৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির তালিকায় শ্রমিক আছে কাজ নেই,অর্থ লুটপাট

সিটিভি নিউজ।।     মো.আককাস আলী,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে আকালের সময় কর্মহীন মানুষকে সহায়তার জন্য সৃজিত ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি’ এখন আর কোন কাজে আসছেনা। বরং কর্মসূচিটি সংশ্লিষ্টদের টাকা লুটপাটের সহজ পন্থায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর আকালের মাস বলে পরিচিত আশি^ন-কার্তিকের মঙ্গা মোকাবিলা আর ইরিবোরো ধান ওঠার আগে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বেকার কৃষি শ্রমিকদের সহায়তার জন্য এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। এটি এলাকায় ৪০ দিনের কর্মসূচি বলেও পরিচিত। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পে উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ৭শ’ ৯৯ জন শ্রমিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বছরে দুবার ৪০ দিন করে কর্মসূচির কাজ চলে। নির্ধারিত শ্রমিকেরা প্রতিদিন কাজের জন্য প্রত্যেকে ২শ’ টাকা হারে মজুরি পান। প্রতিবছর তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অভিযোগ করা হয়েছে যে, নানা অজুহাতে এই বিশাল অংকের টাকার অর্ধেকের বেশি লুটপাট হয়। আর এজন্য পদে পদে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়। সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত শ্রমিকদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শ্রমিক কাজে যোগ দেন না। কাজ না করলেও তাদের নামে মজুরির টাকা উত্তোলন করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ৫ টি করে দল গঠন করে কাজ করানো হয়। চাঁন্দাশ ইউনিয়নের ১ নং গ্রুপে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে ৩৩ জনকে। এদের মধ্যে ৮ জন কোন দিনই কাজে আসেন না। একজন অশিতিপর বৃদ্ধের নাম রয়েছে এই তালিকায়। তিনিও কাজে আসতে পারেন না। এই ইউনিয়নের ৪ নং গ্রুপে শ্রমিক রয়েছেন ৩১ জন। এদের মধ্যে কাজে আসেন ২৩ জন। বাঁকিদের মধ্যে রয়েছেন ৩ জন চৌকিদারের নাম, তাদের ছেলে ও জামাইয়ের নাম। এখানকার একজন মহিলা মেম্বারের স্বামীর নামও রয়েছে। যারা কাজে আসেন তাদেরও আবার অর্ধেক প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু সকলেই কাজে উপস্থিত থাকেন বলে পুরো মজুরি উত্তোলন করা হয়। মাঝে মাঝে যারা অনুপস্থিত থাকেন তাদেরকে ১শ’ টাকা করে দেয়া হয়। উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোরও একই অবস্থা। অভিযোগ করা হয়েছে যে, একটি ইউনিয়নে কোন শ্রমিকই কাজ করেননি। মজুরির বিশাল অংকের টাকা সপ্তাহান্তে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকদের নিজ নিজ একাউন্টে টাকা জমা হওয়ায় অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু এই একাউন্টেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। টাকা শ্রমিকদের একাউন্টে জমা হলেও অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদে তা নির্দিধায় তুলে নেন দলপতি মেম্বার। প্রতিটি একাউন্টের টাকা চেকের মাধ্যমে উঠানোর নিয়ম থাকলেও এই প্রকল্পের শ্রমিকদের একাউন্ট থেকে টাকা দেয়া হয় পেমেন্ট অর্ডারে। পেমেন্ট ভাউচারে শ্রমিকের যে স্বাক্ষর দেয়া হয় তা ভূয়া। ব্যাংক কর্মকর্তারা একাউন্ট হোল্ডারের নমুনা স্বাক্ষরের সাথে মিলিয়ে না দেখেই পেমেন্ট দেন। ক্যাশ থেকে যিনি টাকা নেন তার স্বাক্ষর রাখার বিধান থাকলেও তা না নিয়ে একজন মেম্বারকে সব শ্রমিকের টাকা একবারেই দেয়া হয়। এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মহাদেবপুর শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ঝামেলা এড়াতে ও শ্রমিকদের হয়রানি কমাতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। উপজেলা পরিষদের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকরা ঠিকমত কাজে হাজিরা দিচ্ছেন কিনা তা তদারকি করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা ছিল। গতবছর তারা অসংখ্য শ্রমিককে গড়হাজির করেন। ফলে তাদের নামে মজুরির টাকা উত্তোলন হয়নি। কিন্তু এবছর তাদের সরিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের একজন করে মেম্বারকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা সেখানে অনিয়মের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। এবার আকালের মৌসুম পার হলেও ৪০ দিনের কর্মসূচির বরাদ্দ আসেনি। প্রতিবারই এমন সময় বরাদ্দ আসে যখন শ্রমিকরা আর বেকার থাকেন না। এখন আমন ধান কাটা আর রবি ফসল আবাদের ভরা মৌসুম। এমনিতেই এসময় কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দেয়। তার উপর ৪০ দিনের কর্মসূচি এলে স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত শ্রমিকেরা কর্মসূচির কাজে যেতে চাননা। কারণ অন্য কাজে তারা কর্মসূচির চেয়ে দুই তিন গুণ বেশি মজুরি পান। জানতে চাইলে বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন জানান, বরাদ্দ এলেই কর্মসূচির কাজ শুরু করা হবে। তালিকায় চৌকিদার, মেম্বারের নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এবার তালিকা সংশোধন করে অর্ধেক শ্রমিক রাখা হতে পারে। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি ২শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রতিদিন ৪শ’ টাকা করা হতে পারে। শ্রমিকদের অনুপস্থিতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যারা অনুপস্থিত থাকেন তাদের মজুরি কেটে রাখা হয়।( ফাইল ফটো )

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৪-১২-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ