সিটিভি নিউজ।। মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা রিপোর্টার : মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎের বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে । অস্বাভাবিক বিলে বেড়েছে গ্রাহকদের ক্ষোভ।
পল্লী বিদ্যুৎের একাধিক গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক বিল দেয়া হয়েছে। জেলা সদরসহ কমলগঞ্জ রাজনগর ভুক্তভুগীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রায় প্রতিমাসে বিল আসছে দিগুন করে বিশেষ করে জুলাই মাসের থেকে চলতি আগস্ট মাসে বিল এসেছে অস্বাভাবিক পর্যায়ে। এমন অভিযোগে বেশ কিছু গ্রাহকের বিলের কপি প্রতিবেদকের হাতে।
বিল গুলোতে দেখা যায়, মুহন আহমদ নামে এক গ্রাহকের জুলাই মাসের বিল এসেছে যেখানে ১ হাজার ৫শত টাকা সেখানে তিনগুণ বেড়ে আগস্ট মাসে এসেছে ৪ হাজার ২শত টাকা।
আবার অন্য আরেক গ্রাহকের বিলে দেখা গেছে যেখানে জুলাই মাসে এসেছে ৫শত টাকা সেখানে আগস্ট মাসে চারগুণ বেড়ে বিল দাড়িয়েছে ২হাজার ৪শত টাকারও বেশি। এভাবেই অসংখ্য গ্রাহকের বিলে দেখা গেছে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে বিল এসেছে ৩ থেকে ৪ গুন পর্যন্ত।
বিলের এই অসামাঞ্জস্যতার সত্যতা অনেক গ্রাহকের বিলের কপি থেকে পাওয়া গেছে। অভিযোগের সমাধান পেতে প্রতিদিনই ভুক্তভুগি গ্রাহকরা মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ নিয়ে গেলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মকর্তারা বলছেন মিটারের রিডিং অনুযায়ী বিল করা হয়েছে। অথবা মিটারে সমস্যা। তবে গ্রাহকরা বলছেন মিটার ধারে কাছেও দেখা যায় না অথচ রিডাররা রিডিং তুলে অফিসে জমা দিচ্ছেন ।
সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউপির শেফালি বেগম নামের এক গ্রাহক জানান, গত জুলাই মাসে ৮৯২ টাকা বিল আসলেও আগস্ট মাসে দুইগুণ বেড়ে বিল এসেছে প্রায় ২হাজার টাকা। আমি অভিযোগ নিয়ে গেলেও কোন প্রতিকার পাইনি।
একই ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামের ফয়সাল আহমদ নামে এক গ্রাহকের জুন মাসে বিল এসেছিল ১৫শ ৮৭টাকা, জুলাই মাসে বিল আসে ৩৭শ ১৩ টাকা, আগষ্ট মাসে বিল এসেছে ৮হাজার ৩শ ৭৭ টাকা।
ফয়সাল আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিমাসে যেভাবে ভুতুড়ে বিল আসছে সামনে হয়তো ভিটা বিক্রি করে পল্লী বিদ্যুৎের বিল দিতে হবে।
রাজনগরের মহলাল এলাকার পল্লী বিদ্যুৎের এক গ্রাহকের বিল জুন মাসে এসেছিল ৮৫৩ টাকা, জুলাই মাসে এসেছিল তার দ্বিগুণ। বিলের কপিতেও রয়েছে ভুতুড়ে বিলের প্রমাণ।
জানা গেছে অস্বাভাবিক বিলের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ব্যবস্থা নিতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদর উপজেলার পাগুরিয়া গ্রামের তোয়াহিদ মিয়া। অভিযোগে এই গ্রাহক উল্লেখ করেন, তার ঘরে ৪টি বাতি ও ২টি ফ্যান চলে। যাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাস থেকে ব্যবহারের পরিমাণে অতিরিক্ত কল্পনাতীত বিল আসছে। তাতে মে মাসে ৩ হাজার ৭শত, জুনে ৪ হাজার ৮শত ৫৮ এবং জুলাই মাসে ১ হাজার ৬শত ৫৯ টাকা বিল এসেছে। এই অস্বাভাবিক বিলের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জরুরী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন এই গ্রাহক। শুধু তোয়াহিদ মিয়া নয়, এমন অনেক অভিযোগই প্রতিদিন আসছে এই কার্যালয়টিতে।
চলতি মাসের ২৫ আগস্ট সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ে অস্বাভাবিক বিলের অভিযোগ নিয়ে গেলে কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের মিটার পরিক্ষা করে সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিবেশ শান্ত হয়। অভিযোগ উঠে রামচন্দ্র নামে এক বিল রাইডারের বিরুদ্ধে। কতৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে যথাসময়ে রিডিং তুলে না আনার সত্যতা পেলে তাঁকে ২৮ আগস্ট মৌলভীবাজার জোনাল কার্যালয় থেকে বদলি করে শ্রীমঙ্গল সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের জোনাল কার্যালয়ের এজিএম মেহেদি হাসান তালুকদার।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি ম্যানেজার (ডিজিএম) জিয়াউল হক বলেন, রিডিং অনুযায়ী বিল করা হয়েছে। অস্বাভাবিক বিল এসে থাকলে মিটারে সমস্যা থাকতে পারে। যারা অভিযোগ নিয়ে এসেছেন আমরা সমাধান করে দিচ্ছি ।
কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই, ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বলছেন শুধু বিল রিডারদের দোষ দিচ্ছেন অফিসের কর্তারা কিন্তু নিজের দোষ আড়ালে রাখছেন।
মিটার সমস্যা, মিটার নষ্ট, মিটার বদলাতে হবে এসব বলে মিটার বদলাচ্ছেন গ্রাহকদের কিন্তু সমাধান হচ্ছে না কিছু। মিটার বদলানোর নামে করছেন দূর্নীতি। আমরা এসব দূর্নীতিবাজদের চাই না। এদের বিরুদ্ধে যেন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাহলে ভবিষ্যতে এরকম বিড়ম্বনার শিকার হয়তো হতে হবে না এমনটাই দাবী তাদের৷
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার জেলায় পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহক রয়েছেন ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮শত ৬১ জন। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৭৫ হাজারেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন স্বায়ত্বশাষিত এই প্রতিষ্ঠানটির। সংবাদ প্রকাশঃ =০২-৯-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=