সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন, নিহত বেড়ে ৩৩

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।         চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৫ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশসহ আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রোববার (৫ জুন) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ারও নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এদিকে আগুনে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন বলেন, ‘শনিবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এসময়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার ফাইটাররাও হতাহত হয়েছেন। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও ২১ জন।’

চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করতে এসেছে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী একটি দল। রোববার (৫ জুন) সকাল দশটার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন।

আশরাফ উদ্দিন জানান, বিএম কন্টেইনার ডিপোর বর্জ্যে একটি ড্রেনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। সেই ড্রেন একটি খালের সাথে সংযুক্ত যা সাগরে গিয়ে মিশেছে। ডিপোর কোনো বর্জ্য যাতে ড্রেন থেকে খাল হয়ে সাগরে না যায় এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তা করার জন্য আসবে সেনাবাহনীর একটি টিম। সেনাবাহিনীর অফিসারসহ ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য তাদের সরঞ্জামসহ এখানে শীঘ্রই আসবেন।

এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো বাতাসের কারণে আগুন বাড়ছে। এছাড়া ডিপো এলাকায় রয়েছে পানি স্বল্পতা। ফলে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, রাত ১১টার সময় তারা আগুন লাগার খবর পায়। তখন থেকেই তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সবশেষ এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত রোববার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

আহত ও দগ্ধদের কান্না-চিৎকারে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাড়াও নগরীর অন্যান্য হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও (সিএমএইচ) দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। রোববার (৫ জুন) সকালেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণের কারণে আগুন নেভাতে সমস্যা হচ্ছে। ডিপোতে বিপুল পরিমাণ ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ দাহ্য রাসায়নিক রয়েছে।

এদিকে, চমেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ ভর্তি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ অবস্থায় চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আগুন এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে কেঁপে ওঠে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।

বর্তমানে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। সবমিলিয়ে কাজ করছে ২৫টি ইউনিট।

সংবাদ প্রকাশঃ  ০৫-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email