মুরাদনগরে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ, কৃষকের মাথায় হাত

সিটিভি নিউজ।।     আবুল কালাম আজাদ,  মুরাদনগর ( কুমিল্লা)  প্রতিনিধিঃ ৭ এপ্রিল/২৩,

মুরাদনগরে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্তে পাতা ঝলসে গেছে, ধানে চিটায় হওয়ায় কৃষক হতাশ। এবছর বোরো মৌসুমে মুরাদনগরে সেচ প্রকল্পে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি। কিন্তু বাধ সেজেছে ব্লাস্ট রোগ। বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট রোগে মহামারি আকার ধারণ করেছে।

বিশেষ করে বিআর-২৮ জাতের ধানে এ রোগের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিনে গরম-রাতে ঠান্ডা, কুয়াশা, বৃষ্টি কারণে মুরাদনগর সেচ প্রকল্পে বোরো ধানে ব্যাপকভাবে নেক ব্লাস্ট ও লিফ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

সোনার ধানে লেগেছে ব্লাস্ট রোগ। মাঠের পর মাঠ, ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় পাকা ধান ক্ষেতে হঠাৎ করে ব্লাস্টের আক্রমণ নিরুপায় করে তুলছে চাষীদের। দেখে মনে হবে পেকে গেছে ক্ষেতের ধান। না, এ ধান পাকেনি। ব্লাস্ট আক্রমনে অকালেই এ রকম সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে এ জমির ধান। ধানের শীষে কোন ধান নেই। আছে চিটা। পরিশ্রমের ফসলের এ হাল দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।

মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে ১৭০৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে।
শুক্রবার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর,  কামাল্লা, করিমপুর,  মোচাগড়া, রগুরামপুর বিলে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু নেক ব্লাস্ট রোগ ও লিফ ব্লাস্ট রোগ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় কৃষকের মুখের হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
যাত্রা পুর  গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া  (৫২)  জানানা, আমি ৪০  শতাংশ  জমিতে ব্রি   ধান ৯৬ করেছি। নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কৃষি অফিস ব্যাবিজল ৪০ গ্রাম ৪ টাংকি পানি দিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ঔষধটি স্প্রে বিকালে পরামর্শ দিয়েছেন। ঔষধ স্প্রে করার পরও কোন প্রতিকার পাইনি। এখন আমার কি হবে? এক মুঠো ধানও পাবো না।

তিনি নাঈম ভূইয়া  জানান, যাত্রাপুর পূর্ব  বিলে প্রায় ২০ একর জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

রগুরামপুর গ্রামের স্বপন সরকার  (৪৪) জানান, এমন কোনো ধানের জমি নেই যেখানে ধানে নেক ব্লাস্ট ও লিফ ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়নি। এ রোগ দিনের পর দিন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এ মৌসুমে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারবে না।

যাত্রা পুর গ্রামের কৃষক ও ব্লক ম্যানেজার মজিবুর রহমান ভূঁইয়া  (৫৫) জানান, ধানে নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এক পর্যায়ে ধানের পাতা ঝলসে যায়। এ ছাড়াও ধান সাদা হয়ে চিটা হয়ে যায়। পাতা ঝলসে যাওয়া ও ধান চিটা হয়ে যাওয়া এ রোগকে কৃষি বিভাগের লোকজনরা লিফ ব্লাস্ট রোগ বলে দাবী করছে।
মুরাদনগর উপজেলার কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাম মিয়া মাঠে ছুটে গিয়ে কৃষকদেরকে উপরোক্ত রোগ হতে ধান রক্ষায় প্রয়োজনীয় (সঠিক) কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু  জানান, ধানের মারাত্মক রোগ ব্লাস্ট দমনে তৎপর মুরাদনগর কৃষি অফিস। বোরো মৌসুমে ধানের একটি মারাত্মক রোগ হল ব্লাস্ট। সাধারণত পারিকুলারিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ দেখা দেয়। এই রোগের আক্রমণ হলে ধানের ফলন শতভাগ বিনষ্ট হতে পারে। সাধারণত ব্রি ধান২৮, ২৯ ও ৫৮ জাতগুলোতে এই রোগের আক্রমণ বেশী হয়। এই রোগ দমনে উপজেলা  কৃষি অফিস নানা বিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে কৃষক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও মাঠ পরিদর্শন। গত পহেলা মার্চ থেকে ব্লাস্ট দমনে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। এই ক্যাম্পেইন ধান কর্তন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তিনি সহ কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার, উপসহকারী কৃষি অফিসার  বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ হয়ে প্রতিদিন প্রত্যেক ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও ও মাঠ পরিদর্শন ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছেন, একই সাথে কৃষককে ধানের জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন ব্রি ধান ২৮, ২৯ এই জাত গুলোতে এই রোগ বেশী দেখা যায় বিধায় বিগত দুই বছর ধরে আমরা এই জাতগুলোকে পরিবর্তন করে ব্রি ধান ৮৮, ৮৯ ও ৯২ জাতের চাষ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এই বছর মুরাদনগর উপজেলায় ১৭০৫৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশঃ ০৭০৪২০২৩ ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

(সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)
(If you think the news is important, please like or share it on Facebook)
আরো পড়ুনঃ