সিটিভি নিউজ।। এমদাদুল হক সোহাগ:সংবাদদাতা জানান ===
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সাবেক সাংসদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাড়ির কেয়ারটেকার কসবার কথিত দ্বিতীয় মন্ত্রী ইদ্রিস মিয়াকে কুমিল্লায় গ্রেফতার করেছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এর আগে নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় তাকে জনতা আটক করে স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়ার জিম্মায় দেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। গ্রেপ্তার ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে আইনমন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ, জমি দখল সহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে অন্তত চারটি লিখিত এজহার কোতয়ালী মডেল থানাতে দাখিল করেন ভূক্তভোগীরা। এর মধ্যে বিষ্ণপুর (মুন্সেফ কোয়ার্টার) এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নানের দায়ের করা অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে ওই মামলায় শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করে কোতয়ালী থানা পুলিশ। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামের হাচুঁ ভূইয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম সোহাগ, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা শাহীনুল ইসলাম শাহীন, কৃষকলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রমজান ও রঞ্জন সেন। এদিকে, দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক ইদ্রিস মিয়াকে গ্রেপ্তারের খবরে কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামে কয়েকটি আন্দ মিছিল সহ কসবা উপজেলার সকল স্তরের মানুষের মাঝে স্বস্থি বিরাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ইদ্রিস মিয়া সাবেক আইনমন্ত্রীর বাবা সাবেক সাংসদ সিরাজুল হকের গ্রামের বাড়ির বেতনভূক্ত কেয়ারটেকার (গ্রামের ভাষায় বছইরা মুনি) ছিলেন। আনিসুল হক স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই মহা ক্ষমতাধর বনে যান কেয়ারটেকার ইদ্রিস মিয়া। মন্ত্রী ইদ্রিস মিয়াকে তাঁর ছোটভাই পরিচয় দিতেন। ডিসি-এসপি ইদ্রিসের কথায় চলতে হয়েছে। কসবা থানায় দায়ের হওয়া মামলা ইদ্রিসের কথায় রেকর্ড হতো বা ঝুলে থাকতো। ইদ্রিসের সুনজর ছাড়া কেউ ন্যায় বিচার পেতো না। পুরো এলাকায় ইদ্রিস নিজস্ব বলয় এবং বাহিনী তৈরি করে ফেলেন। তার এসএসসি পাশ ছেলে আলাউদ্দিন বাবুকে বানিয়ে ফেলেন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ)। ব্যক্তিগত সহকারি হওয়ার আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মন্ত্রীর গুলশান অফিসে অতিথিদের চা পরিবেশন করতো আলাউদ্দিন বাবু। পরবর্তীতে পিএ বনে যান তিনি। শুরু হয় ইদ্রিস-বাবুর নতুন সিন্ডিকেট। আইনমন্ত্রণালয়ে বিগত সরকারের সময়ে প্রায় আড়াই হাজারের বেশী মানুষকে চাকরি দেন আইনমন্ত্রী। তাদের অল্প কজন ছাড়া বাকী সকলকেই টাকা দিয়ে চাকরি নিতে হয়েছে। ইদ্রিস বাবুর ইশারা ছাড়া কোন চাকরিই হতো আইনমন্ত্রণালয়ে। তাছাড়া ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম আরেক প্রভাবশালী ছিলেন মন্ত্রীর আত্মীয় পানিয়ারুপের পিএ শফিকুল ইসলাম সোহাগ। জানা যায়, সোহাগ এক সময় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। মানুষের বাড়িতে জমিতে কাজ করে খেতে হয়েছে। সেই সোহাগ, ইদ্রিস-বাবু সিন্ডিকেট করে কসবা আখাউড়ার মানুষকে চাকরি দেয়ার নাম করে অন্তত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব রেজিস্টার, জেলা রেজিস্টার এবং বিচারকদের বদলী, পিপি-এপিপি নিয়োগ, বদলী বানিজ্য করে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এলাকার মাদক ব্যবসা। পানিয়ারুপস গ্রাম ছিল ভারতীয় মাদক পাচারের নিরাপদ রুট। ইদ্রিস-বাবু- সোহাগ শুধু এখানেই থেমে থাকেননি, কসবা আখাউড়ার রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা। সাবেক আইনমন্ত্রী তাদের কথার বাইরে কারো কথা শোনতেন না।
কসবা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে ইদ্রিস-বাবু-সোহাগের পছন্দের মানুষই পেতেন মনোনয়ন বা দলীয় সমর্থন। তাদের মতের বাইরে যারাই গিয়েছে তারাই মামলা হামলার শিকার হয়েছেন।
কসবা পৌরসভার সাবেক মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল বলেন, এই মুনীর পুতের জ্বালায় আওয়ামীলীগটা শান্তিতে করতে পারিনি। কসবার মানুষের রক্তচুষে খেয়েছে তারা। তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানায়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রীর ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের ২০ লাখ টাকার জমি রেজিস্ট্রেশন করে নিয়ে যায় ইদ্রিস গং। ক্ষতির ভয়ে আমরা মুখ খোলতে পারিনি। আইনমন্ত্রণালয়ে বেঞ্চ সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাকরির জন্য টাকাতো নিছে নিছে, রাস্তার পাশের জমিও লিখে দিতে হয়েছে ইদ্রিস ও তার ছেলেকে। খবর নিয়ে আরো জানা যায়, আলাউদ্দিন বাবু কসবা পৌর এলাকায় কোটি কোটি টাকার জমি, মার্কেট কিনেছেন। তাছাড়া গোপীনাথপুর এলাকায় রয়েছে তার কয়েকটি বিশাল ফল বাগান। রাজধানী ঢাকার গুলশান সহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে শত কোটি টাকার ফ্ল্যাট বাড়ি গাড়ি। দেশের বাইরেও করেছেন অর্থপাাচার। সিঙ্গাপুর সহ কয়েকটি দেশে কিনিছেন বাড়ি। এলাকায় ইদ্রিসের নামে আছে অগনিত জমি। পিএ সোহাগ ও তার ভাই মাদক ব্যবসায়ী লাল মতিনের শত শত কানি জমি, আলিশান বাড়ি। একেকজন কালো টাকার পাহাড় বানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকেন। আইনমন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। সরকার পতনের ফলে চাকরি দেয়ার কথা বলে নেয়া টাকা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি বাদীর আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে চাকরিও দেননি টাকাও ফেরত দেননি। ভুক্তভোগীরা খবর পেয়ে গতকাল রাতে তাকে আটক করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন, পরবর্তীতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়ার কাছে হস্তান্তর করেন। আমরা কাউন্সিলরের জিম্মা থেকে তাকে উদ্ধার করেছি। তার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি লিখিত অভিযোগ থানায় দায়ের হয়েছে। শনিবার দুপুরে কুমিল্লার আমলী আদালাতে প্রেরণ করলে আসামী ইদ্রিস মিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করেন। সংবাদ প্রকাশঃ =০৭-৯-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=