রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয়নি কুমিল্লা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালিন উপাচার্য ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা’র

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।     এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ সংবাদদাতা জানান ====
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য দেবীদ্বারের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা(৭৩)’র জানাযা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়নি। তিনি মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ঢাকা এভার কেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেছেন।
মরহুমের স্ত্রীর ইচ্ছায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা বনানী করাইল টিএনটি বড় মসজিদে প্রথম জানাযা এবং উক্ত জানাযায় অংশ নিতে না পারা উপস্থিত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ^ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষাথী এবং দেবীদ্বারের শুভানুধ্যায়িদের অনুরোধে রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা বনানী গোরস্তানে দ্বিতীয় জানাযা শেষে বনানী গোরস্তানেই দাফন সম্পন্ন করা হয়।
প্রয়াত গোলাম মাওলার ছোট ভাই গোলাম জুবায়ের জানান, ভাবীর অসুস্থ্যতার কারনে তার ইচ্ছেতেই ঢাকায় জানাযা এবং দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ভাই অধ্যাপক গোলাম মাওলা জীবদ্বশায় আমাদের নিকট অছিয়ত করে গিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়িতে বাবার পাশে যেন কবর দেয়া হয়। ওই অছিয়ত কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানাযা সম্পন্নে সমস্ত আয়োজনে ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পারিবাকি সমন্বয়হীনতা ও অনাগ্রহের কারনে তার দির্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে জানাযা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সময় স্বল্পতা এবং পারিবারিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ না করায় ভাতা প্রাপ্ত এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করাও সম্ভব হয়নি।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ বলেন, অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলার মুক্তিযোদ্ধা সনদের বৈধতা নিয়ে অভিযোগ উঠায় তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ কিছুদিন স্থগিত ছিল, পরে তিনি হাইকোর্টে রীট আবেদনে সনদের বৈধতা ফিরে পান এবং নিয়মিত ভাতাও পেয়ে আসছিলেন। ওনার মৃত্যুর খবর আমাদের কিংবা প্রশাসনকে জানানো হয়নি। জানালে আমরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা করতে পারতাম।
প্রবীণ রাজনীতিক ও বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকুর রহমান ফুলমিয়া মাষ্টার জানান, অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন, তার পিতা জাফরগঞ্জ গঙ্গামন্ডল রাজ ইনিষ্টিটিউশনের শিক্ষক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার। আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার প্রয়াত ন্যাপ প্রধান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ’র স্কুল বন্ধু এবং ন্যাপের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। বাম রাজনৈতিক পরিবারিক ধারায় অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াকালীন সময় ১৯৬৩ সাল থেকে এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বাম ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা ১৯৪৮সালে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের নারায়নপুর (ওয়াহেদপুর) গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার জালাল উদ্দিনের বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। পিতা স্কুল শিক্ষক মরহুম আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার। তিনি ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার বড়। দুই বোন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে গৃহিনী। অপর ভাই বিজ্ঞানী ড. গোলাম সারোয়ার জাপান প্রবাসী, স্ত্রী ও ৩ প্রকৌশলী পুত্রকে নিয়ে ওখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আর এক ভাই গোলাম ফেরদৌস ঢাকা এয়ারপোর্টের কাষ্টমস কর্মকর্তা, ছোট ভাই গোলাম জুবায়ের ব্যবসায়ি।
অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ‘নারায়নপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি, আব্দুল্লাহপুর হাজী আমির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এস,এস,সি, ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বায়োকেষ্ট্রিতে অনার্স পাশ করে একই বিশ^ বিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন। পরে তিনি মাষ্টার্স শেষে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনিষ্টিটিউট’র কিছুদিন পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি জাপানের টকিও গুলমাকেন ষ্টেটের নিপ্পন এক্সপ্রিম্যান্টাল রিসার্স ইনিষ্টিটিউট থেকে বায়ো ক্যামিষ্ট্রির উপর পিএইচডি লাভ করেন। জাপান থেকে ফিরে এসে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। একই সময় অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলার স্ত্রী ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আলেয়া মাওলা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনিষ্টিটিউটে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা এক বছর বিএসটিআইএর ডিজি’র দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৬সালে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্টাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয় থেকে পদোন্নতি নিয়ে প্রজেক্ট ডিরেক্টর এবং প্রতিষ্ঠাকালিন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত পদে ২০০৬ সালের ২৬ জুলাই থেকে ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জুলফিকার আলীর নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে অবসরে আসেন।
সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মঞ্জুরুল আলম খান বলেন, অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা আমাদের জুনিয়র হলেও অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। আমাদের শতবর্ষি দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনি নানা সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী অধ্যাপক ড. আলেয়া মাওলা ও এক মাত্র কণ্যা আমেরিকা প্রবাসী নাদিয়া আক্তার রিয়াকে রেখে গেছেন।

সংবাদ প্রকাশঃ  ১-৯-২০২১ইং । (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email