সিটিভি নিউজ।। নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি================
কয়েকদিন স্থির থাকার পর এখন দ্রুত কমতে শুরু করেছে কুমিল্লার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর পানি। এই অবস্থায় অনেক বানভাসি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
শনিবার বিকালে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব এলাকা উঁচু সেসব স্থানের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি গেছেন।
তবে জেলায় এখনো পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা নয় লাখের বেশি। জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিক গেলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
জেলার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো সেভাবে পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শিশু খাদ্যের চরম সংকট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলাতেই বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির এখনো কেমন উন্নতি হয়নি। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো বাড়ছে বানের পানি।
নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, লালমাই, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলার পানি নামছে দ্রুত গতিতে। এসব উপজেলার উঁচু এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে খালি হতে শুরু করেছে।
গোমতী নদীর তীরবর্তী উপজেলা বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়ার পাশাপাশি পাশের দেবিদ্বার ও মুরাদনগরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে।
নাঙ্গলকোটের জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও আলিম মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দুই আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ জনের মতো মানুষ রয়েছেন। দুইদিন আগেও এখানে পাঁচ শতাধিক মানুষ ছিলেন। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সাড়ে ৪০০ মানুষ ঘরে ফিরেছেন।
নাঙ্গলকোটের জোড্ডার উত্তর ইউনিয়নের সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রায় খালি হয়ে সেছে। এ উপজেলার অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকেও মানুষজন কমতে শুরু করেছে। এ ছাড়া জেলার লালমাই, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বরুড়া ও লাকসাম এই উপজেলাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বেশি মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
নাঙ্গলকোটের জোড্ডা গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক আনিসুল হক সকালে বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ মানুষের খাবার দিতে হতো। শুক্রবার রাতে ৪৮ জনকে খাবার দিয়েছি। আজ সংখ্যাটা ৩০ এর মধ্যে নেমে এসেছে।”
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বিকালে বলেন, শনিবার পর্যন্ত বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬ হাজার ৭০০ মানুষ রয়েছেন। পানি কমতে শুরু করায় ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ। সে হিসেবে বলা যায়, জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এখনো ৯ লাখের মতো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ ৯০ হাজারের বেশি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, বন্যাদুর্গত নিচু এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন রয়ে গেছেন। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। আরও কয়েকদিন বৃষ্টি না থাকলে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। এরই মধ্যে দ্রুত গতিতে পানি নামতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ এখনো কিছুটা রয়েছে। তবে গোমতীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে।
“তবে যে স্থান দিয়ে বাঁধ ভেঙেছে, সেটি মেরামত করতে আরও সময় লাগবে। কারণ ওই স্থান দিয়ে এখনো লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদীর পানি কমে লোকালয়ের নিচে না আসা পর্যন্ত বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না।”
বানভাসি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার যেসব এলাকায় পানি দ্রুত নামছে সেসব এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগবালাই দ্রুত বাড়ছে। ভয়াবহ এই বন্যায় ডায়রিয়া, ইনফেকশন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত নানা রোগবালাইতে আক্রান্ত মানুষজন প্রতিনিয়ত হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন চিকিৎসার জন্য।
জেলা সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগও বাড়ছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। আমরা আক্রান্তদের কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় মোট ২০৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আমাদের কোনো ওষুধেরই অপ্রতুলতা নেই। সংবাদ প্রকাশঃ =০১-৯-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=
কুমিল্লায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছে বানভাসি মানুষ
আরো সংবাদ পড়ুন