সিটিভি নিউজ।। বিল্লাল হোসেন, মুরাদনগর সংবাদদাতা জানান ==============
প্রেম, দ্রোহ ও সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টিতে এক অনন্য অধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কবিতীর্থ দৌলতপুর। এখানেই নার্গিসের ভালবাসার আগুনের পরশমানিকের ছোঁয়ায় বেজেছিল নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’। ১৯২১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুর গ্রামে আসেন। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান ও ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোন প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর নজরুল জন্মজয়ন্তিতে এখানো ছোটখাট অনুষ্ঠান হলেও এবার উপজেলা নির্বাচনের অজুহাতে কোন প্রকার অনুষ্ঠানই হচ্ছে না। ফলে কবি প্রেমিদের মধ্যে চলছে
কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে ৮ কি: মি: সামনে এগুলেই কবিতীর্থ দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বøকে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙ্কিমালা। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার ভিতরে গেলেই খাঁন বাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বি-তল বাড়ি। এ বাড়িতেই থাকতেন কবি নজরুল। বাড়িটির পলেস্তরা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রকার সংস্কার হচ্ছে না। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক। অযতœ ও অবহেলার কারনে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে তা কেউ বলতে পারে না। এক সময় ওই ঘরে বাসর খাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, স্থানীয় জনগণের মাঝে কবি নজরুলের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু বিশেষ কোন দিবসে নয়, সারাবছরই কবি নজরুলকে নিয়ে চর্চা করতে হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করবে।
কুমিল্লা ৪নং বিচার আদালতের এ.পি.পি এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বি-তল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আমরা কবিতীর্থ দৌলতপুরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে মর্যাদাপূর্ণ স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চাই।
মুরাদনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম সাহেদ আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর গ্রামে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
কবিপতœী নার্গিস বংশের উত্তরসূরী বাবলু আলী খান বলেন, এ বাড়ির পুকুর ঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতল পাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খান বাড়ির ছেলে-মেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে এবং গত বছরই প্রথম বারের মতো মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল স্মরণ উৎসবও সাদামাটাভাবে পালন করে উপজেলা প্রশাসন। সংবাদ প্রকাশঃ ২৬-০৫-২০২৪ ইং সিটিভি নিউজ এর (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like> See More =আরো বিস্তারিত জানতে লিংকে ছবিতে ক্লিক করুন=
কবিতীর্থ দৌলতপুরে ধ্বংসের পথে নজরুল-নার্গিসের স্মৃতি চিহ্ন
আরো সংবাদ পড়ুন