলেন, মালিকরা যদি নিয়মিতভাবে বেতন পরিশোধ করেন, তাহলে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ হবে না। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ
    নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যেখানেই যে সমস্যা হয়েছে, শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে, সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর এই সাপোর্ট ছাড়া নারায়ণগঞ্জে এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন ছিলো। শ্রম আইন অনুযায়ী, মালিকরা যদি প্রতিষ্ঠান চালায় তাহলে কোথাও শ্রমিক অসন্তোষ হবে না।
    জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, একটি দেশের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায় পুলিশ বাহিনীর কাছে। কিন্তু কিছুদিন আগে পুলিশ বাহিনী দেশের মানুষের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারেনা। সেই অবস্থায় আমি প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, এই নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ডান্ডি ছিলো, এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে। এজন্য যা যা করণীয়, তা আমি করবো।
    নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান বলেন, গার্মেন্টসগুলোতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে শ্রমিকদের যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, আমার কাছে তা মনে হয় না। আমি মনে করি, এখানে সমন্বয়ের সমস্যা আছে। কেননা, আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের সহযোগীতায় আমার গার্মেন্টে এমন কোনো সমস্যা এখনো দেখা যায় নি। সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশ বাঁচলে, আমরা বাঁচবো, গার্মেন্টস বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে।
    মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তরিকুল আলম, সেনাবাহিনীর জেলা কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল আতিক, নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহা. আসাদুজ্জামান প্রমুখ। সংবাদ প্রকাশঃ =১৬-৯-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=

    আরো সংবাদ পড়ুন

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -
    Google search engine

    সর্বশেষ সংবাদ

    Recent Comments