যাকাতুল ফিতর কীভাবে আদায় করবো=====

 সিটিভি নিউজ।।      মুহা. সহিদুল ইসলাম  সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ   শংকুচাইল ডিগ্রি কলেজ====
১. ‘যাকাতুল ফিতর’ বা ‘সাদকাতুল ফিতর’ একটি মৌলিক ইবাদত। হাদিস দ্বারা রাসুল সা. তা আমাদের উপর ফরয করেছেন। ‘ফিতরা’ শব্দটি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ সকাল বেলার স্বাভাবিক খাবার। অন্য অর্থে দিন রাতের স্বাভাবিক খাবার-দাবারকে ফতুর বলা হয়। শরিয়তে ধনীদের উপার্জিত সম্পদে গরীবের অধিকার (হক) রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হায়াত সুস্থ্যতাএবং সুযোগ দিয়েছেন সে যে উপার্জন করছে আল্লার দেয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে, বান্দা সেখান থেকে আল্লাহ তায়ালার অংশ তাঁরই প্রতিনিধি গরীব-দু:খী অসহায় মানুষকে প্রদান করতে হবে। একমাস সিয়াম সাধনার পর ধর্নাঢ্য ব্যক্তিগণ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সে আনুষ্ঠানিক অতিথিয়তায় অংশগ্রহণ করবে সে অনুষ্ঠানে বঞ্চিত এবং সাহায্য প্রার্থীদের অংশ গ্রহণ করাবে এই ব্যয় কেই বলা হয় ‘সাদকাতুল ফিতর’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’, সাধারণ ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ফিতরা’। রাসুল (সা.) মালের শুদ্ধতার ন্যায় সিয়ামের মত ফরয ইবাদনের ত্র“টি বিচ্যুতির কাফফারা স্বরূপ ‘সাদকাতুল ফিতর’ ফরয করেছেন। সালাতে ভুল-ত্র“টির জন্য যেমনি সাহু সেজদার প্রচলন কিংবা হজ্ব পালনে যেমনি ভুল-ভ্রান্তির জন্য ‘দম’ অতিরিক্ত কুরবানি দিতে হয়। তেমনি সিয়ামের দোষ-ত্র“টির পরিত্রানের জন্যও ‘সাদকাতুল ফিতর’ আদায় করতে হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন সাদকাতুল ফিতর দুটি উদ্দেশ্যে প্রদান করতে হয়- ক) ‘তুহরাতুল লিস সায়েসে রোযাদের আমলের ত্র“টি-বিচ্যুতির কারণে খ) ‘তুড়মাতুল লিল মাসাকিন’-মিসকিনদের খাদ্য উপহার প্রদান হিসাবে’- আবু দাউদ-১৬০৯।
রাসুল সা. আরো বলেছেন “অগনুহুম ফি হাজাল ইয়াত্তম”- আজকের দিন গরিবদের ধনী করে দাও। সুতরাং ঈদের একটি দিন কোন আল্লাহর বান্দা যেন গরীব অসহায় অ-স্বচ্ছল না থাকে অন্তত একদিনের জন্য হলেও সকল মানুষ যাতে খাবার-দাবার পোষাক পরিচ্ছেদে ধনী হতে পারে তাই ইসলামে ‘সাদকাতুল ফিতরের’ গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আলার ১৪নং আয়াতে বলেছেন “সেই ব্যক্তি সফলতা অর্জন করেছে যে ব্যক্তি তার দেহ ও সম্পদকে পবিত্র করতে পেরেছে” এ ছাড়া সুরা যারিয়াতের ১৯নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেন – “ ধনীদের সম্পদে মিসকীন এবং বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে”। সুতরাং সম্পদশীলদের পক্ষ হতে ‘সাদকাতুল ফিতর’ গরীব অসহায়কে অনুকম্পা কিংবা দয়া নয় বরং তা গরিবদের অধিকার ও উপহার। ২য় হিজরির রযমান মাসে তা ফরয হয়।
‘সাদকাতুল ফিতর’ রাসুল (সা:) ফরয করেছেন আর আল্লাহ তায়ালা তা অনুমোদন দিয়েছেন যেমন সূরা নিসার ৮০নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-“যে ব্যক্তি রাসুলের অনুসরণ (আনুগত্য) করলো সে যেনো আল্লাহর আনুগত্য করলো”- সুরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-“রাসুল যা নির্দেশ দিয়েছেন তা তোমরা আঁকড়ে ধরো, রাসুল যা নিষেধ করেছেন তা তোমরা বর্জন করো”- সুতরাং রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশেই মানবজাতির জন্য ‘সাদকাতুল ফিতর’ ফরয করেছেন।
২। কী বস্তু দিয়ে ‘সাদকাতুল ফিতর’ আদায় করবোঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন আমরা রাসুল (সাঃ) এর সময় ‘সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম ১) এক ‘সা’ পরিমান খাদ্য দ্রব্য ২) এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর ৩) এক ‘সা’ পরিমাণ যব ৪) এক ‘সা’ পরিমাণ পনির ও ৫) এক ‘সা’ কিসমিস- বোখারী-১৫০৭ মুসলিম-৯৮৫।
‘সা’ আগের দিনের খাদ্য মাপার পাত্র। রাসুল (সাঃ) এর সময় পরিমাণ ছিল ১ ‘সা’= ২ কেজি ৪০ গ্রাম খাদ্য। ইরাকি হিসাবে ১ ‘সা’-২ কেজি ৪০০ গ্রাম। অর্থাৎ মাঝারি ধরনের একজন ব্যক্তির দুই হাতের ৪ আঞ্জলি খাদ্য সামগ্রী।
১. ইমাম আবু হানিফা এর মতে অর্ধ্ব ‘সা’ গম-আটা কিংবা তার মূল্য ফিতরা হিসাবে প্রদান করবে। কেননা আমীরে মুয়াবিয়া সিরিয়া হতে গম আমদানি করে মদিনায় নিয়ে আসতো ফলে খরচ দ্বিগুণ হয়ে যেত বিধায় অর্ধ্ব ‘সায়ের’ কথা তিনি মাসজিদে নব্বীর মিম্বারে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছেন ইমাম আবু হানিফা (র:) এর সিদ্ধান্ত (ফতোয়া) ফিতরা অর্ধ্ব ‘সা’ কিন্তু ইমাম নব্বী অর্ধ্ব ‘সা’ ফিতরা প্রদান সুন্নাতের খেলাপ বলেছেন।
২. ইমাম শাফেয়ী রাঃ বলেছেনঃ ‘তোমরা খাদ্য মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করবেনা’- খাদ্যই প্রদান করতে হবে নগদ অর্থ কিংবা খাদ্য মূল্য নয়।
৩. ইমাম মালেক রাঃ এর মতে রাসুল সাঃ এর যামানায় ‘দিরহাম ও দিনার’ ছিলো- তথাপি তিনি খাদ্য সামগ্রির কথাই বলেছেন সুতরাং খাদ্যমূল্য কিংবা নগদ অর্থ তোমরা ফিতরা দিবে না।
৪. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রা:) বলেছেন তোমরা খাদ্যমূল্য কিংবা নগদ টাকা প্রদান করবে না বরং আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো।
৫. ইমাম নব্বী খাদ্য মূল্য বের করাকে নাজায়েয বলেছেন।
৬. শাইখ আব্দুলাহ বিন বায (রাঃ) বলেছেন মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ নয়।
৭. ওমর ইবনে আবদুল আজিজ খাদ্যের মূল্য দান করেছেন।
৮. হযরত ওমর (রাঃ) নগদ অর্থ ফিতরা হিসাবে দান করেছেন। ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন “এই দিন গরীবদের ধনী করে দাও”- মানে ধনী হওয়ার জন্য শুধু খাবার দাবার নয় জামা-কাপড়, আসবাবপত্র কিংবা যাতায়াত ব্যবস্থা দরকার আর নগদ অর্থ ছাড়া তা হয় না সুতরাং হযরত ওমর নগদ মূল্যই দিয়েছেন।
৩। বাংলাদেশে ফিতরা কত টাকা?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯.৪.২২ শনিবার সকাল ১১টায় সভার সিদ্ধান্তনুযায়ী-
১. গত ও আটা ‘অর্ধ সা’- ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ৭৫/- টাকা
২. যব ১ ‘সা’ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম =২৮০/- টাকা
৩. কিসমিস ১ ‘সা’ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম = ১,৩২০/- টাকা
৪. খেজুর ১ ‘সা’ ৩কেজি ৩০০ গ্রাম = ১,৬৫০/- টাকা
৫. পনির ১ ‘সা’ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম= ২,৩১০/- াকা
সুতরাং পরিবেশ ও লাইফ স্টাইল অনুযায়ি ফিতরা আদায় করতে হবে। সকলের জন্য ফিতরা সমান প্রযোজ্য নয়।

৪। ফিতরা কখন আদায় করবেঃ
১. ইমাম আবু হানিফা (র:) এর মতে- ঈদের দিন ফযর পর্যন্ত।
২. ইমাম শাফেয়ী (রঃ) মতে- রমযানের শেষদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফিতরা আদায় করা যাবে।
৩. হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) মনে করেন- ঈদের দিন সালাতের আগ পর্যন্ত।
৪. ইবনে উমার (রাঃ) মতামত দিয়েছেন- ঈদের ২/১ দিন আগে, যাতে মানুষ বাজার করে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৯-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে/লিংকে ক্লিক করুন=  

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ