ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় দের কোটি টাকা নিয়ে উধাও মাদ্রাসার শিক্ষক 

সিটিভি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

সিটিভি নিউজ।।     সৌরভ মাহমুদ হারুন, ব্রাহ্মণপাড়া  (কুমিল্লা)  প্রতিনিধি  জানান =====  দানশীল এবং পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষক হেলাল উদ্দিন (৩৫)। ব্যবসার পার্টনার, ভাইকে চাকরি, জমি ক্রয়, গরুর ফার্ম, ফ্ল্যাট বিক্রয়সহ পরিবারের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে এলাকাবাসীর সঙ্গে নতুন কৌশল অবলম্বন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন তিনি। এ নিয়ে এলাকার মানুষদের মাঝে চরম হাহাকার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে । তার ঘরে এখন তালা ঝুলছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। এনিয়ে পাগলের মত ছুটে আসে তার বাড়িতে শত শত প্রতারিত  মানুষ। হেলাল উদ্দিন কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের আনন্দপুর আলেক মেম্বার বাড়ির মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে।

ভুক্তভোগীরা জানান, জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়ন এর আনন্দ পুর গ্রামের মৃত সুরুজ  মিয়ার ছেলে এবং এলাকার মাদ্রাসায় শিক্ষকগতা করতেন । এসুবাদে বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসার শিক্ষক পরিচয় দিয়ে চলতেন। কখনও কখনও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করতেন। গত বুধবার তার থাকার ঘরে তালাবন্ধ করে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানের কথা বলে পালিয়ে যান। তারা জানান, এলাকায় তিনি শিক্ষক হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে মানুষের বিভিন্ন আপদ বিপদে এগিয়ে যেতেন এবং মানুষের আস্থা অর্জন করেন। এটা ছিল তার প্রতারণার একটা কৌশল। ছোট ভাইকে চাকরি দিবেন, গরুর খামার দিবেন, ফ্লাট ব্যবসা করেন,  জমি কিনতে ও ব্যবসা করতে টাকা দেয়ার কথা বলে তিনি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। হেলাল উদ্দিনের প্রতারণার হাত থেকে বাদ যাননি বিধবা সাহেদা খাতুন ও । সাহেদা খাতুন বলেন, আমার একটা ভাঙ্গা ঘর আছে। আমার স্বামী নাই। আমি খুব কষ্ট করে আমার সন্তানদেরকে নিয়ে চলাফেরা করি। হেলাল আমার কাছে থেকে ৩ লাখ টাকা নগদ নিয়েছে।   কিছুদিন পর সে আবার আসে আমার কাছে টাকার জন্য। আমি বলেছি আমার কাছে যা ছিল সব সম্বল আমি আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। আপনাকে দেওয়ার মত আমার আর কিছুই নাই। পরে সে বলে কিস্তি তুলে দেওয়ার জন্য। সে কয়েকটা কিস্তি মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়ে যায়। সে বলেন কিস্তি সে চালাইবে। এ বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। একই এলাকার সালমা আক্তার বলেন, একই কৌশলে আমার কাছ থেকে নগদ ১ লাখ এবং কিস্তির মাধ্যমে ৫ লাখ মোট ৬ লাখ টাকা নিয়েছে। লুৎফা আক্তার জানান, হেলালকে টাকা দিয়ে আমার সংসার এখন ভেঙ্গে যাওয়ার পথে। আমার স্বামীর আমাকে অনেক মারধর করেছে। শুধু মাত্র তাকে টাকা দেওয়া জন্য। তারপরেও আমার স্বামীর প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি যেন আমার টাকাটা ফিরে পাই আপনাদের এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করি। যদি টাকা না পাই তাহলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ নেই। তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি রিস্কা চালক তাজুল ইসলাম। সে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ রিক্সা চালান। তার কাছ থেকেও বিভিন্ন মাধ্যমে তার স্ত্রী সেলিনা বেগমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আব্দুল আউয়ালের স্ত্রীর সাজেদা বলেন, ৫ লাখ ৫০ হাজার, কুলসুম আক্তার ৭ লাখ, মাসুমা আক্তার তিনটি কিস্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অংকে মোট ৫ লাখ, কুহিনুর আক্তার  ৩ লাখ টাকা নিয়েছে হেলাল উদ্দিন।   তানিয়া আক্তার,  নাজমা আক্তার, সুমি,  রাবেয়া আক্তারসহ আরও প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ জনের কাছে থেকে একই কৌশলে বিভিন্ন অংকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হেলাল উদ্দিন। একই এলাকার প্রবাসি স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, আমার কাছ থেকে ভাইকে চাকরি দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১১ লাখ ৫০  হাজার টাকা নিয়েছে। আমি আমার টাকা  নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমাকে পথের ফকির করে দিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, আমার মেয়ের বিয়ের টাকাও সে বিভিন্ন কথা বলে আমার কাছ থেকে নিয়েছে। আমার স্বামী বিদেশে থাকে। স্বামী রোজগার করার সব টাকা তার কাছে।

একই এলাকার আলা উদ্দিনের স্ত্রী মাহাবুবা সুলতানা জানান, আমার কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তবে তার মা ও পরিবার জানে। আমি এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোনো পথ নেই। এখন আমি আপনাদের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফসার এবং ওসি সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সাবেক ইউপি সদস্য আলেক মেম্বারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ভাই আমি কি বলমু। হেলাল আমার কাছে থেকেও ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। এলাকার মধ্যে এমন করে প্রায় ২ শত জনের উপরে হবে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এখন আমি জানতে পারি। তবে সে কোথায় আছে আমরা জানি না। হেলালের বার্তিজা বাহেজিদ আহামেদ বলেন,  আমি এ বিষয়ে জানি না। তবে শুনতাম তিনি মানুষের কাছ থেকে টাকা আনতেন।  কেউ কিছু বললে কাকা বলতেন আমি টাকা আনছি আমার টাকা আমি দিমু তোমাদের মাতা গামনোর প্রয়োজন নাই। এবিষয়ে এর বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। মা মাফিয়া খাতুন বলেন, বাবা রে আমি তেমন কিছুই জানি না। কিছু দিন আগে আমাকে নিয়ে ২ জন মহিলার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা আসছে। বাবা সে আমাদের কারোর কথা শুনে না। এখন সে কোথায় আছে জানি না। ইউপি সদস্য হানিফ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমাকে এবিষয়ে কিছু জানায়নি। আমি আপনার কাছে থেকে শুনলাম।
শশীদল ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রিয়াদ বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক হেলাল টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। তবে আমি বলতে চাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করবো সে যেন বিদেশ না যেতে পারে।  সে যেখানেই থাকোক তাকে আটক করে আইনের আওতায় আনার জন্য। আমি চেয়ারম্যান হিসাবে যতটুকু সহযোগিতা করার করবো।

থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, এধরনের  কোন ঘটনার অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 উপজেলা নির্বাহি অফিসার সোহেল রানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে জানলাম। যদি আমি অভিযোগ পাই অবশ্যই  আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সংবাদ প্রকাশঃ  ২৬-০-২০২২ইং সিটিভি নিউজ এর  (সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে দয়া করে ফেসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন) (If you think the news is important, please share it on Facebook or the like  See More =আরো বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন=  

Print Friendly, PDF & Email