সিটিভি নিউজ।। নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি================
‘চার দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি, আমাদের আরও ত্রাণ, আরও পানি চাই। এক বোতল করে দেওয়া পানিতে কি তৃষ্ণা মেটে?’ এভাবেই আকুতি করছেন কুমিল্লার বন্যাদুর্গত বুড়িচংয়ের মানুষ। সেখানে ত্রাণের নৌকা দেখলেই হুড়মুড়িয়ে ছুটছেন নারী-পুরুষ সবাই। সোমবার দুপুরে গোমতীর বাঁধ ভাঙনকবলিত উপজেলার খাঁড়াতাইয়া গ্রামে গেলে দেখা যায়, একটি দ্বিতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। ইঞ্জিনচালিত নৌকা কিংবা ট্রলারের শব্দ শুনেই একটু খাবার ও পানির আশায় ছুটছেন তারা। এ গ্রামের সব বাড়িতেই পানি। কেউ কেউ গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ গোমতী বাঁধে। কেউবা আবার গ্রামের উঁচু ভবনে। তবে পুরুষদের কেউ কেউ পানিবন্দি হয়েই বাড়িতে রয়ে গেছেন মালপত্র রক্ষায়।
গ্রামের চারদিকে থই থই পানি। কোথাও দেখা মেলেনি মাটির। এত পানি, এত সংকটের মাঝেও পানিবন্দি অনেকেই বাড়িতে রয়ে গেছেন। নৌকার শব্দে ছুটে আসেন রহিম উদ্দিন নামে বাসিন্দা। তিনি বলেন, ঘরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। ত্রাণের নৌকা থেকে খাবারের সঙ্গে চেয়ে নেন মশার কয়েল, দুই বোতল দুধ ও খাবার পানি। তিনি জানালেন, শুকনো খাবার যা পাচ্ছেন, তা দিয়ে কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন। খাবার পানির অনেক সমস্যা।
এ গ্রামের একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। রহিমা আক্তার জানান, তিন সন্তান নিয়ে সেখানে আছেন। তাদের আরও ত্রাণ ও পানি দরকার। ভবনে আশ্রয় নেওয়া লোকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার নেই। এ সময় সেখানে আরও একটি ট্রলার নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন। তিনি দুর্গত লোকজনের জন্য কলাগাছের ভেলায় করে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।
ত্রাণের ট্রলারের শব্দে বুক সমান পানি ভেঙে ছুটে আসেন পাশের বেড়াজাল গ্রামের হারুন অর রশীদ ও তাঁর এক প্রতিবেশী নারী। তারা জানালেন, তারা এদিন (সোমবার) কোনো ত্রাণ পাননি। দুই প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে তারা ঘরে ফেরেন। পাশের নানুয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। সেখানকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী ময়নাল হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে টিউবওয়েল নষ্ট, ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার ও যা পানি পাই চলতে কষ্ট হয়। বাড়িতে ধান-চাল সব ফেলে এসেছি, বাড়ি ফিরে খাব কি? এ চিন্তায় ঘুম আসে না।’ এ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন পাশের বাড়ির বাসিন্দা মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, গোমতীর পানি সব কেড়ে নিয়েছে, ঘর ভেঙে গেছে। একই বাড়ির তিন পরিবারের ১৩ জন এ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।
অফুলা বেগম বলেন, ‘আমরা বেঁচে থেকেও যেন মরে গেছি, এখন শুকনো খাবার যা পাই, তা দিয়ে কোনোরকম চলছি। চার দিন গোসল নাই। এটা জীবন?’ বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুর্গত এলাকারও অভিন্ন চিত্র। আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে পানিবন্দি লোকজনের একই আকুতি ‘আরও ত্রাণ চাই, আরও পানি চাই। শিশুদের খাবার চাই।’ যদিও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে।
গোমতী বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা ষোলনল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন সমকালকে বলেন, এখন ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক ত্রাণ এসেছে, আরও আসবে। সব পানিবন্দি পরিবার ও আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক ত্রাণ যাচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, গোমতীর ভাঙনের কারণে এ উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশঃ ২৮-৮-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন= =আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্টসে লিংকে ক্লিক করুন=