সিটিভি নিউজ, এম আর কামাল, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান : দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না ডিএনডিবাসীর। প্রতি বর্ষাতেই পানি বন্দি হয়ে লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় র্দুভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুই দিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে মানুষ ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানিতে হাবু ডুবু খাচ্ছে। আরসিসি ঢালাই রাস্তায় রীতিমত নৌকা চলছে। বাড়ি-ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। বাদ যায়নি শিক্ষা ও শিল্প-প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে নিজের ভাগ্যের উপরই দোষ চাপাচ্ছেন ভুক্তভোগী অনেকেই। তাদের মতে, তা-ই যদি না হবে তাহলে ২০১৬ সাল থেকেই শুনে আসছি ডিএনডিতে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সাত বছরেও তার সুফল চোখে পড়ছে না। পানিবান্দি মানুষের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জলাবদ্ধতা শুরু হলেই ফটোশেসনে নেমে যায়। আর বড় বড় বুলি ছেড়ে দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু দুর্ভোগ কমে না ডিএনডিবাসীর।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ফতুল্লার লালপুরে জলাবদ্ধতার ভয়াবহ চিত্র পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, দ্রæত পানি নিস্কাশনের জন্য পাম্প চালু রাখার জন্য একটি ট্রান্সফরমার দিবেন।
রবিবার (২ জুন) সরেজমিনে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট এখনো ডুবে আছে। বাড়ি-ঘর ও রান্না ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বাদ যায়নি কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির।কলকারখানার ক্যামিকেলযুক্ত বিষাক্ত পানি ও স্যুয়ারেজের পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে আছে। দুর্গন্ধযুক্ত এই পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। আবার যেখানে বেশি পানি ওই সব এলাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা, ভ্যান ও নৌকা দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। অনেকে নিরুপায় হয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ভোগান্তির মানুষদের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফতুল্লার পাগলার নন্দলাপুর নয়ামাটি, শাহিমহল্লা, মুসলিমপাড়া, শহীদ নগর, দৌলতপুর, মুন্সিবাগ, আদর্শ নগর, নূরবাগ, পিলকুনী, পিলকুনী, ব্যাংক কলোনী, শিয়াচর, লালখা, রেল স্টেশন, ব্যাপারী পাড়া, খোজ পাড়া, লালপুর, পৌষাপুকুর পাড়, টাগার পাড়সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে আছে। আর এতে করে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। তবে সব চাইতে ভয়াবহ অবস্থা লালপুর পৌষাপুকুর এলাকা। এই এলাকার প্রতিটি অলিগলিতেই হাটু সমান বা তারও বেশী পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাগুলো। অনেক বাসা বাড়ীতেও প্রবেশ করেছে পানি। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এই ভোগান্তির শেষ কোথায় তাও যেন জানা নেই পৌষাপুকুর পাড়ের সাধারণ মানুষের। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এ রকম চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন অবহেলিত লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের মানুষ।
পৌষা পুকুরপাড়ের নাঈম জানান, তার পরিবারের একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে রিক্সায় করে ফতুল্লা নিয়ে আসা হয়। তারপর অটোরিক্সায় করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক কস্ট করে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হতে হয়।
জামান নামের অপর এক যুবক জানায়, কমর সমান পানি মাড়িয়ে প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। কেউ জিজ্ঞেস করলে সে মজার ছলে বলেন ইজ্জত ডুবিয়ে ফতুল্লা আসতে হয়।
গৃহবধূ রহিমা জানান, তার রুমে কমর সমান পানি প্রবেশ করেছে। প্রতিটি আসবাবপত্রের নিচে তিনিটি করে ইট দিতে হয়েছে। রান্না করতে হয় পাশের বাসায় গিয়ে।
শামীমা নামের এক গৃহবধূ জানান, তার ঘরের ভিতর ময়লা মলমূত্র প্রবেশ করেছে। ঘরের ভিতর ভেসে বেড়াচ্ছে নানা মল মূত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, ভোরে উঠে কাজে যেতে হয়। কিন্তু পানির কারণে যেতেই পারি না। কোমরের ওপরে উঠে যায় পানি। ভ্যানে করে যেতে হয়। এই ভাড়ার টাকা কোথায় পাই?।
লালপুর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সোহেল খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পানির এই সমস্যা চলছে। জনপ্রতিনিধি যারা আছেন তারা শুধু আশ্বাসই দেন। কেউ পানিতে নেমে যাবে...হ্যান করবো ত্যান করবো, রাস্তা করবো, ড্রেন করবো, এগুলো শুধু শুনেই যাচ্ছি। কিন্তু দিন শেষে সমস্যার সমাধান আর হয় না। এখন যে অবস্থা বাড়িওয়ালাদের বিপদ। ভাড়াটিয়ারা ভাড়া না দিয়েই পালিয়েছেন। একেকজনের দুই-তিনমাসের ভাড়া আটকে রয়েছে। ভাড়া চাইবে এই সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়ে যান। এখন পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাইনি। দুইদিনের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে। গতবার এমপি সাহেব এসে বলেছেন, কাজ হবে। কিন্তু আমরা কোনো ফলাফল পাইনি। জনপ্রতিনিধিরা জানেন কী করবেন। প্রয়োজন হলে বাড়ি ভেঙে রাস্তা করুক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। কেউ যদি বাড়ির সামনে জায়গা দেন তাহলে তার জন্যই ভালো। তবুও একটু সুখে থাকতে চাই।
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম দাবি করেছেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলমান।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম জানান, আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি। তবে এই সমস্যা এককভাবে সমাধান করা যাবে না। আমাদের সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
গত বুধবার (২৯ মে) স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ফতুল্লার লালপুরে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখানে একটা ট্রান্সফরমার ছিল। সেটি খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কারণে এবার প্রচুর পানি জমে গেছে। বাড়িঘরতো রয়েছে, বাথরুমের ময়লা মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে প্রবেশ করেছে। এজন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত। আমাদের ট্রান্সফরমার যেটা লাগবে সেটা আমি আমার নিজের টাকায় কিনে দেবো। আশা করি আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে পানি নামিয়ে ফেলতে পারবো। সংবাদ প্রকাশঃ ০২-৬-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন=